ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

সন্দ্বীপ চ্যানেলে বৈরী আবহাওয়া

ডুবছে কনটেইনার জাহাজ ‘এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস’

ডুবছে কনটেইনার জাহাজ ‘এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস’

বঙ্গোপসাগরের সন্দ্বীপ চ্যানেলের উপকূলের কাছে কাত হওয়া কনটেইনারবাহী জাহাজ ‘এমভি পানগাঁও এক্সপ্রেস’ তিন দিনেও উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। জাহাজটির বেশ কয়েকটি কনটেইনার ভেসে গেছে সমুদ্রের উত্তাল ঢেউয়ে। সহসা উদ্ধার না হলে অক্ষত কনটেইনারসহ পুরো জাহাজ সাগরে তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। এতে জাহাজে থাকা বহু কনটেইনার আর কখনো অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা যাবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

বন্দর সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দরের মালিকানাধীন ‘পানগাঁও এক্সপ্রেস’ জাহাজটি ভাড়ায় পরিচালনা করছে সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সি। তারা নানাভাবে চেষ্টা করছে জাহাজটি উদ্ধারের। প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, দুর্যোগপূর্ণ বৈরী আবহাওয়ার কারণে জাহাজটি দুর্ঘটনায় পড়েছে। জাহাজটির কিছু অংশ কাত হয়েছে। এটি এখনও একই অবস্থান আছে। উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আমরা আশা করছি, উদ্ধার করা গেলে জাহাজটিতে থাকা বাকি কনটেইনারগুলো অক্ষত থাকবে।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা জানান, ৬ জুলাই বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ভাসানচরের বঙ্গোপসাগরের উপকূলে জাহাজটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার নিয়ে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে যাচ্ছিল জাহাজটি।

তারা আরো জানান, দুর্ঘটনায় জাহাজের তিনটি কনটেইনার পানিতে ভেসে গেছে। তবে নাবিকদের উদ্ধার করে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে জাহাজটি উদ্ধারে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছে বন্দরের উদ্ধারকারী জাহাজ। সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, পানগাঁও এক্সপ্রেসের কিছু অংশ ডুবে গেছে। বন্দর থেকে কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে যাওয়ার পথে জাহাজটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। এখন এটি অর্ধনিমজ্জিত অবস্থায় আছে। ১২ জন নাবিক ও বিআইডব্লিউটিএ’র দুজন প্রতিনিধিসহ ১৪ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। জাহাজটিতে ৯৬টি কনটেইনার আছে। এর মধ্যে তিনটি পানিতে ভেসে গেছে।

দুর্ঘটনার পর ভাড়ায় পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বা চার্টারারের নিযুক্ত একটি টেকনিক্যাল টিম (ডলফিন মেরিন) জাহাজের পানি ও কনটেইনার অপসারণের চেষ্টা করছে। ইতোমধ্যে বন্দরের টাগবোট কান্ডারি-১০ সহ ভাড়া করা একটি টাগবোট দুর্ঘটনাস্থলে পাঠানো হলেও উদ্ধারে সফল হয়নি। উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত আছে। পরিচালনাকারী সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিকে জাহাজটিকে দ্রুত উদ্ধার করা জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এদিকে দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখতে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের ইঞ্জিনিয়ার সার্ভেয়ার রফিকুল ইসলাম ও বন্দরের সহকারী হারবার মাস্টার ক্যাপ্টেন মোস্তাহিদুল ইসলামকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনাস্থলে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের প্রতিনিধি দল রয়েছে। তারা উদ্ধারকাজে সহায়তা করছে।

জাহাজটির মালিক বন্দর কর্তৃপক্ষ। এটি ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করে আসছে সি গ্লোরি শিপিং এজেন্সিস লিমিটেড। চট্টগ্রাম বন্দর থেকে আমদানি পণ্যের কনটেইনার নিয়ে জাহাজটি কেরানীগঞ্জের পানগাঁও নৌ-টার্মিনালে যাতায়াত করছিল।

চট্টগ্রাম বন্দরের পরিবহন বিভাগ সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পানগাঁও ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপোতে দুটি জাহাজে করে কনটেইনার পরিবহন শুরু হয় একদশক আগে। মূলত ঢাকাসহ আশপাশের এলাকার আমদানিকারকদের পণ্য দ্রুত ডেলিভারি এবং রপ্তানি পণ্য দ্রুত জাহাজিকরণ করতে এই আইসিডি চালু করা হয়। একদশকের বেশি সময় আগে চালু করা আইসিডিতে শুরুতে বেশ ভালো পরিমাণে কনটেইনার পরিবহন হতো। পরে ধীরে ধীরে কনটেইনার পরিবহন কমে যায়। এরপর দুটি জাহাজ বেসরকারি খাতে পরিচালনার জন্য ছেড়ে দেয় বন্দর কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে বন্দরের জাহাজ পানগাঁও এক্সপ্রেসসহ আরো একটি জাহাজ বেসরকারি খাতে পরিচালনা হয়ে আসছে।

নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা জানান, সন্দ্বীপ চ্যানেলে লাইটার জাহাজসহ ছোট পরিসরের সব ধরনের জাহাজ চলাচলে ঝুঁকি রয়েই গেছে। বিশেষ করে বছরের জুন জুলাই মাসে ওই এলাকা সবচেয়ে বেশি উত্তাল থাকে। প্রতি বছরই সন্দ্বীপ চ্যানেলে বৈরি আবহাওয়ায় জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে মাঝেমধ্যে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। তাছাড়া জাহাজে বহন করা বিপুল আমদানি পণ্য নষ্ট হয়ে যায়।

জাহাজ উদ্ধার প্রক্রিয়া সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, কোনো জাহাজ চ্যানেল কিংবা বহির্নোঙরে ডুবে গেলে বা ডুবতে থাকলে নিয়ম অনুযায়ী স্যালভেজ পার্টি নিয়োগ করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান স্যালভেজ কোম্পানি নামেও পরিচিত। প্রতিযোগিতামূলক দরে তাদের উদ্ধারের দায়িত্ব দেয়া হয়। এই জাহাজটির ক্ষেত্রেও স্যালভেজ প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে, যাতে জাহাজটি দ্রুত উদ্ধার করে অক্ষত কনটেইনার রক্ষা করা যায়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত