ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে শেখ হাসিনা

বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে

বিশ্বে বাংলাদেশের মর্যাদা বেড়েছে

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের সক্ষমতা ও মর্যাদা বেড়েছে। আমরা দেশকে এমনভাবে গড়ে তুলছি, যাতে কখনো অন্যের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে যেতে না হয়। আগামী দিনেও দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে, এই কামনা করি।

গতকাল ঢাকা সেনানিবাসের সদর দপ্তরে প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর) ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী রেজিমেন্টের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে গার্ডগুলোর সব সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের পর উন্নয়ন সহযোগীরা এখন আর আগের বছরগুলোর মতো অনেক শর্ত দেয় না। উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বীকৃতি হিসেবে বাংলাদেশ এরইমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আগে যারা মনে করত আমরা শুধু হাত পেতে চলব, এখন তারা আর সেটা মনে করে না। এখন আমরা উন্নয়ন সহযোগীদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিই, হাত পাতি না। তার সুদসহ ফেরত দিই। আগে ভাবনাটা এমন ছিল যে, আমরা ভিক্ষা নিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ একটা বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। আমাদের একটা বদনাম দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি সেটাকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছিলাম। আমি ঘোষণা দিয়েছিলাম নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করব। আজ আমরা সেটা করতে সক্ষম হয়েছি। জাতির পিতা বাংলাদেশকে উন্নত করতে চেয়েছিলেন, তার সেই স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি। ২১ বছর পর সরকার গঠন করার সুযোগ পাই আমরা। আমাদের সশস্ত্র বাহিনীসহ প্রতিটি বাহিনী, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান যাতে উন্নত হয় তার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ আমি হাতে নিয়েছিলাম। আমার লক্ষ্য ছিল, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। কারণ শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী কাজ করে, পুলিশ বাহিনী কাজ করে, তারা যেন অন্যান্য দেশের সঙ্গে সমান তালে চলতে পারে, কোনোভাবেই যেন পিছিয়ে না থাকে, সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা তাদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি সবসময় দেশে ও বিদেশে মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আমাদের প্রতিটি বাহিনী দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার পাশাপাশি সবসময় জনগণের পাশে দাঁড়ায়। তাদের মানবিক সদিচ্ছার কারণে, তারা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে সম্মান পায়। আমি খুব গর্ববোধ করি, যখন রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা তাদের দেশে অবদান রাখার জন্য বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের প্রশংসা করেন।

তিনি বলেন, সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি পিজিআরকে খুব কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের কাজ, দায়িত্ব ও নিষ্ঠা দেখে তিনি মুগ্ধ। রেজিমেন্টের সদস্যরা সর্বদা পেশাদারিত্ব, আনুগত্য, শৃঙ্খলা ও আন্তরিকতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করে। ঝড়-বৃষ্টিসহ সব প্রতিকূল আবহাওয়া মোকাবিলা করে দায়িত্ব পালনে আপনাদের আন্তরিকতা অত্যন্ত প্রশংসিত। এই সুনাম ধরে রাখতে আপনারা সততা ও দেশপ্রেমের সঙ্গে কাজ করবেন- এটাই আমার প্রত্যাশা।

সরকারপ্রধান বলেন, সরকার ঝুঁকিপূর্ণ রক্ষীদের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রথমে পিজিআরের জন্য ঝুঁকি ভাতা চালু করে। এরইমধ্যে সরকার গণভবন সংলগ্ন ব্যারাক তৈরি এবং গার্ডদের পরিবারের জন্য ১৪ তলা ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসন সমস্যার সমাধান করেছে।

জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই পিজিআর গঠন করেন। বঙ্গবন্ধু তার নিজস্ব উদ্যোগে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের জন্য উপযুক্ত সমর শক্তি গড়ে তুলেছিলেন।

সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক উন্নয়নে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা সব বাহিনীকে আন্তর্জাতিক মানের ব্যবস্থায় রূপান্তরিত করেছি। বাহিনীগুলোকে সক্ষম করা হয়েছে- যাতে করে তারা বৈশ্বিক বাহিনীগুলোর সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে পারে, বিশেষ করে বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে- যেখানে তারা অন্যান্য বিশ্ব বাহিনীর সঙ্গে কাজ করে।

তিনি বলেন, সরকার সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রণীত প্রতিরক্ষা নীতি-১৯৭৪ এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ফোর্সেস গোল-২০৩০ বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের দিকে ধাবিত হচ্ছি। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত একটি উন্নত, সমৃদ্ধ ও স্মার্ট দেশ হিসেবে গড়ে তুলব।

অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছালে সেনাপ্রধান জেনারেল এসএম শফিউদ্দিন আহমেদ এবং পিজিআর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ খালেদ কামাল প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানান। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানস্থলের চারপাশে হেঁটে সব অফিসার এবং জুনিয়র কমিশনড অফিসারদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। পরে প্রধানমন্ত্রী পিজিআরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে কেক কাটেন।

তিনি ভিভিআইপি দায়িত্ব পালনের সময় গুরুতর আহত ও নিহতদের পরিবারের সদস্য এবং পিজিআর সদস্যদের মধ্যে উপহার বিতরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিক এবং বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এসএম সালাহউদ্দিন ইসলাম মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সংশ্লিষ্ট সচিব এবং ঊর্ধ্বতন বেসামরিক ও সামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত