ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

চট্টগ্রামে ভেজাল মশলার ছড়াছড়ি

অভিযানেও সুফল মিলছে না
চট্টগ্রামে ভেজাল মশলার ছড়াছড়ি

চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন স্থানে ভেজাল মশলার ছড়াছড়ি। ইটের গুঁড়াসহ নানা ধরনের রাসয়নিক দ্রব্য মিশিয়ে এসব ভেজাল মশলা বাজারে দেদার বিক্রি করছে একশ্রেণির প্রতারক চক্র। নগরীর খাতুনগঞ্জ ও বাকলিয়া এলাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র ভেজাল মশলা তৈরির সাথে জড়িত। র‌্যাব পুলিশের অভিযানে গেল চার মাসে বিপুল ভেজাল মশলা জব্দ করা হয় শুধু বাকলিয়া এলাকা থেকেই। সর্বশেষ খাতুনগঞ্জে পচা, নষ্ট মরিচের সঙ্গে রং মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করায় ‘আলমের ক্রাসিং মিল’ নামে একটি মিলকে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। গত জুন মাসেও মিলটিকে জরিমানা করা হয়েছিল। পাশাপাশি মিল মালিক এমন কাজ পুনরায় না করার শর্তে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে ফের ভেজাল মশলা তৈরিতে জড়িয়ে পড়েন। গত ৪ জুলাই খাতুনগঞ্জের সোনা মিয়া মার্কেট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান। জানা গেছে, পচা, নষ্ট মরিচের সঙ্গে রং মিশিয়ে প্রক্রিয়াজাত করায় খাতুনগঞ্জের ‘আলমের ক্রাসিং মিল’কে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি মূল্য তালিকা না থাকায় বক্সিরহাট কাঁচাবাজারের দুই প্রতিষ্ঠানকে ২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। তাছাড়া মেয়াদোর্ত্তীর্ণ ওষুধ রাখায় নগরের কোতোয়ালি এলাকার দুটি ফার্মেসিকে ১৪ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আনিছুর রহমান বলেন, এই মিলে আরো একবার অভিযান চালানো হয়। গত ২০ জুন একই অপরাধে ওই মিল মালিককে জরিমানা এবং মিলটির কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন মিল মালিক জরিমানা পরিশোধ করে এবং এ ধরনের কাজ পুনরায় না করার লিখিত প্রতিশ্রুতি দেয়ায় মিলটি খুলে দেয়া হয়। কিন্তু তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় অভিযান চালিয়ে ৩ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাশাপাশি নানা অপরাধে আরো চারটি খুচরা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয় বলে জানান তিনি।

বিভিন্ন সময় র‌্যাবের অভিযানে বিপুল ভেজাল মশলা জব্দ করা হয়েছে। গেল ২৪ মে চট্টগ্রাম নগরীতে ভেজাল মশলা তৈরি করে বাজারজাতের অভিযোগে কারখানা মালিকসহ ১০ জনকে আটক করে র‌্যাব। এ সময় ১৫ মণের বেশি ভেজাল মশলা, রং ও রাসায়নিক উপাদান জব্দ করা হয়। গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া থানার চাক্তাই এলাকায় অবস্থিত জসিমের ক্রাসিং মিল নামের একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে অনেককে আটক করা হয়। র‌্যাব-৭-এর সিনিয়র সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আবছার এসব ভেজাল মশলা জব্দ ও ১০ জনকে আটকের বিষয় নিশ্চিত করেছেন। ওই অভিযানে আটককৃতরা হলেন কারখানা মালিক মো. জসিম উদ্দিন (৪০), কর্মচারী শরীফ হোসেন (৪০), মো. আলাউদ্দিন (৩৬), মো. জিলানী (২০), মো. সুজন (১৯), মো. সাইদুল (২০), আবদুল কাদের (৩৮), মো. সজল (৪৩), দেলোয়ার হোসেন (৪৮) ও কামরুল হাসান (২৫)।

র‌্যাব জানায়, অভিযানে কারখানাটিতে তল্লাশি চালিয়ে ভেজাল রং মেশানো প্রায় ৬০০ কেজি হলুদ, মরিচ ও ধনেগুঁড়া এবং ১২ কেজি ভেজাল রং ও রাসায়নিক পদার্থ জব্দ করা হয়। অভিযুক্তরা বিভিন্ন রং ও রাসায়নিক পদার্থ মিশিয়ে ভেজাল মশলা তৈরির পর এগুলো চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজারে পাইকারি বিক্রি করে আসছিলেন। তাদের আটকের পর বাকলিয়া থানার পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

র‌্যাবের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ওই এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। এছাড়াও বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রায় সময় অভিযোগ আসে ভেজাল মশলা তৈরির বিষয়ে। র‌্যাব বিষয়টি যাচাই-বাছাই শেষে অভিযানে নামে। এরপর জব্দ করা হয় ভেজাল পণ্য। আটককৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ শেষে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আমরা চাই এ ধরনের তথ্য লোকজন আমাদেরকে দিক, যাতে ভেজালকারিদের নির্মূল করতে সুবিধা হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত