দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন

তফসিল ঘোষণার ক্ষণ গুনছে ইসি

নভেম্বরে তফসিল ডিসেম্বরে ভোট, রোডম্যাপ অনুযায়ী এগোচ্ছে সবকিছু

প্রকাশ : ০৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

রোডম্যাপ অনুযায়ী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনকে সামনে রেখে সময়মতো প্রস্তুতি শেষ করা হবে। আগামী নভেম্বরে তফসিল ঘোষণা দেয়ার জন্য দিন গণনা শুরু করে দিয়েছে সাংবিধানকি প্রতিষ্ঠানটি।

সূত্র জানায়, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছে রাজনৈতিক উত্তাপ। বিএনপিসহ একাধিক নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল বর্তমান সরকার ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষণায় অনড়। তাদের দাবি, নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে ভোট হতে হবে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভাষ্য- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। এই মতবিরোধ মেটাতে তৎপর কূটনৈতিক মহলও।

সংবিধান অনুসারে, আগামী ২৮ জানুয়ারির মধ্যে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ হিসাব মাথায় রেখে ইসি নভেম্বরের তফসিল দিয়ে ডিসেম্বরের শেষদিকে ভোটগ্রহণ করতে চায়। ভোটের জন্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর বলেন, কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের সব কাজ চলছে। কখন ভোট হবে, কমিশন সভায় তা চূড়ান্ত হবে। তবে রোডম্যাপ অনুযায়ী সব হচ্ছে।

সূত্র জানায়, দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পাঁচ মাস পর, যেজন্য নয় মাস আগে থেকে একগুচ্ছ কাজের সময়সূচি ধরে কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে চলা নির্বাচন কমিশনকে অনেকটা চ্যালেঞ্জের পথ পাড়ি দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সব রাজনৈতিক দলকে নির্বাচনে আনা।

রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা ও কথামালার মধ্যে নির্বাচন আয়োজনে নিজেদের কাজ গুছিয়ে নিতে পিছিয়ে নেই কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন। আইন ও নিয়মকানুন অনুযায়ী এগিয়ে চলার পাশাপাশি ভোটকেন্দ্রের খসড়া তালিকা তৈরি, ব্যালট পেপার, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স ও অন্যান্য নির্বাচনি সামগ্রীর চাহিদা পূরণে কাজ চলছে।

রোডম্যাপ অনুযায়ী সংলাপ, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সংসদীয় আসনের পুনর্বিন্যাস ও আইন সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে। তবে নতুন দলের নিবন্ধনের কাজ গুছিয়ে আনা হলেও তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে পারেনি। এছাড়া পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধন, তফসিল ঘোষণার পর ভোটকেন্দ্রের তালিকা, আসনওয়ারী ভোটার তালিকার সিডি প্রস্তুত ও ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি ঠিক করার কার্যক্রমও চলছে।

জানা যায়, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দায়িত্ব নেয়ার পর কাজী হাবিবুল আউয়াল কমিশন দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে গত সেপ্টেম্বরে ‘রোডম্যাপ’ ঘোষণা করে। সে হিসাবে ৩১ অক্টোবর অথবা ১ নভেম্বর থেকে ভোটের ক্ষণ শুরু হবে।

রোডম্যাপের সময় ধরে সবগুলো কাজই এগোচ্ছে জানিয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, ভোটের আরো সময় রয়েছে। আমরা ইসি ঘোষিত রোডম্যাপের সঠিক ট্র্যাকেই আছি। দুয়েকটি কাজ সম্পন্ন করতে সময়সীমার সামান্য হেরফের হলেও কোনো অসুবিধা নেই। কিছু সময় হাতে রেখেই সব কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। প্রকাশনা সংক্রান্ত প্রস্তুতিমূলক কাজগুলো নিয়ে এরইমধ্যে বিজিপ্রেসের সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইসির অতিরিক্ত সচিব আরো জানান, কিছুটা দেরিতে হলেও আইন সংস্কারের কাজ শেষ হয়েছে (সংসদে আরপিও সংশোধন পাস হয় ৪ জুলাই)। চলতি জুলাই মাসে নতুন রাজনৈতিক দল নিবন্ধন ও পর্যবেক্ষক সংস্থার নিবন্ধনের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে। পদ্ধতিগত কারণে ও প্রতিবেদনের জন্য সময় লাগলেও রোডম্যাপ বাস্তবায়নে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার আগে-পরে ভোটের আনুষঙ্গিক সব কাজ ঠিকভাবে সম্পন্ন করতে প্রস্তুতি রয়েছে।

প্রায় ১২ কোটি ভোটার বিবেচনায় প্রয়োজনীয় ব্যালট পেপারের জন্য কাগজের সরবরাহ, স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স, অন্যান্য সরঞ্জামসামগ্রী জোগানের বিষয় নিয়ে প্রাথমিক পর্যালোচনাও চলছে। ইসির কাছে থাকা স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের বাইরে নতুন করে আরো কতগুলো কেনা লাগবে তাও পর্যালোচনা করা হচ্ছে।

নির্বাচনি মালামালের মধ্যে রয়েছে- ব্যালট পেপারের কাগজ, মনোনয়নপত্র থেকে ফলাফল বিবরণী, ম্যানুয়াল মুদ্রণ, ভোটারের সমান সংখ্যক ব্যালট পেপার মুদ্রণ, স্ট্যাম্প প্যাড, অফিশিয়াল সিল, মার্কিং সিল, ব্রাস সিল, লাল গালা, প্যাকিং বাক্স, অমোচনীয় কালি, বিভিন্ন ফরম, প্যাকেট, সুই-সুতা, খাম, মোমবাতি।

প্রায় ৪২ হাজার ভোটকেন্দ্রের দুই লক্ষাধিক ভোটকক্ষের বিষয়টি বিচেনা করে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনাকাটা করা হবে বলে জানান ইসির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কর্মকর্তারা।

তারা জানান, ভোটের ক্ষণ গণনার সময় ঘনিয়ে আনার সঙ্গে সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের ‘ক্ষণ গণনা থেকে গেজেট প্রকাশ পর্যন্ত অ্যাকশনপ্লান ও বাস্তবায়ন সূচি’ নিয়ে অর্ধশতাধিক কাজের ফর্দ সাজানো হবে।

এদিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ভোটকেন্দ্রের তালিকা তৈরি কাজ শুরু হচ্ছে। এক্ষেত্রে ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা মেনে থানা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা খসড়া তৈরি করবে। থানা ও জেলা, মহানগর কমিটি যাচাই-বাছাই করে সরেজমিন পরিদর্শন করবে।

সবশেষে নির্বাচন কমিশনে প্রতিবেদনসহ প্রস্তাব পাঠানো হবে। কমিশন চূড়ান্ত করে ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে। সবশেষ ১০ কোটি ৪০ লাখেরও বেশি ভোটারের একাদশ সংসদ নির্বাচনে ৪০ হাজারেরও বেশি ভোটকেন্দ্র ছিল, তাতে দুই লক্ষাধিক ভোট কক্ষ ছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে ৯ কোটি ১৯ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৭,৭০৭টি (ভোটকক্ষ ১,৮৯,০৭৮টি)। নবম সংসদ নির্বাচনে ৮ কোটি ১০ লাখ ভোটারের জন্য কেন্দ্র ছিল ৩৫,২৬৩টি (১,৭৭, ২৭৭টি)।