ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন

এমপি বনাম মনোনয়ন প্রত্যাশী দ্বন্দ্ব চরমে

এমপি বনাম মনোনয়ন প্রত্যাশী দ্বন্দ্ব চরমে

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আর মাত্র ছয় মাস বাকি। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপির অংশগ্রহণ নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে। তবে এরইমধ্যে ভোটের আবহে জেলায়-জেলায় জনসংযোগ ও প্রচারে নেমেছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মাঠের তৎপরতা ভালোভাবে নিচ্ছে না বর্তমান এমপিরা। নিজ আসন ধরে রাখতে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন তারা। এমপিদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্বলতার ক্ষেত্র চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে কড়া সমালোচনা করে বক্তব্য দিচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আগেভাগেই দলীয় নেতাকর্মীদের জনসম্পৃক্ততা বাড়ানো ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। জনসংযোগ আর প্রচারে গিয়ে নিজ দলের এমপিদের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগের প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপিকে নিয়ে বক্তব্য দেয়া থেকে নিজ দলের এমপিদের বিরুদ্ধেই বিষোদ্গার করছেন বেশি। এমপিরাও বসে নেই, মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে রাখতে মনোনয়ন প্রত্যাশী ও তাদের অনুসারীদের উপরে হামলা-মামলাও করছেন তারা। ভোটের মাঠে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় টেক্কা দিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলের উভয় পক্ষই। ক্ষমতাসীন দলের অভ্যন্তরে কোন্দলে নড়েচড়ে বসেছে আওয়ামী লীগের নীতি নির্ধারণী মহল। এমপি বনাম মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দ্বন্দ্বে ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।

চলতি বছরের শুরুতে দেশের কয়েকটি জায়গায় আওয়ামী লীগের দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। অধিকারভিত্তিক সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের দেয়া তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত বিভিন্ন জেলায় আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব হয়েছে ৪৭টি, এতে ৫৬৪ জন আহত ও সাতজন নিহত হয়। এছাড়া আওয়ামী লীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে ১১ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের সংঘর্ষে একজন আহত হয়েছে। ছাত্রলীগ-যুবলীগের তিনটি সংঘর্ষে ১৩ জন আহত আর দুইজন নিহত হয়। যুবলীগ-যুবলীগের সংঘর্ষে আটজন আহত। ছাত্রলীগ-ছাত্রলীগ ১০টি সংঘর্ষে ৬৪ জন আহত ও একজন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটে।

গত ২৫ এপ্রিল ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার চেয়ারম্যান বাজারে নৌকার পক্ষে জনসংযোগকালে সদ্য অবসরে যাওয়া যুব ও ক্রীড়া সচিব মেজবাহ উদ্দিনের উপর হামলা করা হয়। এ সময় এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মেজবাহ উদ্দিনের কয়েকজন কর্মী-সমর্থককে আহত করা হয়। এ ঘটনার দুই দিন পরই ভোলা জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন সাবেক সচিব মেজবাহ উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে হামলার ঘটনায় ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্যের লোকজন জড়িত ছিল বলে তিনি দাবি করেন।

গত ৬ জুন কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে প্রায় আড়াই ঘণ্টার জন্য ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। কুমিল্লা-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মুজিবুল হক ও চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার সাবেক মেয়র মো. মিজানুর রহমানের অনুসারীদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এ সংঘর্ষ হয়। এতে ২৫ জন আহত হয়।

গত ৫ জুলাই মাগুরার শ্রীপুরের বরিশাট গ্রামে আওয়ামী লীগের দুই নেতার আধিপত্য বিস্তারের জেরে দফায় দফায় হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় অর্ধশত বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা কাজী তারিকুল ইসলাম তারেক এবং মোস্তাসিম বিল্লাহ সংগ্রামের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ চলছে। এরই জেরে তারিকুলের সমর্থক নবাব আলীকে গাংনালিয়া বাজারে একা পেয়ে সংগ্রামের সমর্থক শাহীন ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে।

এছাড়া গত ২৬ জুন তজুমদ্দিনের চাঁচড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রিয়াদ হোসেন হান্নানের বাড়িঘরে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওনের লোকজন জড়িত বলে অভিযোগ সাবেক চেয়ারম্যান বিয়াদ হোসেন ও তার পরিবারের। তিনি বলেন, আমরা জামায়াত-বিএনপির লোক নই। শুধু মাত্র আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবু নোমান হাওলাদারের সমর্থন করছি। এর জের ধরে বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন আমাকে দীর্ঘদিন হুমকি দিয়ে আসছেন। ইঞ্জিনিয়ার আবু নোমান বলেন, আমি ঈদে বাড়ি গেলে কর্মী-সমর্থকরা আমার বাড়িতে ভিড় করেন। কেননা, তারা আমাকে ভালোবাসেন। এটা একটা পক্ষ মেনে নিতে পারেন না। আমার জনপ্রিয়তায় ঈর্শান্বিত হয়ে কর্মী-সমর্থকদের বাড়িতে হামলা চালানো হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে। আমার ২৫০ জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ৬৫টি মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। কয়েকজন কর্মীর ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে।

আওয়ামী লীগের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, দলের সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশ রয়েছে এলাকায় গিয়ে গণসংযোগ করার। একই সঙ্গে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড জনগণের কাছে তুলে ধরার। তবে অনেক স্থানে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা এমপিদের সঙ্গে বিরোধে জড়াচ্ছেন। অনেকে এমপিদের বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে দল ও সরকার বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ বিষয়গুলো আমাদের এড়িয়ে চলতে হবে।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, নির্বাচনি প্রচারকালে সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরা ও নিজেদের পরিকল্পনার কথা বলে মানুষকে আকৃষ্ট করতে হবে। দলের শৃঙ্খলার পরিপন্থি কাজ করা যাবে না। সভা, সমাবেশ থেকে এমপির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা দলের শৃঙ্খলা পরিপন্থি বলে বিবেচিত হবে।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রচীনতম রাজনৈতিক দল হচ্ছে আওয়ামী লীগ। এ দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিযোগিতা-প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকবে, প্রতিহিংসা নয়। রাজনীতি করলে পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসনে আমরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। দলের শৃঙ্খলা ভাঙলে কোনোভাবেই কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। এমপিরা দলের বাইরে নয়, তাদেরও দলীয় শৃঙ্খলা, নিয়মনীতি মেনে চলতে হবে। বিশৃঙ্খলাকারীদের খুঁজে বের করে অবশ্যই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। আওয়ামী লীগে ঐক্যের কোনো বিকল্প নেই। ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে কোনো অপশক্তি পরাজিত করতে পারবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত