সচিবের একান্ত সাক্ষাৎকার

এসডিজি অর্জনে অঙ্গীকারবদ্ধ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়

কাজী ওয়াছি উদ্দিন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের নবম ব্যাচের কর্মকর্তা। তিনি সহকারী সচিব, সিনিয়র সহকারী কমিশনার, ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং দশ বছর ঢাকা ওয়াসার ম্যাজিস্ট্রেট ও সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব পদে দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ সরকার তাকে পদোন্নতি দিয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব করেছে। নিজের কাজের অগ্রাধিকার-চ্যালেঞ্জসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশের সঙ্গে। সচিবালয়ে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আলোকিত বাংলাদেশের নিজস্ব প্রতিবেদক ফারুক আলম।

প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

গৃ হায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে গণপূর্ত অধিদপ্তর, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ, স্থাপত্য অধিদপ্তর, নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর, খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কক্সবাজার, গাজীপুর উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, সরকারি আবাসন পরিদপ্তর ও অভ্যন্তরীণ নিরীক্ষা পরিদপ্তর রয়েছে। দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে এসব সংস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িত। টানা তিন মেয়াদে সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমে সাফল্য অর্জনে সংস্থাগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

আলোকিত বাংলাদেশ: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সামনে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: এসডিজি বাস্তবায়নে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে এসডিজি লক্ষ্যকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে এবং এর কার্যক্রম মনিটর করার জন্য বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এতে সারা দেশের সিটি করপোরেশনের পাশাপাশি পৌরসভা ও গ্রাম এলাকার উন্নয়ন এবং প্রবৃদ্ধির বিশাল সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। কারণ প্রকৃত টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে।

আলোকিত বাংলাদেশ: গ্রামের মানুষের নগরের সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: বর্তমানে রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় রয়েছে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনি ইশতেহারের অঙ্গীকার ‘আমার গ্রাম আমার শহর’। এরইমধ্যে এই ইশতেহার বাস্তবায়নে গ্রামাঞ্চলে উন্নয়ন করছে সরকার। শহরের সব নাগরিক সুযোগ-সুবিধা ধাপে ধাপে গ্রামে পৌঁছে যাচ্ছে। কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নত যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুতগতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামে আধুনিক শহরের সব সুবিধার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সেজন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় মাস্টারপ্ল্যানিং এবং স্থানীয় প্ল্যানিং করে দেবে। নগরের সুযোগ-সুবিধা গ্রামে বাড়লে রাজধানীতে মানুষের চাপ কমবে।

আলোকিত বাংলাদেশ: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নগরের সুবিধা গ্রামেও যাবে। এক্ষেত্রে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের বড় ভূমিকা রয়েছে, সেজন্য কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার (এসডিজি) ১১ নম্বরে বলা হয়েছে- সবার জন্য পর্যাপ্ত, নিরাপদ ও মূল্যসাশ্রয়ী আবাসন এবং মৌলিক সুবিধায় প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করাসহ বস্তির উন্নয়ন সাধন উল্লেখ রয়েছে। জাতীয় ও আঞ্চলিক উন্নয়ন পরিকল্পনা জোরদার করে শহর, উপশহর ও গ্রামীণ এলাকাগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক, সবুজ ও উন্মুক্ত স্থান এবং নিরাপদ, সাশ্রয়ী, সুলভ ও টেকসই পরিবহন ব্যবস্থা থাকবে। এক্ষেত্রে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসডিজি বাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় অঙ্গীকারবদ্ধ। সেজন্য সারা দেশে যতগুলো জেলা ও উপজেলা রয়েছে, সেগুলোতে জমির ব্যবহার সংক্রান্ত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করছে নগর উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেখানে পৌরসভা থেকে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলে যত্রতত্র ভবন গড়ে তোলার সুযোগ থাকছে না। শহরের মতো পরিকল্পিতভাবে গ্রাম অঞ্চলেও উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রয়েছে। সরকারের চলমান এই উন্নয়নের ধারায় গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত।

আলোকিত বাংলাদেশ: রাজউক, গাজীপুর, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ জলাভূমি ও খেলার মাঠ রক্ষায় কোনো পরিকল্পনা নিয়েছে কি না?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: যেখানে জলাভূমি রয়েছে, সেখানে পরিবেশ আইনে জলাভূমি রাখতে হবে। রাজধানীর বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা ড্যাপে বিভিন্ন এলাকায় জলাভূমি চিহ্নিত করা হয়েছে, চিহ্নিত জায়গায় জলাভূমি রাখতে হবে। তবে জলাভূমি ব্যক্তিমালিকানা হলে সেটি রক্ষায় কিছুটা জটিলতা রয়েছে। কারণ ওই জলাভূমির মালিক তার জমিতে বাড়ি নির্মাণের পরিকল্পনা হয়তো করেছেন। সেই জলাভূমি রক্ষায় প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমির মালিককে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এজন্য জলাভূমি অধিগ্রহণের জন্য রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ- রাজউককে প্রকল্প হাতে নিতে বলেছি। এছাড়াও গাজীপুর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীসহ যেসব উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রয়েছে, সবাইকে পরিকল্পিত উন্নয়ন গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে । আঞ্চলিক মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী খেলার মাঠ, পার্ক ও জলাভূমি রাখতে হবে।

আলোকিত বাংলাদেশ: নির্মাণসামগ্রির দাম বাড়ায় চলমান প্রকল্পে স্থবিরতা কিংবা প্রকল্পের পুনঃদরপত্র দিতে হয়েছে কি না?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক মন্দায় নির্মাণসামগ্রির দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে সরকারি কাজ বাস্তবায়নে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্ট ২০০৬ (পিপিএ) এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুলস-২০০৮ (পিপিআর) অনুযায়ী স্থানীয় ঠিকাদারদের সহযোগিতা করার কোনো সুযোগ নেই।

আলোকিত বাংলাদেশ: টেকসই, নিরাপদ ও সাশ্রয়ী আবাসন এবং পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করতে কী ধরনের কাজ করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: ‘কেউ থাকবে না গৃহহীন’- প্রধানমন্ত্রীর এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় নিয়মিত কাজ করছে। এরইমধ্যে বস্তিবাসীদের জন্য মিরপুরে ৫৩৩টি ফ্ল্যাট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বস্তিতে যে টাকায় তারা ভাড়া থাকত, ঠিক একই টাকা দিয়ে ফ্ল্যাটে বসবাস করছে। টঙ্গীর এরশাদ নগরেও বহুতল ভবন নির্মাণ করা হবে। সেখানেও গৃহহীন পরিবারের সদস্যরা বসবাস করতে পারবে। কেরানীগঞ্জে জমির খোঁজের কাজ চলমান রয়েছে।

আলোকিত বাংলাদেশ: জাতীয় সংসদ ভবনে সংস্কার কাজের অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন?

সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন: সংসদ ভবনে সংস্কার ও সম্প্রসারণ কাজে সমস্যা হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী সংসদের মূল নকশা আনার নির্দেশনা দেন। তার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়া ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচারাল আর্কাইভে থাকা লুই আই কানের আঁকা জাতীয় সংসদ ভবনের মূল নকশার তিন সেট আনে সরকার। এ কারণেই খুব সহজেই নকশা অনুযায়ী গণপূর্ত সংস্কারকাজ করতে পারছে। আর এতে বেগবান হয়েছে সংসদ ভবনের সংস্কারকাজ। মূল নকশা ধরে সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজার অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া উত্তর প্লাজায় স্থায়ীত্ব নষ্ট হয়ে যাওয়া লাল ইট বদলানো হয়েছে। এখন মূল নকশা ধরে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার অবকাঠামোগত সংস্কারকাজ চলছে। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে কমিশন সভায় প্রতিটি প্রকল্পের বিষয়ে আলোচনা করতে হয়।