ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

লংকা নিয়ে ‘লংকাকাণ্ড’

লংকা নিয়ে ‘লংকাকাণ্ড’

লংকা নিয়ে দেশে রীতিমতো ‘লংকাকাণ্ড’ বেঁধেছে। নিত্যদিনের এই পণ্যটির দাম কোনোভাবেই মানুষের ক্রয়সীমার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বাজারে কাঁচামরিচের দামের এতো পার্থক্য অতীতে কখনো হয়েছে কিনা তা অনেকেরই জানা নেই। ৪০০ টাকা কেজি থেকে হাজার টাকায় মরিচ বিক্রির খরবও পাওয়া গেছে। কেন এমন হলো সেটাও বোধগম্য নয়। কেউ বলছেন, বর্ষা মৌসুমে কাঁচামরিচের ক্ষেত পানিতে ডুবে যাওয়ায় মরিচ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। এছাড়া সিন্ডিকেটের কারণেও কাঁচামরিচের দাম বেড়েছে। এ সিন্ডিকেট ভাঙতে সরকার কাঁচামরিচ আমদানির অনুমতি দেয়ায় মরিচের দাম কোথাও কোথাও কমেছে ঠিকই, তবে সেটা ক্রয়সীমার মধ্যে নয়। এক কেজি কাঁচামরিচ যদি গড়ে ৫০০ টাকায় কিনতে হয়, তাহলে মানুষ সংসারের অন্যান্য নিত্যপণ্য কীভাবে কিনবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। অবশেষে কোথায় গিয়ে কাঁচামরিচের দাম পৌঁছাবে তা কেউ বলতে পারছে না। তবে মানুষ কাঁচামরিচ কিনতে গিয়ে যে হিমশিম খাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। নিত্যদিনের রান্নায় কাঁচামরিচের বিকল্প এখনো কোনো কিছুর সন্ধান মানুষ পায়নি। আর ঝালের চাহিদা পূরণে বিকল্প সুযোগ না থাকায় যত দামি হোক কাঁচামরিচের স্বাদ কম-বেশি গ্রহণ করতে মানুষ বাধ্য হচ্ছে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কাঁচামরিচের দাম কমতে শুরু করলেও পটুয়াখালীতে কাঁচামরিচ কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। জেলার বিভিন্ন বাজারে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে কাঁচামরিচের দাম। মাত্র দুদিনের ব্যবধানে খুচরা পর্যায়ে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়। গত দুদিন আগেও যেটি বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকায়। প্রত্যাশা অনুয়ায়ী কাঁচামরিচ কিনতে না পেরে ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। অনেকেই আবার ১০০ গ্রাম ও ২০০ গ্রাম কাঁচামরিচ কিনে বাড়ি ফিরছেন। কাঁচামরিচ এখন যেন সোনার হরিণ। সাধ্যের বাইরে দাম হওয়ায় অনেকেই এখন রান্নায় এর ব্যবহার সীমিত করে দিয়েছেন। অনেকেই শুকনা মরিচ দিয়ে পারিবারিক চাহিদা পূরণ করছেন। পটুয়াখালীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারিতে প্রতি কেজি মরিচ কিনতে খরচ পড়ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা। এক কেজি কাঁচামরিচ বিক্রি করে ১০০ থেকে ১৫০ টাকা লাভ না হলে ব্যবসা করে টিকে থাকা যাবে না। আর বাজারে সরবরাহ কম থাকায় কাঁচামরিচের দাম বেড়ে গেছে বলে জানান আড়তদাররা। এদিকে, কাঁচা মরিচের ঊর্ধ্বমুখী বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার ২৫ জুন থেকে এটি আমদানির অনুমতি দেয়। ঈদের ছুটি শেষে বন্দরগুলো চালু হওয়ায় দেশের বিভিন্ন বন্দর দিয়ে ভারত থেকে দেশে আসছে কাঁচামরিচ। তাতে দাম কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমে ঢাকায় ৪৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গতকাল কয়েকটি কাঁচা বাজারে খোঁজখবর নিয়ে দেখা গেছে প্রতিকেজি কাঁচামরিচের দাম ১২০ টাকা কমেছে। শনিবার কাঁচামরিচ ৬০০ টাকা কেজি বিক্রি হলেও গতকাল ৪৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আবার দেশের কোনো কোনো স্থানে কেজি প্রতি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৫৫০ টাকায়। দাম প্রত্যাশিতভাবে না কমায় অস্বস্তিতে ক্রেতারা। বেশ কিছুদিন ধরেই লাগামহীন থাকা কাঁচামরিচের দাম কিছুটা হলেও কমতে শুরু করা স্বস্তিদায়ক। তবে এ দাম কত সময় থাকবে; তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন ভোক্তারা। তারা জানান, দাম কমলেও কাঁচামরিচ এখনও বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকার ওপরে। কিন্তু বাজার সিন্ডিকেটের কারণেও আবারও বাড়তে পারে দাম। এ দাম আয় অনুযায়ী সাধ্যের বাইরে থাকায় অস্বস্তিতে রয়েছেন ক্রেতারা। মরিচ আমদানি শুরু হওয়ার খবরে দাম কিছুটা কমেছে। তবে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজার কতক্ষণ স্বস্তিতে থাকবে তা বলা মুশকিল।

অনেকে বলছেন, দাম কমলে কী হবে? এখনও কেজি ৫০০ টাকা। বাজারে মরিচ কিনতে এসে অস্বস্তিতে পড়তে হচ্ছে। তবে বিক্রেতারা বলছেন, ঈদের ছুটির পর বিভিন্ন জেলা থেকে মরিচ আসতে শুরু করেছে। এতে দাম কমছে। এ ছাড়া ভারত থেকে মরিচ এলে দাম আরো কমবে। বিক্রেতারা জানান, মূলত বর্ষার কারণে মরিচের সরবরাহ কম। এতে করে দাম বেড়ে যায়। সরকার মরিচ আমদানির অনুমতি দেয়ায় দাম অবশ্যই কমবে।

দিনাজপুরে হিলির বাজারগুলো তো কাঁচামরিচ এখনো বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪০০ টাকায়। প্রতি কেজি কাঁচামরিচ একদিন আগেও বিক্রি হয়েছে ৫০০ টাকার ওপরে। এখন কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। দাম কমার বিষয়ে হিলি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলেন, আজ থেকে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচামরিচ আমদানি হওয়ার খবরে দাম কমতে শুরু করেছে। ব্যবসায়ীরা জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে আবারও আমদানি শুরু হলে দাম পড়ে যাবে। অসাধু ব্যবসায়ীরা তো এখনই দাম কমাতে শুরু করেছেন। খুচরা পর্যায়ে যা বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। ঈদের টানা ৫ দিন ছুটির পর সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে শুরু হয়েছে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ছুটি কাটিয়ে কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিনেই ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ দেশে ঢুকেছে।

গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ৬টি ভারতীয় কাঁচামরিচ ভর্তি ট্রাক ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে দেশে ঢোকে। ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এ এস এম মাকছুদ খান বলেন, মোট ৬টি কাঁচামরিচের ট্রাক দেশে প্রবেশ করেছে। এসব ট্রাকে প্রায় ৭০ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ এসেছে। প্রতি ট্রাকে ১০ থেকে ১২ মেট্রিক টন কাঁচামরিচ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, সন্ধ্যার আগে আরও কয়েকটি কাঁচামরিচের ট্রাক ভারত থেকে দেশে প্রবেশ করতে পারে। আমদানিকৃত কাঁচামরিচ জেলার বাইরে পাঠানোর জন্য বাংলাদেশি ট্রাকে লোড করা হচ্ছে। কাঁচামরিচের আমদানির ফলে স্থানীয় বাজারসহ দেশের বাজারে কাঁচামরিচের দাম কমবে। ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দীন বলেন, সকাল থেকে কয়েকটি কাঁচা মরিচের ট্রাক বন্দরে প্রবেশ করেছে। ধীরে ধীরে আরো আসবে। একটু সময় লাগবে। সাতক্ষীরা কাঁচা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম বাবু বলেন, আমদানি হওয়ায় সাতক্ষীরার বাজারে কাঁচামরিচের দাম অন্তত ৪০০ টাকায় নেমে আসবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত