ঢাকায় বিদেশি নির্বাচনি মিশন শুরু

সিইসির সঙ্গে আজ বৈঠক ইইউর অনুসন্ধানী দলের

আজ আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ঢাকায় বিদেশি নির্বাচন মিশন শুরু হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দল- আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে তীব্র মতবিরোধের প্রেক্ষাপটে এসব বিদেশি ঢাকায় আসলেন। আজ মঙ্গলবার প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। অন্যদিকে আজ ঢাকায় আসছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল। সব মহল থেকে নজর রাখা হচ্ছে প্রতিনিধি দলের উপর।

সূত্র জানায়, চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের শেষ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে নির্বাচন কমিশন। ভোটের আগে এবার বিদেশিদের তৎপরতা বেশি দেখা যাচ্ছে। বিদেশিরা একের পর এক বৈঠক করছেন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে। বিদেশি প্রতিনিধি দলগুলো আলোচনা শুরু করতে যাচ্ছে। সিইসির একান্ত সচিব মো. রিয়াজ উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, আজ সকাল ১১টায় ইইউ প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবে। ইইউর ছয় সদস্যের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিসহ ১০ জনের মতো আসবেন। তিনি বলেন, ইইউ ছাড়া অন্য কোনো বিদেশি প্রতিনিধি ইসির সঙ্গে সাক্ষাতের আবেদন করেনি। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দুটি প্রতিনিধি দলও সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের কোনো আবেদন করেনি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ছয় সদস্যবিশিষ্ট ‘অনুসন্ধানী অগ্রগামী দল আগামী ২৩ জুলাই পর্যন্ত বাংলাদেশে অবস্থান করবেন। মিশনের কাজ হবে মূল নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশনের কর্মপরিধি, পরিকল্পনা, বাজেট, লজিস্টিক্স ও নিরাপত্তা ইত্যাদি বিষয় মূল্যায়ন করা। অনুসন্ধানী মিশন বাংলাদেশে অবস্থানকালে সরকারের প্রতিনিধি, নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতা, সুশীল সমাজ এবং গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। অনুসন্ধানী মিশন হতে প্রাপ্ত এসব তথ্যের ভিত্তিতেই পরবর্তীতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে পূর্ণাঙ্গ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ মিশন পাঠানোর বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে আজ মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধি দল। টানা চার দিনের সফরে সফরকারিরা সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চার ব্যক্তির সঙ্গে পৃথক বৈঠক করবেন বলে জানা গেছে। যার মধ্যে রয়েছে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি খাতবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান ও পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। অন্যদিকে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি, শ্রমিক নেতাসহ আরো কয়েকজনের সঙ্গে দেখা করতে পারে মার্কিন দলটি।

জানা যায়, নাগরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা হবে। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, নির্বাচন নিয়ে কথা হবে, তবে তা আরো অনেক বিষয়ের সঙ্গে।

এদিকে উজরা জেয়া ওয়াশিংটন থেকে দিল্লি ও ঢাকা সফরে যাত্রা করার সঙ্গে সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর ভারত ও বাংলাদেশে তার সফরের আলোচ্য বিষয় প্রকাশ করেছে। উজরা জেয়ার নেতৃত্বে মার্কিন প্রতিনিধি দলটি গত শনিবার দিল্লি পৌঁছায়। আজ চার দিনের সফরে তাদের ঢাকা পৌঁছানোর কথা রয়েছে। দেশটির দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু প্রতিনিধি দলে রয়েছেন। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র বলেন, ভারত সফরে উজরা জেয়ার আলোচনার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে গণতন্ত্র ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতাসহ বিভিন্ন বিষয়। আর বাংলাদেশ সফরে সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনায় আসবে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন, মানবাধিকার, শ্রম সম্পর্কিত বিষয়, মানব পাচার ও রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন দিক।

জানা যায়, বাংলাদেশে সুষ্ঠু ভোট অনুষ্ঠানের জন্য মার্কিন ভিসানীতি ঘোষণার পরপরই উজরা জেয়ার সফরটি হচ্ছে। তাই সফরকারিদের আলোচ্য সূচিতে নির্বাচনই প্রাধান্য পাবে বলে সংশ্লিদের মত।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন কখনোই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেনি। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে যতগুলো বৈঠক হয়েছে, কখনো তারা বলেনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আনতে হবে। তারা কখনো বলেনি প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করতে হবে। তারা বলেনি পার্লামেন্ট ভেঙে দিতে হবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আমাদের সরকারের পক্ষ থেকে খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। আমরা তাদের বলে দিয়েছি নির্বাচন সংবিধান অনুযায়ী হবে। মন্ত্রী আরো বলেন, আমরা একটা স্বচ্ছ নির্বাচন করব এটা তাদের আমরা জানিয়ে দিয়েছি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীও জানিয়ে দিয়েছেন সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন স্বচ্ছ ও অবাধ হবে। মার্কিন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশ সফরের ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ওবায়দুল কাদের বলেন, মার্কিন প্রতিনিধি দল আসছে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করতে নয়, তারা আসছেন রোহিঙ্গা পরিস্থিতি জানতে। আর ইইউ প্রতিনিধি দল আসছে নির্বাচনে পর্যবেক্ষক দল কীভাবে পর্যবেক্ষণ করবে তা দেখতে।