আরো দুইজনের মৃত্যু

ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণার দাবি

প্রকাশ : ০৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আরো দুইজন মারা গেছে এবং আক্রান্ত হয়েছে ৮২০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬০৩ জন ও ঢাকার বাইরের ২১৭ জন। গতকাল শনিবার ২৪ ঘণ্টার হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের ইনচার্জ ডা. মো. জাহিদুল ইসলামের স্বাক্ষর করা ডেঙ্গুবিষয়ক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

জানা গেছে, চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৬৭ জনে। অন্যদিকে, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮২০ ডেঙ্গুরোগী, যা চলতি বছরে একদিনে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ৪ জুলাই একদিনে সর্বোচ্চ ৬৭৮ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১১ হাজার ১১৮ জন। তাদের মধ্যে রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৮ হাজার ৫৭৪ জন। আর ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হয়েছেন ৩ হাজার ৫৪৪ জন। একই সময়ে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন ৯ হাজার ৫৪৯ জন। তাদের মধ্যে ঢাকার বাসিন্দা ৬ হাজার ৭৫০ জন এবং ঢাকার বাইরের ২ হাজার ৭৯৯ জন। এর আগে ২০২২ সালে ডেঙ্গুতে দেশের ইতিহাসের সর্বোচ্চ ২৮১ জন মারা যান। ওই বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ডেঙ্গুতে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। একই সঙ্গে আলোচ্য বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন ৬২ হাজার ৩৮২ জন। এডিস মশার কামড়ে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ও মৃত্যু বাড়ায় ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) দেশে চলমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছে।

গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে টিআইবি জানায়, সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও সিটি করপোরেশনগুলোর কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির অভাব, অনিয়ম, দুর্নীতি এবং বিক্ষিপ্তভাবে অকার্যকর কার্যক্রম গ্রহণের ফলে ডেঙ্গু প্রতিরোধ সম্ভব হচ্ছে না।

বিবৃতিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে, এ জাতীয় সতর্কবার্তা ছিল। কিন্তু রাজধানীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে দুই সিটি করপোরেশনের উদ্যোগ হতাশাজনক।

২০১৯ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত ‘ঢাকা শহরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে প্রণীত ১৫ দফা সুপারিশ আবারো ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনের কাছে পাঠিয়ে বর্তমান পরিস্থিতিকে ‘জনস্বাস্থ্য সংকট’ ঘোষণা করে জরুরি ভিত্তিতে সমন্বিত রোডম্যাপ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলছেন, মশা নিয়ন্ত্রণে মুনাফাভিত্তিক কীটনাশক নির্ভরতার ঊর্ধ্বে গিয়ে অন্য সব ধরনের পদ্ধতির ব্যবহার নিশ্চিত করে দুই সিটি করপোরেশনকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কোভিড সংকটের অভিজ্ঞতার আলোকে সংশ্লিষ্ট খাতের বিশেষজ্ঞজনকে সম্পৃক্ত করে পরামর্শক প্যানেল গঠন ও যথাযথ গুরুত্বসহকারে নিয়মিতভাবে তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে।

তিনি আরো বলেন, মশক নিধনে পরিবেশবান্ধব পদ্ধতির ব্যবহার বাড়ানোসহ বছরব্যাপী এ কার্যক্রম পরিচালনার পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সম্ভাব্য সব মাধ্যমে এডিশ মশা ও এর লার্ভা, ডেঙ্গুরোগ নিয়ন্ত্রণ ও দ্রুত চিকিৎসার বিষয়ে জনসচেতনতা ও সতর্কতামূলক বার্তার কার্যকর প্রচার বাড়ানো জরুরি। এছাড়া মশা নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে জনসম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে এলাকাভিত্তিক স্বেচ্ছাসেবক দল গঠনসহ যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে রেড ক্রিসেন্ট স্বেচ্ছাসেবীসহ আগ্রহী অন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোকে সম্পৃক্ত করার সুযোগ নিতে হবে।

শুধু রাজধানীই নয়, সারাদেশেই ডেঙ্গু ছড়িয়ে পড়ছে জানিয়ে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ঢাকার বাইরের সিটি করপোরেশন ও পৌরসভাগুলোতে মশক নিধনে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে সক্ষমতার ঘাটতি জরুরি ভিত্তিতে চিহ্নিত করে সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। পাশাপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনগণের সচেতনতা ও সম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে বহুগুণ।

আগামীতে যেন এ জাতীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে লক্ষ্যে উল্লিখিত বিশেষজ্ঞ প্যানেলসহ সংশ্লিষ্ট সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় পর্যায়ে এডিশ মশাসহ অন্যান্য মশা নিয়ন্ত্রণে কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের পাশাপাশি বাস্তবায়নকারী সব সংস্থার দায়িত্ব ও কর্তব্য সুস্পষ্ট করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।