ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শেষদিকে কোরবানির পশু কেনাকাটা

বেশি সরবরাহ ও বৃষ্টির সুযোগ নিয়েছে ক্রেতারা

বেশি সরবরাহ ও বৃষ্টির সুযোগ নিয়েছে ক্রেতারা

ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে প্রতি বছরের মতো এবারো দূরদূরান্ত থেকে কোরবানির পশু নিয়ে রাজধানীর হাটগুলোয় জড় হয়েছিলেন ব্যাপারীরা। একটু বাড়তি দামের আশায় বুক বেঁধেছিলেন তারা। তবে শেষ দিকে পশুর যোগান বেশি হওয়ায় ও বৈরী আবহাওয়ার সুযোগ নিয়েছে রাজধানীবাসী। ক্রেতারা সাধ্যের মধ্যে পশু কিনতে পারলেও বিক্রেতাদের লোকসান গুণতে হয়েছে। গাবতলী, তেজগাঁও, উত্তরা ও শনিরআখড়াসহ বেশ কয়েকটি হাট ঘুরে দেখা গেছে, ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই ব্যাপারীরা পশু হাটে নিয়ে আসতে শুরু করেন। কিন্তু ঈদের দুই দিন আগেও হাটে খুব একটা পশু বিক্রি হয়নি। যখন বিক্রি শুরু হবে, এরমধ্যেই বৃষ্টি। এই বৃষ্টিতে ব্যাপারীদের কপাল পুড়লেও রাজধানীবাসীর কপাল খুলেছে। হাটগুলোর ইজারাদার বলছেন, পশুর বাড়তি দামের আশায় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যাপারীরা পশু নিয়ে আসেন রাজধানীর হাটগুলোতে। তবে গত বছরগুলোয় ব্যাপারীরা লাভ করতে পারলেও এবার কিছুটা লোকসানে আছেন। এর পেছনের কারণ হিসেবে দেখছেন- গো-খাদ্যের দাম চড়া। একইসঙ্গে ব্যাপারীরা আগেভাগেই পশুর দাম বেশি চেয়েছেন। আর ক্রেতারাও পশু কেনার জন্য শেষদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে। মুষলধারে বৃষ্টিতে হাটে কাদা জমে যায়। সব মিলে ব্যাপক লোকসানে ছিলেন পশু বিক্রেতারা। শুক্রবার প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ বছর ঈদুল আজহায় সারা দেশে মোট ১ কোটি ৪১ হাজার ৮১২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। গত বছর সারা দেশে কোরবানিকৃত গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ৯৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬৩টি। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ৯০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪২টি। গত বছরের তুলনায় এবার ৯১ হাজার ৪৯টি গবাদিপশু বেশি কোরবানি হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এ বছর সবচেয়ে বেশি পশু কোরবানি হয়েছে ঢাকা বিভাগে এবং সবচেয়ে কম পশু কোরবানি হয়েছে ময়মনসিংহ বিভাগে। মাঠ পর্যায় থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা বিভাগে ২৫ লাখ ৪৮ হাজার ১৮৪টি, চট্টগ্রাম বিভাগে ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৭৭টি, রাজশাহী বিভাগে ২১ লাখ ৩২ হাজার ৪৬৯টি, খুলনা বিভাগে ৯ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮১টি, বরিশাল বিভাগে ৪ লাখ ৩০ হাজার ৬৭৩টি, সিলেট বিভাগে ৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৯টি, রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৭টি এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ লাখ ৮৫ হাজার ৯০২টি গবাদিপশু কোরবানি হয়েছে। কারবানি হওয়া গবাদিপশুর মধ্যে ৪৫ লাখ ৮১ হাজার ৬০টি গরু, ১ লাখ ৭ হাজার ৮৭৫টি মহিষ, ৪৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৮টি ছাগল, ৫ লাখ ২ হাজার ৩০৭টি ভেড়া এবং ১ হাজার ২৪২টি অন্যান্য পশু। রমধ্যে ঢাকা বিভাগে ১১ লাখ ৭১ হাজার ২১৭টি গরু, ৬ হাজার ৪৮০টি মহিষ, ১২ লাখ ৬৭ হাজার ৫৯৫টি ছাগল, ১ লাখ ২ হাজার ১৬টি ভেড়া ও অন্যান্য ৮৭৬টি পশু কোরবানি দেয়া হয়েছে। চট্টগ্রাম বিভাগে কোরবানি দেয়া হয়েছে ১২ লাখ ২৯ হাজার ৬২টি গরু, ৮৭ হাজার ২১৪টি মহিষ, ৬ লাখ ৪১ হাজার ৯৭৮টি ছাগল, ৯৩ হাজার ১৮১টি ভেড়া ও অন্যান্য ৩৪২টি পশু। রাজশাহী বিভাগে কোরবানি দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ১১ হাজার গরু, ৯ হাজার ৪৬৯টি মহিষ, ১২ লাখ ৩১ হাজার ছাগল ও ১ লাখ ৮১ হাজার ভেড়া। খুলনা বিভাগে কোরবানি দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৭০ হাজার ২১৯টি গরু, ১ হাজার ৪৯২টি মহিষ, ৬ লাখ ৫২ হাজার ৭৩১টি ছাগল, ২৫ হাজার ১২৩টি ভেড়া ও অন্যান্য ১৬টি পশু। বরিশাল বিভাগে কোরবানি দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ৬৩৫টি গরু, ৯৮৯টি মহিষ, ১ লাখ ৫১ হাজার ৫৬৪টি ছাগল ও ১ হাজার ৪৮৫টি ভেড়া। সিলেট বিভাগে কোরবানি দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৯৯ হাজার ১৭২টি গরু, ১ হাজার ১৫৩টি মহিষ, ১ লাখ ৭২ হাজার ৭৪টি ছাগল ও ২১ হাজার ৬৪০টি ভেড়া। রংপুর বিভাগে কোরবানি দেয়া হয়েছে ৫ লাখ ৩৬ হাজার ৭২০টি গরু, ২৬৯টি মহিষ, ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৩৫৭টি ছাগল ও ৬৫ হাজার ৮৩৩টি ভেড়া। ময়মনসিংহ বিভাগে ১ লাখ ৮৭ হাজার ৩৫টি গরু, ৮০৯টি মহিষ, ১ লাখ ৮৬ হাজার ২৯টি ছাগল ও ১২ হাজার ২৯টি ভেড়া কোরবানি দেওয়া হয়েছে। এ বছর সারা দেশে কোরবানিযোগ্য গবাদিপশুর সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২৫ লাখ ৩৬ হাজার ৩৩৩টি। এবার কোরবানির ঈদে পশু কিনে ক্রেতাদের মুখে হাসি ফুটলেও বিক্রেতাদের চোখে ছিল পানি। অনেকে গরু বিক্রি না করে ফিরিয়ে নিয়ে গেছে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ঈদুল আজহা কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ব্যবসায়ীরা গরু নিয়ে ঢাকার হাটগুলোতে আসে। গতবারের চেয়ে এবার গরুর দাম লাগালের মধ্যেই ছিল ক্রেতাদের। ঈদুল আজহায় বিভিন্ন জাতের গরু-ছাগল, ভেড়া ও মহিষসহ কোরবানির পশুতে কানায় কানায় ভর্তি ছিল হাটগুলো। তবে বিগত বছরের তুলনায় এবার হাটে কোরবানির পশু বেশি উঠলে বিক্রি হয়েছে কম। জানা যায়, বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেকেরই দেয়া হয়নি কোরবানি। পশুতে ঠাসা ছিল হাট। হাটে ওঠা গরুগুলো ৮০ হাজার থেকে শুরু করে ১৫ লাখ টাকা পর্যন্ত দাম হাঁকিয়ে ছিল বিক্রেতারা। এছাড়াও দেশি ছাগল ৮ থেকে ২৫ হাজার এবং তোতাপুরি ছাগলের দাম ১ লাখ পর্যন্ত হাঁকিয়েছেন বিক্রেতারা। একদিকে ক্রেতা-বিক্রেতারা পশুর হাটে দর কষাকষিতে ব্যস্ত ছিল, অন্যদিকে হাটের বাইরে ইজারাদারের শৃঙ্খলায় নিয়োজিত কর্মীরা সড়কে যানবাহন চলাচল ও হাটে কোরবানির পশু আনা-নেয়ায় সহযোগিতা করে নিরলসভাবে।

বিক্রি না হওয়ায় ঢাকার কোরবানির পশুর হাটগুলো থেকে ট্রাকে ট্রাকে গরু ফেরত নিয়ে গেছেন ব্যাপারীরা। আগের তুলনায় গত বুধবার গরুর দাম অর্ধেকে নেমে আসে। দিনভর বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যা ও রাতে ক্রেতা বাড়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা। কিন্তু বৃষ্টি কমলেও ক্রেতা না আসায় এবং আশানুরূপ দাম না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়ির পথ ধরেছেন অনেকেই। হঠাৎ গরুর দাম কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে শুধুমাত্র বৃষ্টিকে দোষারোপ করতে নারাজ ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, বৃষ্টি কিছুটা দুর্ভোগ সৃষ্টি করে, কিন্তু গরুর দাম কমে যাওয়ার কারণ বৃষ্টি না। আর্থিক সমস্যার কারণে এবার অনেক মানুষ কোরবানি দিতে পারেননি। যে কারণে সব গরু বিক্রি হয়নি। শান্তিনীড় ফার্ম হাউজের স্বত্বাধীকারী সুজাউদৌলা আকন্দ (আউয়াল) বলেন, গাইবান্ধার বাদিয়াখালি থেকে ২৩টি গরু নিয়ে কাওলার শিয়ালডাঙ্গা হাটে এসেছিলেন। এরমধ্যে মাত্র ৯টি বিক্রি হয়েছে। বাকি ১৪টি ফেরত নিয়ে যান। তিনি আরো বলেন, অবস্থা খুব খারাপ। আমাদের একমাত্র এই কোরবানির ঈদে ভালো বেচাকেনা হয়। কিন্তু এবার গরুগুলো বিক্রি হলো না। গত দুই-তিন বছরের মধ্যে ঢাকা থেকে কোনো কোরবানির পশু ফেরত নিতে হয়নি। এবার মন খারপ করেই বাড়ি ফিরতে হলো। আমার মতো আরো অনেকেই গরু ফেরত নিয়ে গেছেন। উত্তরার দিয়াবাড়ি হাটে মাঝারি সাইজের ৭টি গরু নিয়ে এসেছিলেন মোশাররফ এগ্রোর মালিক মোশাররফ হোসেন। দাম কম থাকায় সবগুলো গরুই ফেরত নিয়ে যান। রাত ৯টার দিকে তিনি গরু নিয়ে বাড়ি রওনা হন। তিনি বলেন, ‘দাম কম থাকায় কোনো গরুই বিক্রি করতে পারিনি। প্রথমদিকে ভালো দাম ছিল। দাম কমার কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুধু বৃষ্টি না, এমনিতেই দাম কমে গেছে। বৃষ্টি শেষ হওয়ার পরও কেউ ভালো দাম বলেনি। শাহজাহানপুর হাটে পাবনা থেকে ১৭টি গরু নিয়ে এসেছিলেন কাজল। বুধবার রাতে তিনি বলেন, ‘আমি চেয়েছিলাম সব গরু বিক্রি করে বাড়ি ফিরতে। তাই কম দামে গরুগুলো ছেড়ে দিয়েছি। লসে ১২টি গরু বিক্রি করতে পারলেও বাকি পাঁচটি গরু নিয়ে ফেরত যেতে হচ্ছে।’ দাম কামার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো কারণই মাথায় ধরছে না। লসেও গরুগুলো বিক্রি করতে পারিনি। খুব টেনশনে আছি।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত