চট্টগ্রাম-১০ আসনে উপনির্বাচন

আড়াই মাসের এমপি হতে ছয়জনের লড়াই

প্রকাশ : ০৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম-১০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে ডজনখানেক নেতা দৌড়ে ছিলেন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ২৯ জন দলীয় নেতাকর্মী। শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান মহিউদ্দিন বাচ্চু। ৩ জুলাই তাকে দলীয়ভাবে মনোনয়ন দেয়া হয়। গত মঙ্গলবার তিনিসহ মোট ছয়জন মনোনয়নপত্র জমা দেন নির্বাচন অফিসে। আর এই আসন থেকে সব দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মিলে মোট ১৪ মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছিলেন। আটজন ফরম সংগ্রহকারী মনোনয়ন জমা দেননি।

জানা গেছে, একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হতে বাকি আছে সাত মাসের কিছু বেশি সময়। মেয়াদের শেষ তিন মাসে সংসদ নির্বাচনের বিধান রয়েছে। সে হিসাবে চট্টগ্রাম-১০ আসনে দ্বিতীয় দফায় নির্বাচিত এমপি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পাবেন আড়াই মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মাস। এই আড়াই মাসের এমপি হতে আগ্রহী ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা।

এই আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন ডা. আফছারুল আমিন। ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিন লড়াই করে সম্প্রতি মারা যান তিনি। তার মৃত্যুতে চট্টগ্রাম নগরীর ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর থানা এলাকায় সিটি করপোরেশনের ৮টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১০ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। ৩০ জুলাই এই আসনে ভোটগ্রহণ হবে।

আড়াই মাসের এমপি হতে দৌড়ে ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ডজনখানেক নেতা। তাদের মধ্যে আলোচনায় ছিলেন- নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন, সাবেক সিটি প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন, সাবেক মেয়র মনজুর আলম, যুবলীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দ মাহমুদুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু, যুগ্ম আহ্বায়ক ফরিদ মাহমুদ, মরহুম আফছারুল আমীনের ভাই এরশাদুল আমিন, ছেলে ফয়সাল আমিন ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা এমদাদুল ইসলাম। তবে আলোচনায় থাকলেও খুব একটা দৌড়ঝাঁপ ছিল না- আ জ ম নাছির উদ্দিনের। সম্প্রতি সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম মোছলেম উদ্দিনের মৃত্যুর পর চট্টগ্রাম-৮ আসনশূন্য হলে ওই আসনেও মনোনয়নপ্রত্যাশী হিসেবে আলোচনায় ছিলেন তিনি। তবে শেষ পর্যন্ত মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি তিনি।

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনও আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম-০৮ আসনে তৃতীয় দফায় উপনির্বাচনের আগে। শেষ পর্যন্ত তিনিও মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেননি। এদিকে সম্প্রতি দলের পক্ষ থেকে তাকে চট্টগ্রামে ১৪ দলের সমন্বয়ক করা হয়। দায়িত্ব পেয়ে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ১৪ দলের সমাবেশের আয়োজেন করেন তিনি। তবে সবকিছু ছাপিয়ে সেই সমাবেশে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের চেয়ার ছোড়াছুড়িই গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়।

মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় ছিলেন চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সাবেক আহ্বায়ক মহিউদ্দিন বাচ্চু। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে মনোনয়ন চেয়েও পাননি তিনি। যুবলীগের রাজনীতি ছেড়ে এখন আওয়ামী লীগে সক্রিয় তিনি। মনোনয়ন দৌড়ে শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবেই ধরা হয় তাকে। শেষ পর্যন্ত তিনিই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান।

মরহুম সংসদ সদস্য আফছারুল আমিনের ভাই এরশাদুল আমিনও মনোনয়নের দৌড়ে ছিলেন। ১৯৯১ সালের বন্যায় বড় ভাই আফছারুল আমীনের সঙ্গে কাজ করেছেন বলে দাবি তার। তিনি বলেন, আমার বড় ভাইয়ের পাশাপাশি আমিও রাজনীতি ও জনসেবায় সক্রিয় ছিলাম। বড় ভাইয়ের সঙ্গে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের উন্নয়রে কাজ করেছি। তাছাড়া ছাত্র জীবনে আমি এমইএস কলেজে ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি ছিলাম। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ছিলাম।

১৯৯১ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত টানা চারটি নির্বাচনে এই আসনে বিজয়ী হন বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। সেই হিসেবে এই আসনকে বিএনপির ঘাঁটি হিসেবেই দেখেন অনেকে। এদিকে চট্টগ্রাম-১০ (ডবলমুরিং, পাহাড়তলী ও হালিশহর) আসনের উপনির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ছয়জন প্রার্থী। গত মঙ্গলবার মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে পৃথকভাবে এসব মনোনয়ন ফরম জমা দেওয়া হয়। মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন- আওয়ামী লীগের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু, স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আরমান আলী ও মনজুরুল ইসলাম ভুইয়া, জাতীয় পার্টি প্রার্থী মো. সামসুল আলম, তৃণমূল বিএনপি থেকে দীপক কুমার পালিত ও গণমুক্তি জোট থেকে রশিদ মিয়া।

এদিকে বিকেলে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চু। তিনি মনোনয়ন ফরম জমা দিয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, নির্বাচনে আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী। আশা করছি চট্টগ্রাম-১০ আসনটি নেত্রীকে উপহার দেব। এর আগের দিন রাতে দলীয় প্রার্থী হিসেবে মহিউদ্দিন বাচ্চুর নাম ঘোষণা করেন আওয়ামী লীগ। দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সভায় এই আসনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

চট্টগ্রাম-১০ আসনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘এ আসনের উপনির্বাচনে ১৪ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন।