ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বাজেট অধিবেশন শেষ

‘সাহসী’ বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

‘সাহসী’ বক্তব্য রাখলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের অন্যতম পরাশক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে অত্যন্ত ‘সাহসী’ বক্তব্য দিয়েছেন। বিভিন্ন দেশকে সবক দিয়ে সাধারণত এই দেশটি আত্মতৃপ্তি লাভ করে থাকে। কথিত রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র যে দেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয় তাদের ভবিষ্যতের দিনগুলো খুব একটা সুখকর হয় না। যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশের রাজনীতিতে নাক গলানোর চর্চা করে আসছে। বিশেষ করে নির্বাচনি বছরে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। বাংলাদেশের পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনানুষ্ঠানিক তৎপরতা শুরু করতে যাচ্ছে। চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে। বাংলাদেশে অবস্থানকালে তাদের দৃষ্টি থাকবে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে মার্কিন প্রতিনিধি দলের এই সফর পূর্ব নির্ধারিত এবং এই সফরের সঙ্গে জাতীয় নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশে আওয়ামীবিরোধী যেসব রাজনৈতিক দল রয়েছে তারা নির্বাচনের আগে বিদেশিরা আসলে মনে মনে ‘পুলকিত’ হয়। বিশেষ করে রাজপথের দল বিএনপি দেশের বিভিন্ন বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কামনা করে আসছে। তাদের অভিমত বিদেশিদের কাছে ‘নালিশ ’ করলে তারা বাংলাদশের বিরুদ্ধে অবরোধসহ নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বিদেশিদের চাপে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হবে। বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মাথা ঘামানো নতুন কিছু নয় তবে বাংলাদেশের রাজনীতির বাস্তবতা তেমনটি নয়। কেননা একটি দেশের হস্তক্ষেপে অন্য দেশের মসনদ উল্টে যাবে এমনটি ভাবার বাস্তবতা নেই। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করার পর যতগুলো সরকার দেশ পরিচালনা করেছে তারা সব সময়ই মার্কিন তোষণনীতি থেকে বের হয়ে আসতে পারেনি। তবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এ ক্ষেত্রে কার্যত ব্যতিক্রম। বিশেষ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে যেদিন থেকে দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন, সেদিন থেকেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে আসছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনের সমাপনী দিনে বক্তৃতা করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী প্রসঙ্গক্রমে যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে কথা বলেন। বাংলাদেশের যেসব বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র সমালোচনা করে থাকে সেসব দোষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রও মুক্ত নয়। বিশেষ করে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সব সময় মাথা ঘামাচ্ছে। অথচ সেই দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোনো কিছু রাখঢাক না করেই স্পষ্ট ভাষায় মতামত দিয়েছেন।

তিনি বলেছেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে বহু মানুষ নিহত হয়েছে। এমনকি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও নিয়মিত বন্দুকের গুলিতে স্কুলে, শপিং মল এবং রাস্তায় মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ‘তাদের নিজেদের দেশের মানবাধিকার আগে রক্ষা করা উচিত। তারা নিজের দেশের মানুষকে বাঁচাবে কী করে, সেই চিন্তা আগে করুক, সেটাই তাদের করা উচিত। মানবাধিকার নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রাখেন, যে আওয়ামী লীগ সরকার অন্য দেশের নির্যাতিত মানুষকে (রোহিঙ্গা) আশ্রয় দিয়েছে, সেই আওয়ামী লীগ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করবে কেন? কীভাবে করবে? এ কথা বলে কীভাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারা বিশ্বে তো বহু জায়গায় বহু মানুষ খুন হচ্ছে। প্রতিদিনই তো তাদের (আমেরিকা) প্রতিটি স্টেটে (অঙ্গরাজ্য) গুলি করে করে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে। ঘরের মধ্যে গিয়ে পরিবারসহ হত্যা করছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ইউক্রেনে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিয়ে সেখানে হাজার হাজার নারী-পুরুষ শরণার্থীকে কষ্ট দেয়া হচ্ছে। সিরিয়া, ফিলিস্তিনের পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্ন রাখেন, সেসব নিয়ে কারো কোনো কথা নেই কেন? সেখানে কি মানবাধিকার ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না?

এখন অনেকে বাংলাদেশে ‘মানবাধিকারের খোঁজে’ আসে বলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার প্রশ্ন, ২০০১-এর নির্বাচনে যেভাবে হত্যা, নির্যাতন, ধর্ষণ হয়েছিল, তখন সেই মানবাধিকার ফেরিওয়ালারা কোথায় ছিল? তারা কেন চুপ ছিল? তাদের মুখে কেন কথা ছিল না? দেশি-বিদেশি আমি সবার বেলায় বলব।’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘অনেকে আছেন আমাদের সবক দেন। মানবাধিকার শেখান। মানবাধিকারবঞ্চিত তো আমরা। যারা খুনিদের ইনডেমনিটি (দায়মুক্তি) দিয়ে রক্ষা করে, আজ তাদের কথা শুনে অনেক আন্তর্জাতিক সংস্থা, অনেক দেশ দেখি মানবাধিকারের কথা উঠায়। আমরাই তো মানবাধিকারবঞ্চিত ছিলাম। ৩৫ বছর লেগেছে মা-বাবার হত্যার বিচার করতে।’

বাংলাদেশে মানবাধিকার নেই যারা বলেন, তাঁরা কি ২০০১ সাল দেখেননি, ১৫ আগস্ট দেখেননি, এমন প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৫ আগস্ট থেকে আওয়ামী লীগ সরকার আসা পর্যন্ত এ দেশে কী ছিল, তা দেখেননি? তখন তারা কী কারণে চোখেও দেখেননি, কানেও শুনেননি, তা বোধগম্য নয়। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির ওপর নির্যাতন নেমে আসে। সবচেয়ে বেশি নির্যাতন হয় জাতীয় পার্টির ওপর। জাতীয় পার্টি সেটা ভুলে গেছে?

‘জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে মারা বিএনপির আন্দোলন’ এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা অবরোধ দিয়ে রেখেছে। সেই অবরোধ এখনো তোলেনি। অবরোধ দিয়ে মানুষকে হত্যা করা, এই হলো বিএনপির চরিত্র। আজ তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা, মানবাধিকারের কথা শুনতে হয়।

এর আগে গত ৩ জুন রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কারো মুখাপেক্ষী হয়ে নয়, বাংলাদেশ নিজের পায়ে চলবে। আমরা নিজেরা দেশকে গড়ে তুলব। কে আমাদের ভিসা দেবে না, নিষেধাজ্ঞা দেবে তা নিয়ে মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ২০ ঘণ্টা প্লেনে জার্নি করে, আটলান্টিক পার হয়ে ওই আমেরিকায় না গেলে কিচ্ছু আসে যায় না। পৃথিবীতে আরো অনেক মহাসাগর আছে, অনেক মহাদেশ আছে। সেখানেই আমরা যাতায়াত করব। তাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করব। আমাদের অর্থনীতি আরো উন্নত হবে, মজবুত হবে, আরো চাঙা হবে। বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ কোথায়, কী করলে ভালো হবে সেটা জানি। সেটাই মাথায় রেখে দেশকে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদায় নিয়েছি।’

জনগণের প্রতি আস্থা-বিশ্বাস আছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলেন, ‘জনগণ জানে একমাত্র নৌকায় ভোট দিলেই তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়। নৌকায় ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, উন্নয়ন পেয়েছে। নৌকায় ভোট দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ত্যাগ করতে এসেছে, ভোগে বিশ্বাস করে না। সেই কথাটা মাথায় রেখে জনগণের সেবক হিসেবে আমি কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে বলেন, কেবলমাত্র আওয়ামী লীগই পারে দেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন দিতে। ‘আমাদের লক্ষ্য জনগণের ভোটাধিকার রক্ষা এবং জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন। আমরা কাজ করে যাচ্ছি এবং এটি চালিয়ে যাব।’

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকায় দেশে গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত রয়েছে, জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পেয়েছে, দেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। তিনি আরো বলেন, দেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়ে স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার নৌকায় ভোট দেয়ায় মঙ্গা (দুর্ভিক্ষ) দূর হয়েছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪০ শতাংশ থেকে ১৮ শতাংশে নামিয়ে এনেছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্বে কোভিড-১৯ মহামারি এবং ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ না থাকলে এটি আরো কমানো যেত।

তিনি আরো বলেন, মহামারি ও যুদ্ধের পরও সরকার জনগণকে খাদ্য, চিকিৎসাসহ অন্যান্য সেবা দিয়ে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে সক্ষম হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জনের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ইনশাআল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে।

তিনি বলেন, ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি স্মার্ট দেশ- যেখানে থাকবে স্মার্ট মানুষ, স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সমাজের পাশাপাশি স্মার্ট-দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন পূরণ হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত