অশ্রুসজল চোখে বিশ্ব ক্রিকেট বিদায় জানালেন তামিম

প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  স্পোর্টস রিপোর্টার

গণমাধ্যমের কাছে আসন্ন বিশ্বকাপে খেলার আগ্রহের কথা জানিয়ে বাংলাদেশের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছিলেন, ‘ভারতে নিজের শেষ বিশ্বকাপ খেলব।’ কিন্তু কোমরের চোট বড্ড ভোগাচ্ছিল ড্যাশিং এ ওপেনারকে। চোটের কারণে আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টে মাঠে নামতে পারেননি তিনি। তবে শতভাগ ফিট না হওয়া সত্ত্বেও আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেছিলেন। ফলাফলটা সুখকর হয়নি। বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচটি হেরেছে টাইগাররা। পুরোপুরি ফিট না হয়েও খেলার কারণে সমালোচনায় হচ্ছিল স্বয়ং বিসিবি সভাপতি কর্তৃক। এরমাঝে হঠাৎ সংবাদ সম্মেলন ডেকে বসলেন তামিম ইকবাল। সিরিজ কাভার করতে চট্টগ্রমে অবস্থান করা সাংবাদিকদের কাছে গত বুধবার মধ্যরাতে একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠান তামিম। যেখানে জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় সংবাদ সম্মেলন করে কিছু বিষয়ে জানাবেন তিনি। পরে সময় পরিবর্তন করে দেড়টায় কথা জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনের স্থান চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনের বাইরে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে ক্রিকেটপ্রেমীদের ভিড়। নির্ধারিত সময়েই সংবাদ সম্মেলনের ভেন্যু চট্টগ্রামের হোটেল টাওয়ার ইনে হাজির হন তামিম। অনেকে ভেবেছিলেন হয়তো ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব ছাড়ার ঘোষণা দেবেন এ ওপেনার। কিন্তু সবার ভাবনাকে মিথ্যে করে দিয়ে আচমকা অবসরের ঘোষণা দিয়ে বসেন তামিম। অশ্রুসজল চোখে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলে দিলেন তিনি। এ সময় আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন এ বাঁহাতি ব্যাটার, কথা বলার সময় কয়েকবার কান্নায় থেমে যান তিনি। মাথা নিচু করে চোখ মুছতে দেখা যায় তাকে। আগের দিন চট্টগ্রাম জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে প্রথম ওয়ানডেতে টাইগারদের নেতৃত্ব দেন তিনি। নিজ শহরের মাঠে সেই ম্যাচটি হয়ে থাকল তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের শেষ। আফগানদের বিপক্ষে হারের পর অনেকেই আঙুল তুলেছেন তামিমের দিকে। তাছাড়া, আগের দিনই একটি সংবাদমাধ্যমে তার ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। শতভাগ ফিট না হয়েও খেলতে চাওয়ার বেজায় খেপেন বিসিবি প্রধান। যা তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি করে। অবশ্য চোট সমস্যা বেশ পুরোনোই তামিমের। গত ডিসেম্বরেও ভারতের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে পারেনি। খেলতে পারেননি আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টও। এই সিরিজের আগে শতভাগ ফিট না থাকার কথা জানান। প্রথম ম্যাচ খেলে অবস্থা বুঝে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত সেই সিদ্ধান্ত এলো অবসরের। তবে সিদ্ধান্তটি হুট করে নেননি বলে দাবি করেন তামিম। অশ্রুসজল চোখে বলেন, ‘ধাফগানিস্তানের বিপক্ষে গতকালকের ম্যাচটিই আমার ক্যারিয়ারের শেষ ম্যাচ। এই মুহূর্ত থেকে আমি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাচ্ছি। সিদ্ধান্তটি হুট করে নেওয়া নয়। অনেক দিন ধরেই আমি ভাবছিলাম। পরিবারের সঙ্গে কথাও বলেছি এটা নিয়ে।’ বিদায় বেলায় তামিম ধন্যবাদ জানান সতীর্থ, কোচ, পরিবার ও সমর্থকদের, ‘ক্যারিয়ারের এই দীর্ঘ পথচলায় আমার সব সতীর্থ, সব কোচ, বিসিবির কর্মকর্তারা, আমার পরিবার ও যারা আমার পাশে ছিলেন, নানাভাবে সহায়তা করেছেন, ভরসা রেখেছেন এবং আমার ভক্ত-সমর্থক, বাংলাদেশ ক্রিকেটের অনুসারী, সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ ২০০৭ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেটে আগমন হয় তামিমের। এরপর ২৪১টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছেন তিনি। ১৪টি সেঞ্চুরি ও ৫৬টি ফিফটিতে ৩৬.৬২ গড়ে করেছেন ৮৩১৩ রান। আর ৭০টি টেস্ট খেলে ৩৮.৮৯ গড়ে করেছেন ৫ হাজার ১৩৪ রান। যেখানে ৩১ ফিফটির সঙ্গে রয়েছে ১০ সেঞ্চুরি। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট অবশ্য আগেই ছেড়েছেন তামিম। গত জুলাইয়ে অবসর নেওয়ার আগে ৭৪টি ম্যাচে করেছেন ১৭০১ রান। দেশের ক্রিকেটারদের মধ্যে এ সংস্করণে একমাত্র সেঞ্চুরিটি করেছেন তিনি। এরসঙ্গে রয়েছে ৭টি ফিফটিও।