বিমানে প্রশ্নপত্র ফাঁস

ডিজিএমসহ ৩০ জনের নামে ডিবির চার্জশিট

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় দায়ের হওয়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ঢাকা অফিসের ডেপুটেশনে থাকা উপমহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ারসহ ৩০ জনের নামে চার্জশিট দাখিল করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি-ডিএমপি)। যার মধ্যে ২৬ জনই বিমান বাংলাদেশের কর্মকর্তা-কর্মচারী। এর মধ্যে মেজর তাইজ ইবনে আনোয়ার নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন কমিটির অন্যতম সদস্য ছিলেন। তিনিসহ ১৯ জন পলাতক। বাকিরা গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন।

গতকাল বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ডিবিপ্রধান অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ। তিনি বলেন- এখন পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ১০ জন বিমান কর্মকর্তা-কর্মচারী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাকিদের ধরতে অভিযান চলছে বলেও জানান গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা। তবে চার্জশিটে বিমানের কাদের নাম রয়েছে সেটা জানাননি পুলিশের এই কর্মকর্তা।

ডিবিপ্রধান আরো জানান, জিএম অ্যাডমিনের রুম থেকে জাহিদ প্রশ্ন নিয়ে পরে তা কপি করে বিমানের এমডির পিয়নের সাহায্যে বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিতেন। মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে এই প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতেন বলে জানান তিনি।

অপরদিকে বিমানবন্দর থানার আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফরিদ উদ্দিন চার্জশিট দাখিলের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গত ২২ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের লালবাগ জোনাল টিমের পরিদর্শক মো. আলমগীর হোসেন পাটোয়ারি চার্জশিটটি জমা দেন। পরে ২ জুলাই সিএমএম আদালতের সাধারণ নিবন্ধন শাখায় এটি জমা হয়। আসামিদের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩১/৩২/৩৩/৩৫ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আসামিদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ২৬ কর্মচারী রয়েছেন। উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- এমটি অপারেটর জাহাঙ্গীর আলম, মো. মাসুদ, মো. মাহবুব আলী, এমএলএসএস মো. জাহিদ হাসান, অফিস সহায়ক আওলাদ হোসেন, এমটি অপারেটর এনামুল হক, এমএলএসএস হারুন অর রশিদ, এমটি অপারেটর মাহফুজুল আলম, এমএলএসএস সমাজু ওরফে সোবাহান, এমএলএসএস জাকির হোসেন ও হেলপার জাবেদ হোসেন। আসামিদের ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলে চার্জশিটে যুক্ত হয়েছে কার্গো হেলপার কামরুজ্জমান, ক্লিনার আমির ও পরীক্ষার্থী আরাফাতের নাম। তবে কামরুজ্জামানের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ না পাওয়ায় এবং অন্য দুজনের সঠিক নাম-ঠিকানা না পাওয়ায় তাদের নাম চার্জশিটে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।

মামলার এজাহার থেকে আরো জানা যায়, ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর বিকাল ৩টায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ১০০ চালকসহ বেশ কয়েকটি পদে নিয়োগের লিখিত পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। পদগুলো হচ্ছে- জুনিয়র টেইলর কাম আপহোলস্টার, প্রি-প্রেস অ্যাসিস্ট্যান্ট, জুনিয়র এমটি মেকানিক, জুনিয়র এয়ারকন মেকানিক, জুনিয়র ওয়েল্ডার জিএসই, জুনিয়র পেইন্টার জিএসই, জুনিয়র মেকানিক (টায়ার) জিএসই, জুনিয়র মেকানিক জিএই (ক্যাজুয়াল), জুনিয়র ইলেকট্রিশিয়ান জিএসই (ক্যাজুয়াল) ও জুনিয়র অপারেটর জিএসই (ক্যাজুয়াল)। পরীক্ষা শুরুর আগেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। তাই পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে তা স্থগিত করা হয়। পরীক্ষা স্থগিতের ঘোষণায় তাৎক্ষণিকভাবে পরীক্ষাকেন্দ্রের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন চাকরিপ্রার্থীরা। বিক্ষোভের কারণে রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে ও আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। অন্যদিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অনিবার্য কারণে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে শুক্রবার (২১ অক্টোবর) অনুষ্ঠিতব্য ১০ পদের পরীক্ষা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরে প্রশ্ন ফাঁসের এ ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় ২০২২ সালের ২৬ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। চার্জশিটে তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেন, আসামিরা অসৎ উদ্দেশে অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, সংগ্রহ, বিতরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় করে আসছিল। তারা সবাই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস, ক্রয়-বিক্রয়, মিডিয়া ও বিতরণকারী চক্রের সদস্য মর্মে প্রমাণিত হয়।