ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তিন মাসের মেরামতে যাচ্ছে জরাজীর্ণ ‘কালুরঘাট সেতু’

তিন মাসের মেরামতে যাচ্ছে জরাজীর্ণ ‘কালুরঘাট সেতু’

চট্টগ্রামে জরাজীর্ণ কালুরঘাট সেতু মেরামতে বড় ধরনের সংস্কার কাজ শুরুর পরিকল্পনা নিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হচ্ছে সংস্কার কাজ। তবে শীত মৌসুম বা শুষ্ক মৌসুম এড়িয়ে বর্ষা মৌসুমে কাজ শুরু করা নিয়ে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলাসহ পটিয়া উপজেলার আংশিক অংশের লোকজনের যাতায়াতের অন্যতম মাধ্যম এই সেতু। এটি আবহাওয়ার বৈরী সময়ে বন্ধ থাকলে বছরের যে কোনো সময়ের চেয়ে দুর্ভোগ বেশি হবে। প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচলে পড়বেন চরম ঝুঁকিতে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, সেতু মেরামত চলাকালে নদীতে ফেরি চালু থাকবে। এতে লোকজন কিংবা যানবাহন পারাপারে কোনো সমস্যা হবে না। তবে স্থানীয় লোকজন মনে করেন, বর্ষায় সেতু মেরামত করলে ভোগান্তি বাড়বে। পাশাপাশি সেতুটি মেরামতের পরও চলাচলে সুফল নাও মিলতে পারে। এতে বরং সেতুটির ঝুঁকি আরো বাড়বে।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকা-কক্সবাজার রেলপথ পুরোদমে চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ সময় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথের কাজও শেষ হবে। মূলত চট্টগ্রাম-কক্সবাজার বা ঢাকা-কক্সবাজার সরাসরি ট্রেন চলাচল নির্বিঘ্ন করতে কালুরঘাট সেতু মেরামত করা হচ্ছে। এটি মেরামত করার পর সেতুর অবকাঠামো আগের চেয়ে শক্ত হবে। সেতুর দুই পাশে লোকজন যাতে হেঁটে চলাচল করতে পারে সেজন্য ফুটপাতও তৈরি করা হবে। সেতুর অবকাঠামো মজবুত হলে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা অনেকটা দূর হবে। অর্থাৎ লোকজন আগের চেয়ে ঝুঁকিমুক্ত অবস্থায় চলাচল করতে পারবে।

এর আগে কয়েক দফা সংস্কার কাজ পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়। নানা জটিলতায় আগের শিডিউল সময়ে কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। এবার নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সেতু সংস্কার বা মেরামত কাজ শুরু করা হবে। আর সংস্কারের সময় পুরোনো সেতু দিয়ে চলবে না কোনো যানবাহন।

দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার ট্রেনলাইন নির্মাণ কাজ অনেক এগিয়েছে। বলা যায় একেবারে শেষ পর্যায়ে। ৮৫ শতাংশ রেললাইন স্থাপনের কাজ শেষ। আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে যদি আমরা দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন চালু করতে চাই তবে আগামী তিন মাসের মধ্যে কালুরঘাট সেতুর সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে। তাই সেতুটি সংস্কার করা জরুরি।

রেলওয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, কালুরঘাট সেতু সংস্কারকাজের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৫ কোটি টাকা। এরইমধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পরামর্শক দলের সুপারিশ অনুযায়ী সংস্কার করা হচ্ছে। দোহাজারী-কক্সবাজার রুটে ট্রেন চলাচল শুরুর আগে সেতু মজবুত করতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সংস্কারকাজ শেষ করতে লাগতে পারে তিন মাস। এই সময়ে ট্রেন ও যান চলাচল বন্ধ থাকবে। যানবাহন পারাপারের জন্য কর্ণফুলী নদীতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে দুটি ফেরি। বর্তমানে সেতু দিয়ে চট্টগ্রাম-দোহাজারী রেললাইনে ১০ টন ভারি ইঞ্জিন চলাচল করে। সেতু পার হওয়ার সময় গতি থাকে সর্বোচ্চ ১০ কিলোমিটার। তবে কক্সবাজারগামী ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন। ভারি ইঞ্জিন সেতু দিয়ে চললে বর্তমান দুর্বল অবকাঠামো আরো দুর্বল হতে পারে। তাই ভারি ইঞ্জিন এবং বেশি বগির ট্রেন চালানোর আগে সেতুটি মেরামত করে অবকাঠামো মজবুত করতে হবে। অন্য কোনো বিকল্প নেই।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সর্বশেষ এই সেতুতে ২০০৪ সালে বড় ধরনের মেরামত কাজ পরিচালনা করা হয়। ছয় মাসের সংস্কার কাজে রেলওয়ের ব্যয় হয় ১০ কোটি টাকা। আট বছরের মাথায় আবার সেতুটির অবকাঠামো দুর্বল হয়ে পড়ে। এরপর ২০১২ সালে আরেক দফা সংস্কার করা হয়েছিল। এবার মেরামত করা হচ্ছে কক্সবাজারগামী বেশি বগি ও ভারি ইঞ্জিনের ট্রেন চলাচলকে সামনে রেখেই। কক্সবাজারগামী ট্রেনের ইঞ্জিনের ওজন হবে ১২-১৫ টন। তাই বড় ইঞ্জিনের ভর সহ্য করার মতো করে এবার মেরামত করা হবে। তবে ২০০৪ ও ২০১২ সালে দুই দফায় সেতুটি সংস্কার করলেও কিছুদিন পর অবকাঠামো আবার দুর্বল হয়ে পড়েছিল। তাই এবারো বড় ধরনের সংস্কার কাজ পরিচালনার পর কত দিন অবকাঠামো মজবুত থাকবে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাবে।

সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্র জানায়, কালুরঘাট সেতু সংস্কারকাজ শুরু হলে ফেরি সার্ভিস চালু হবে। দুই মাস আগেই ফেরি স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়। বর্তমানে দুটি ফেরি প্রস্তুত আছে। ফেরিতে কোনো ধরনের যানবাহন থেকে কত টাকা ভাড়া রাখা হবে তা নিয়ে কাজ চলছে। সহসা ফেরিতে চলাচলে টোল হার নির্ধারণ হবে।

কালুরঘাট পূর্বপাড়ে চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার অবস্থান। এই উপজেলার লোকজনের কর্ণফুলী নদী পার হয়ে শহরে প্রবেশ করার একমাত্র মাধ্যমে কালুরঘাট সেতু। সেতুটির স্থলে একটি নতুন সেতু স্থাপনের দাবি দীর্ঘদিনের। এই দাবিতে ইতিপূর্বে আন্দোলনও গড়ে উঠেছিল।

এ ব্যাপারে বোয়ালখালী এলাকার বাসিন্দা আবুল কালাম বলেন, আমরা সেতুর মেরামত নয়, নতুন সেতু চাই। মেরামত অনেকবার হয়েছে। তাতে কোনো কাজ হয়নি। আমাদের দরকার চার লেনের একটি নতুন সেতু। এই সেতু না হওয়া পর্যন্ত বোয়ালখালীবাসীর দুর্ভোগ কমবে না। সরকারের কাছে আমাদের দাবি কালুরঘাটে একটি নতুন সেতু চাই।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত