হতাশ আড়তদাররা

চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চামড়া সংগ্রহ কম

প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম সংগ্রহ হয়েছে কোরবানির পশুর চামড়া। আড়তদাররা এজন্য হতাশা প্রকাশ করেছেন। চার লাখ কোরবানির কাঁচা চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি নেয়া হয় ঈদের আগেই। এজন্য নিজস্ব পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হয়। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত কাঁচা চামড়া সংগ্রহ হয়েছে ৩ লাখ ২০ হাজার পিস। যা প্রত্যাশার চেয়ে অন্তত ৮০ হাজার পিস কম। সংগৃহিত চামড়া অনেক কম মনে করেন আড়তদাররা। সংগ্রহ করা কাঁচা চামড়ার মধ্যে আছে গরু মহিষ ২ লাখ ৫৫ হাজার পিস। বাকিগুলো ছাগল ও ভেড়ার। আড়তদাররা জানান, সংগ্রহ করা চামড়া প্রক্রিয়াজাত করার কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকার ট্যানারি মালিকরা আসলে তাদের কাছে বিক্রি করা হবে।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদাররা ব্যবসায় সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, প্রতি বছর কোরবানির ঈদের আগেই কাঁচা চামড়া সংগ্রহের একটা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে থাকি। এবারও ব্যতিক্রম হয়নি। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে প্রত্যাশার চেয়ে কম। তবে এবার কোরবানির দাতার সংখ্যা কমে যাওয়ায় চামড়া কম সংগ্রহের অন্যতম একটি কারণ। এবার আমরা চার লাখ পিস চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছিলাম। কিন্তু সংগ্রহ হয়েছে সব মিলে (গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া) ৩ লাখ ২০ হাজার পিস।

কোরবানির দিন এবং পরদিন সংগ্রহ করা চামড়া নগরের মুরাদপুরের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কামিল মাদ্রাসার মাঠে সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেখানে আছে প্রায় ৩০ হাজার কাঁচা চামড়া। এসব চামড়া সংগ্রহ করেছে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ। এছাড়া আল জামিয়তুল আহলিয়া দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম মাদ্রাসায় (হাটহাজারী মাদ্রাসা) সাড়ে ৫ হাজার চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে।

হাটহাজারী মাদ্রাসার সহকারী পরিচালক মুফতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা প্রতি বছরের মতো এবারও কাঁচা চামড়া সংগ্রহ করেছি। আর সংগৃহিত চামড়া নিয়ম মেনে সংরক্ষণ করা হয়েছে। ক্রেতারা যোগাযোগ করলে চামড়া বিক্রি করব। আমরা ক্রেতাদের যোগাযোগের অপেক্ষায় আছি। আর বিক্রি করা অর্থ মাদ্রাসার উন্নয়ন কাজের পাশাপাশি অসহায় দুস্থ শিক্ষার্থীদের সহায়তায় ব্যয় করা হবে। প্রতি বছর আমরা সংগ্রহ করা চামড়া বিক্রি করে এভাবে ব্যয় করে থাকি।

মৌসুমি চামড়া সংগ্রহকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যার কাছে যত কম মূল্যে চামড়া পাওয়া গেছে তা ক্রয় করা হয়। চামড়ার আকার কিংবা গরুর আকারের ক্ষেত্রে চামড়ার দামে কোনো প্রভাব পড়েনি। বড় গরুর চামড়া কিনতে ৪০০-৭০০ টাকা পর্যন্ত দাম দেয়া হয়। মাঝারি গরুর চামড়া ৩৫০-৪০০ টাকায় কিনে আড়তে সরবরাহ করা হয়। ছাগলের তেমন কোন দাম ছিল না। অনেকেই বিনামূল্যেই সরবরাহ করেছেন। আবার অনেকে নাম মাত্র মূল্য নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামে এবছর ৮ লাখ ৭৪ হাজার পশু কোরবানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে গরু ৫ লাখ ২৬ হাজার ৩২৫টি, মহিষ ৭১ হাজার ৩৩৩টি। জেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডা. মো. আলমগীর বলেন, এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১০ শতাংশ কম কোরবানি হয়েছে বলে ধারণা করছি।

তবে মৌসুমি ব্যবসায়ী আড়তদার সবাই বলছেন, এবার চামড়া সংগ্রহকালে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কিংবা সিন্ডিকেটের বাধার মুখে পড়েননি। এতে অনেকটা নির্বিঘ্নভাবে চামড়া সংগ্রহ করা গেছে। পুলিশ র‌্যাবের সার্বক্ষণিক নজরদারির কারণে কেউ চামড়া ছিনিয়ে নেয়ার জোর খাটানোর মতো কোনো অঘটন ঘটাতে পারেনি।