ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে চামড়ার দাম নিয়ে হতাশা

কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পেয়ে মাটিচাপা
চট্টগ্রামে চামড়ার দাম নিয়ে হতাশা

চট্টগ্রামে কোরবানিদাতারা চামড়া বিক্রিতে ন্যায্য দাম পায়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। আবার মৌসুমি ব্যবসায়ীরাও ন্যায্য দাম পায়নি আড়তদারদের কাছ থেকে। দেশের চামড়াশিল্পে কোরবানির পশুর চামড়াই সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও সরকারের পক্ষ থেকে চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সরকার নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী ঢাকায় প্রতি বর্গফুট লবণযুক্ত গরুর চামড়ার মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০-৫৫ টাকা। আর ঢাকার বাইরে ৪৫-৪৮ টাকা। চট্টগ্রামের বিভিন্ন্ স্থান ঘুরে দেখা যায় বহু মৌসুমি ব্যবসায়ী নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কমদামে কিনেছে। তাদের অভিযোগ, তারা ট্যানারি মালিকদের থেকে ন্যায্য মূল্য পাইনি। বর্তমানে সার্বিক প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে বলা যায়, কোরবানির পশু চামড়ার মূল্য অস্বাভাবিকভাবে হ্রাস পাওয়ায় গরিব-মিসকিনের হক নষ্ট হচ্ছে। মৌসুমি বেপারিরা এখন আর বাড়ি বাড়ি গিয়ে চামড়ার জন্য হাঁকডাক দেন না। গরিব-মিসকিনরাও চামড়ার টাকার জন্য কোরবানিদাতাদের দুয়ারে দুয়ারে আসেন না। ক্রেতার অভাবে কোরবানিদাতারা চামড়া দান করে দিচ্ছেন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানায়। আর যা বিক্রি হয়েছে তাও পানির দরে। তবে গত দুই বছর ধরে চামড়ায় নৈরাজ্য কমলেও মিলছে না ন্যায্য দাম। নগরীর জামাল খান, চকবাজার, ২ নম্বর গেট, খুলশী ও মুরাদপুরসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়। আড়তদারদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছর কোরবানির পশুর চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সংগ্রহ হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ১৯ হাজার। যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ২৫ হাজার কম। শুধু কোরবানির পশুর চামড়া কম সংগ্রহ হয়েছে তা নয়, কোরবানিদাতার সংখ্যাও গত বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে কমেছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চট্টগ্রাম মনিটরিং টিমের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, চলতি বছর চট্টগ্রামে ৩ লাখ ১৮ হাজার ৮০০ পিস চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছে। এরমধ্যে গরুর চামড়া ২ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ পিস। মহিষের চামড়া ৬ হাজার ৫০০ এবং ছাগল-ভেড়ার চামড়া ৫৩ হাজার ৮০০ পিস। তিনি বলেন, চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে তিন লাখ। গত বছর (২০২২ সাল) চট্টগ্রামে চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল ৩ লাখ ৪৩ হাজার ২৫০ পিস। এরই মধ্যে গরুর চামড়া ৩ লাখ ১৬ হাজার ৪৫০ ও ছাগলের চামড়া ২৮ হাজার ৮০০ পিস।

বৃহত্তর চট্টগ্রাম কাঁচা চামড়া আড়তদার সমবায় সমিতির সভাপতি মো. মুসলিম উদ্দিন বলেন, এবার চাহিদা অনুযায়ী চামড়া সংগ্রহ করা যায়নি। সাড়ে তিন লাখ চামড়া সংগ্রহের প্রস্তুতি ছিল আড়তদারদের। গরু-ছাগল ও মহিষ মিলে ৩ লাখ ১৯ হাজার পিস চামড়া সংগ্রহ করেছেন আড়তদার ও ব্যবসায়ীরা। তিনি বলেন, কোরবানির পশুর বাড়তি দাম ও মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় চট্টগ্রাম অঞ্চলে কোরবানির সংখ্যা কমেছে। তাই চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস কোরবানির পশুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে ৮ লাখ ৭৯ হাজার ৭১৩টি। অথচ কোরবানি হয়েছে ৮ লাখ ১৭ হাজার ১২৯টি। যা গত বছরের তুলনায় ২৪ হাজার ৪৫০টি কম। এরই মধ্যে গরু ও মহিষ রয়েছে ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫৭টি। ছাগল ও ভেড়া ২ লাখ ৮২ হাজার ৫৭০টি।

প্রান্তিক বেপারি, মৌসুমি ব্যবসায়ী ও আড়তদার জানান, সরকারি ঘোষিত দরে চামড়া বিক্রি হয়নি চট্টগ্রামে। কোরবানিদাতারা ১ থেকে ২০০ টাকায় চামড়া বিক্রি করেছেন। মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ৩ থেকে ৫০০ টাকায় চামড়া কিনেছেন আড়তদাররা। তবে আড়তদার সমিতির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন দাবি করেন, চামড়াভেদে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৮০০ টাকায় কিনেছেন। সূত্র জানায়, এবার কোরবানির পশু ও চামড়া সংগ্রহ নিয়ে বিশাল তফাৎ রয়েছে। কোরবানির পশুর তুলনায় প্রায় ৪ লাখ ৯৮ হাজার ৩২৯ পিস চামড়ার হিসাব মিলছে না। তবে ২০১৮ সালে চার থেকে সাড়ে চার লাখ চামড়া সংগ্রহ করা হয়েছিল। ২০১৯ সালে চামড়ার বাজারে বড় ধস নেমেছিল। বিক্রি করতে না পারায় লক্ষাধিক চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়েছিল মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। সেই থেকে কোরবানির সংখ্যা কমে আসছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী জানান, ক্রেতা না পেয়ে অনেক চামড়া বিক্রি করতে না পেরে পুতে ফেলেছেন কোরবানিদাতারা। এছাড়াও মানুষের অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে অনেকেই ভাগে (অংশীদারিত্ব) কোরবানি দিয়েছেন। চামড়ার স্বাভাবিক মূল্য না পাওয়ায় অনেকে চামড়া বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসায় দান করে দিয়েছেন। দেশের চামড়ার চাহিদার ৮০ শতাংশ সংগ্রহ করা হয় কোরবানির পশু থেকে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত