চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ ও রংপুরে গতকাল বজ্রপাতে সাতজন মারা গেছে। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে চারজন, নওগাঁয় দুইজন এবং রংপুরে একজন মারা যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, চাঁপাইনবাবগঞ্জে তিন উপজেলায় পৃথক বজ্রপাতের ঘটনায় চারজনের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে ও গত রোববার দিবাগত রাতে সদর, গোমস্তাপুর ও ভোলাহাট উপজেলায় বজ্রপাতে তারা মারা যান। নিহতরা হলেন, গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভার প্রসাদপুর হটাৎপাড়া গ্রামের মো. আজিজুল হকের ছেলে শরিফুল ইসলাম, ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন, একই উপজেলার কৃষক ওমর আলী ও সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তেররশিয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. জহরুল। পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকাল সাড়ে ৭টার দিকে গোমস্তাপুর উপজেলার রহনপুর পৌরসভার প্রসাদপুর হটাৎপাড়া গ্রামের মো. আজিজুল হকের ছেলে শরিফুল ইসলাম নিজ বাড়িতে বসে মোবাইল ফোন দেখার সময় বজ্রপাতে হলে ঘটনাস্থলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরিবারের লোকজন গোমস্তাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এদিকে, সকাল সাড়ে ৯টার দিকে ভোলাহাট উপজেলার দলদলী ইউনিয়নের চামা মুশরিভুজা গ্রামের মৃত আইয়ুব আলীর ছেলে মো. আনোয়ার হোসেন ধানের জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান। অন্যদিকে, সকালে একই সময়ে সদর উপজেলার জামতলা এলাকায় ধানের জমিতে কাজ করার সময় বজ্রপাতে ঘটনাস্থলেই মারা যান ওমর আলী নামে এক কৃষক। তিনি ভোলাহাট উপজেলার বাসিন্দা। এর আগে রোববান মধ্যরাতে সদর উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের তেররশিয়া গ্রামে বজ্রপাতে গুরুতর আহত হয় একই এলাকার মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মো. জহরুল। পরে তাকে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করে। রাজশাহী নিয়ে যাওয়ার পথেই রাত আড়াইটার দিকে তার মৃত্যু হয়। চারজন নিহতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রওশন আলী, সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজ্জাদ হোসেন, গোমস্তাপুর থানার ওসি মাহবুবুর রহমান ও ভোলাহাট থানার ওসি সেলিম রেজা। তারা জানান, আইনগত প্রক্রিয়া শেষে মরদেহ দাফনের জন্য পরিবারের নিকট হস্তান্তর করা হয়েছে।
নওগাঁ প্রতিনিধি জানান: নওগাঁয় পৃথক বজ্রপাতে জেলে ও কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। একই ঘটনায় আরেক কৃষক আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার জেলার পোরশা ও ধামইরহাট উপজেলায় পৃথক সময়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। নিহতরা হলেন- পোরশা উপজেলার পশ্চিম দুয়ারপাল গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে জেলে আব্দুল জব্বার (৩৮) ও ধামইরহাট উপজেলার মইশড় গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে কৃষক মোমিনুর রহমান (২২)। পোরশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জহুরুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। সকাল সাড়ে ৬টার দিকে উপজেলার পুনর্ভবা নদীতে বৃষ্টির মধ্যে নৌকা নিয়ে আব্দুল জব্বার জাল দিয়ে মাছ ধরতে যান। এ সময় বৃষ্টির মধ্যে হঠাৎ করে বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলে মারা যান। পরে পরিবারের সদস্যরা জানতে পেরে মরদেহ উদ্ধার করে বাড়ি নিয়ে যায়। অপরদিকে, জেলার ধামইরহাটে বজ্রপাতে মোমিনুর রহমান (২২) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় জমির মালিক জাহেদুর ইসলাম নামে আরেক কৃষক আহত হন। গতকাল দুপুরে উপজেলার কালুপাড়া মাঠে এ বজ্রপাতের ঘটনা ঘটে। নিহত মোমিনুর রহমান উপজেলার মইশড় গ্রামের আজিজুর রহমানের ছেলে। ধামইরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী মোজাম্মেল হক বলেন, ধামইরহাট উপজেলার কালুপাড়া গ্রামের মাঠে দুপুরে কৃষক জাহেদুর ইসলাম জমিতে রোপণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
ওই জমিতে বৃষ্টির মধ্যে কৃষক মোমিনুর রহমান পাওয়ার টিলার দিয়ে হালচাষ করছিলেন। এ সময় বৃষ্টির সঙ্গে হঠাৎ করেই বজ্রপাত হলে ঘটনাস্থলেই মারা যান কৃষক মোমিনুর রহমান। এ সময় আহত হন জমির মালিক জাহেদুল ইসলাম। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হয়। চিকিৎসা নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরেছেন। রংপুর ব্যুরো জানায়: রংপুরের বদরগঞ্জে জমিতে কাজ করতে গিয়ে বজ্রপাতে মাবুদ হক (২৮) নামে এক কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ ঘটনা ঘটে। বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাবিবুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মাবুদ হক উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের গোপালপুর বোয়ালি পাড়া গ্রামের জাহিদুল হকের ছেলে। স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সকালে স্থানীয় জমির মালিক সুকুমারের জমিতে কাজ করতে যান মাবুদ হক। সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছিল। বৃষ্টির সঙ্গে সকালে বজ্রপাত শুরু হয়। এ সময় বজ্রপাতের কবলে পড়ে তিনি ঘটনাস্থলেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পার্শ্ববর্তী জমির কয়েকজন কৃষক দেখে ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করে বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে যায়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত্যু ঘোষণা করে। ওসি হাবিবুর রহমান বলেন, দামোদরপুর ইউনিয়নে বজ্রপাতে একজনের মৃত্যু হয়েছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।
