ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

জাতীয় নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে জাপা-জামায়াত

জাতীয় নির্বাচনে ফ্যাক্টর হবে জাপা-জামায়াত

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গুরুত্ব বাড়ছে জাতীয় পার্টি (জাপা) ও নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতের। দল দুটি রাজনীতিতে বি-টিম হলেও বড় দল বিএনপি রাজনীতির মাঠে অনেকটা নিষ্ক্রীয় থাকায় এ দল দুটির গুরুত্ব বাড়ছে। এরা আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বড় ফ্যাক্টর হতে পারে। রাজনীতিক মহলে এরই মধ্যে জাপা-জামায়াত নিয়ে আলোচনা বেড়েছে।

সূত্র জানায়, ভোট যতো কাছে আসছে, জাপার নেতারা সরকারের সমালোচনা বাড়িয়ে দিয়েছেন। যাতে সব মহলের কাছে জাপা গুরুত্ব বাড়ে এ আশায়। অন্যদিকে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রীয় থাকার পর সম্প্রতি সমাবেশের অনুমতি পেয়ে নতুন করে রাজনীতির মাঠে অলোচনা এসেছে জামায়াত। জানা যায়, ঘরোয়া বিবাদ ছাপিয়ে এই আলোচনায় বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে জাপা চেয়ারম্যান জিএম কাদেরের সাম্প্রতিক বক্তব্য। কারো কারো মতে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে জিএম কাদের বলয় ভাঙার ইঙ্গিত দিচ্ছেন। তবে তার অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ ও তার অনুসারীরা। রাজনীতি-বিশ্লেষকরা অবশ্য মনে করছেন, এমন ভূমিকা ‘সাময়িক’। ভোটকে সামনে রেখে এমন বক্তব্যে। রওশনপন্থি নেতাদের অভিযোগ, জিএম কাদের ঘরোয়া কোন্দল নিরসনের ক্ষেত্রে আন্তরিক নন। রওশন এরশাদের রাজনৈতিক সচিব গোলাম মসীহ বলেন, জিএম কাদের বিএনপির দিকে ঝুঁকে পড়েছেন। তার এ অবস্থান ভালোভাবে নিচ্ছেন না রওশন এরশাদ। এখানেই তাদের মূল দ্বন্দ্ব।

বিএনপির দিকে ঝোঁকার অভিযোগ প্রসঙ্গে জাপার মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, এটা একটা বানানো কথা। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে দল ঐক্যবদ্ধ আছে। এখন মানুষ আর আমাদের কোনো দলের বি টিম মনে করে না। মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, আমরা ৩০০ আসনে নির্বাচন করার চিন্তা করছি। জোটের প্রশ্ন যেটা আছে, সেটা নির্বাচনের আগে দেখা যাবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ বলেন, নির্বাচনের আগেই দুই পক্ষের এক হওয়ার সম্ভাবনা আছে। জাতীয় পার্টি হয়তো এখন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। পরে একটা দেনদরবার হবে। এদিকে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকীর বিভিন্ন কর্মসূচি সফল করার লক্ষ্যে আগামী শনিবার যৌথসভা করবে দলটি। আগামী ১৪ জুলাই জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী। এ উপলক্ষ্যে পার্টি বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। এতে সভাপতিত্ব করবেন পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু। এদিকে জামায়াতে ইসলামী কার সঙ্গে তা নিয়ে রাজনৈতিক সক্রিয় মহলে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ। আওয়ামী লীগ বলছে, জামায়াত বিএনপির সঙ্গী। বিএনপি নেতারা জামায়াত তোষণের অভিযোগ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের দিকে। যদিও খোদ জামায়াতে ইসলামী বলছে, বিএনপি জোট ভেঙে দেওয়ার পর তারা একা পথ চলছে। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জামায়াতকে বিএনপির ‘বি টিম’ বলে অভিহিত করেছেন। যদিও ক্ষমতাসীন দলের চাওয়া, দুই দল যেন আবারও জোটবদ্ধ না হয়। তবে সাংগঠনিক দূরত্ব বজায় রাখলেও বিএনপি চাইছে আন্দোলনে জামায়াত থাকুক। গত ২৫ মে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পর এক দশক পরে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায় জামায়াত। ১০ জুন ঢাকায় তারা সমাবেশও করে। পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রীদের বক্তব্যে জামায়াত বিষয়ে নমনীয়তা দেখা যায়। এতদিন তারা দলটিকে নিষিদ্ধের কথা বললেও জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেন। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনে জামায়াত ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ আসে। দেশটির ঢাকার দূতাবাস জামায়াত নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আসন্ন অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে। এভাবে এক দশক পরে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে দলটির যোগাযোগ আবার শুরু হয়েছে। জামায়াত ঢাকার বাইরে বড় শহরেও সমাবেশ করার পরিকল্পনা করছে। দলটির কুমিল্লা মহানগর সেক্রেটারি এমদাদুল হক মামুন জানিয়েছেন, আগামী ১৫ জুলাই সমাবেশ করতে শিগগির পুলিশের কাছে অনুমতি চাওয়া হবে। যদিও জামায়াত সূত্র জানিয়েছে, সমাবেশের কর্মসূচি পেছাতে পারে। এসব মিলিয়ে প্রকাশ্যে জামায়াতের ফিরে আসা রাজনীতিতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। বিএনপির সন্দেহ, সরকারের সঙ্গে কোনো না কোনো সমঝোতা হয়েছে জামায়াতের। তবে আওয়ামী লীগ তা অস্বীকার করছে। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বাংলাদেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানে জামায়াতে ইসলামী হলো বিএনপির বি-টিম। বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশে ফুলে ফেঁপে বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। ওবায়দুল কাদের বলেন, দবিএনপি জন্মলগ্ন থেকে জামায়াত ইসলামীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছে। ঐতিহ্যগতভাবেই গোলাম আযমের দল জামায়াতে ইসলামী বিএনপির ঘনিষ্ঠ মিত্র। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আযমকে পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশে নিয়ে এসেছিল এবং তার স্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গোলাম আযমকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ২০০১ সালের নির্বাচনের পর বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে একাকার হয়ে সরকার গঠন করে এবং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধূলিস্যাৎ করে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের সময় বেগম খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ নেতা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করেছে। বিএনপির শাসনামলে পাকিস্তানি দর্শনের রাজনীতি বাংলাদেশে জোরদার হয় এবং জামায়াত ইসলামের ক্ষমতায়ন প্রক্রিয়া শুরু হয়। সেইসঙ্গে বিএনপির পৃষ্ঠপোষকতায় জামায়াত ইসলামী বাংলাদেশে ফুলে ফেঁপে বিষবৃক্ষে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের সচেতন মানুষ মাত্রই জানে জামায়াতে ইসলামী হলো বিএনপির বি-টিম। এদিকে জামায়াতে ইসলামী সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে দলটি। জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘জামায়াত কোনো ফ্যাসিস্ট, স্বৈরাচার ও জালেমের সঙ্গে আঁতাত, সমঝোতা বা যোগাযোগ করে কখনো রাজনীতি করে না। করার প্রশ্নই আসে না। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, গত ৩০ জুন কয়েকটি জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বরাত দিয়ে ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ এখন স্পষ্ট’ শিরোনামে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, তাতে বিস্মিত হয়েছে জামায়াত। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যেরও নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম মাছুমের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে দলটি বলেছে, ওবায়দুল কাদের জামায়াতকে বিএনপির বি টিম বলে যে মন্তব্য করেছেন, তা অসত্য। জামায়াতে ইসলামী নিজস্ব রাজনৈতিক কর্মসূচি ও দলীয় আদর্শের ভিত্তিতে মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত