ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আরপিও সংশোধনী বিলের গেজেট প্রকাশ

ইসির ক্ষমতা রহিত হয়নি সংহত হয়েছে : সিইসি

ইসির ক্ষমতা রহিত হয়নি সংহত হয়েছে : সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কোনো ক্ষমতা রহিত হয়নি বরং সংহত হয়েছে। অনেকেই অবান্তর মন্তব্য করেছে, ইসি নিজের পায়ে নিজেই কুঠার মেরেছে। নির্বাচন কমিশন ভুল করতে পারে কিন্তু কুঠার মারেনি।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধনী বিলটি সংসদে পাস হয়ে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরে গেজেট হওয়ার পর নির্বাচন ভবনে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরার সময় গতকাল এমন মন্তব্য করেন তিনি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ সময় আইনের ধারা ধরে ধরে ব্যাখ্যা করেন। এমনকি তারা কি প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং সরকার থেকে কি রাখা হয়েছে সেসবও বলেন।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, আমরা আমাদের প্রজ্ঞা অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয়ে আরপিও সংশোধনের প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। সেখান থেকে অনেক চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কেবিনেটে অনুমোদিত হয়। সেখানে সামান্য একটু পরিবর্তন ওনারা করেননি, আমাদের মতামত চেয়েছিলেন। সেটা হলো ৯১এ(এ) তে সামান্য পরিবর্তন ছিল। আমরা বলেছিলাম যে কোনো আসন এলাকায় অনিয়ম হলে বন্ধ করে দিতে। ওনারা বলেছিলেন, আমরা শুধু মাত্র যেখানে যে কেন্দ্রে নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে সেগুলো বন্ধ করে দিতে। এটা আমাদের কাছে খুবই যৌক্তিক মনে হয়েছে। এটি কিন্তু সম্পূর্ণ একটি নতুন ধারা ছিল। যেটা ৯১-এর এ ধারা সেখানে কিন্তু আমরা পরিবর্তন করিনি। এবং সরকার বা সংসদ থেকেও কোনো রকম পরিবর্তন আনা হয়নি। সেদিক থেকে এই আইনটি বিল আকারে পাস হয়েছিল। গত রোববার রাষ্ট্রপতির সম্মতির পর গেজেট হয়েছে।

আপনাদের (সাংবাদিক) উদ্দেশ্যে বলার কারণ হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে মন্তব্য এসেছে। এতে করে জনগণ বিভ্রান্ত হতে পারে। আমরা মনে করি যেসব ব্যাখ্যা এসেছে সবগুলো সঠিক নয়। যেমন- প্রথম বলা হয়েছিল কমিশন বুঝে না বুঝে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মেরেছে। এবং কমিশন গেজেট প্রকাশ হওয়ার পর নির্বাচন বাতিলের ক্ষমতা চেয়েছিল এবং ৯১(এ)-তে সংশোধন এসেছে। আসলে তা হয়নি। সেটা হুবহু আগের মতোই আছে। ৯১এ(এ)-তে নতুন একটি ধারা সংযোজিত হয়েছে। সরকার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আরপিও সংশোধন করেছে, এমন মন্তব্যও এসেছে। কিন্তু, সরকার আরপিও সংশোধন করেনি। করেছে, তবে আমাদের প্রস্তাব অনুযায়ী। নির্বাচন কমিশন তার অবস্থান আরো সংহত, দৃঢ় ও শক্তিশালী করার জন্য যে সংশোধনগুলো চেয়েছিল সে সংশোধনগুলোয় সরকার সম্মত হয়েছে। এতে আমাদের ক্ষমতা বেড়েছে। ৯১(এ)-তে সংশোধন হতো তবে আমাদের ক্ষমতা কিছু হেরফের হতো। যেহেতু ওখানে কিছু করা হয়নি, ওটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ধারা, যে পোলিং পিরিয়ডে আমরা যে একটি, দুটি বা সব আসনের নির্বাচন আমরা বাতিল করে দিতে পারি। সেটা হুবুহু আগের মতোই আছে।

তিনি বলেন, ৯১এ(এ) নতুন একটি ধারা সংযোজন করে আমরা যেটা চেয়েছিলাম নির্বাচন হওয়ার পরে গেজেট করার পর আর কোনো কাজ নির্বাচন কমিশনের হাতে থাকে না। সেখানে আমরা বলেছিলাম কোনো কোনো ক্ষেত্রে এমনও হতে পারে, সরকারি ফলাফল প্রকাশের পর বড় ধরনের কোনো বিতর্ক থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে কমিশন সেই বিষয়টি তদন্ত করতে পারবে, গেজেট স্থগিত রেখে। সেই জায়গায় সরকার এবং সংসদ বলেছে সব আসনের নির্বাচন বাতিল না করে যেই কেন্দ্রে ফলাফল বাধাগ্রস্ত হয়েছে বলে মনে হবে, সেই কেন্দ্রের ফলাফল স্থগিত করতে পারবে।

সিইসি আরো বলেন, সরকার নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণের জন্য আইন সংশোধন করেছে। আমি আগেও বলেছি, এটা সরকার করেনি। সরকার আমাদের সম্মান দেখিয়েছে। আমরা যেটা চেয়েছিলাম সেটা নাও করতে পারত, সেটা সরকারের অধিক্ষেত্র। কিন্তু আমরা যেটা চেয়েছিলাম, সেখানে সরকারে সদিচ্ছার প্রতিফলন ঘটেছে। তারা আমাদের প্রস্তাবিত সংশোধনগুলো সংসদে নিয়ে পাস করে দিয়েছে।

সাবেক এই আইন সচিব বলেন, দুই-চার দিন আগেই একটা পত্রিকায় বলা হয়েছে, কমিশন থেকেই ক্ষমতা কমানো প্রস্তাব গিয়েছে। এটি একেবারেই অবান্তর। কমিশন কখনোই তার ক্ষমতা কমানোর প্রস্তাব পাঠায়নি। পাঠাতে পারেও না। আর এতোটা দায়িত্বহীন কমিশন হবে, এটা চিন্তাও করা যায় না। কিছু কিছু জায়গায় পোলিং এবং ইলেকশন শব্দের কথা বলেছে। আমরা তিনটা জায়গায় ইলেকশন শব্দের পরিবর্তে পোলিং দিয়ে প্রতিস্থাপিত করেছি। এটা হলো ক্লারিক্যাল কারেকশন। ক্লারিক্যাল কারেকশন এবং অ্যামেন্ডমেন্ডের মধ্যে কিন্তু পার্থক্য আছে। অ্যামেন্ডমেন্ডের মধ্যে নীতিগত পার্থক্য থাকে, যেটা অর্থকে পরিবর্তন করে দেয়। ক্লারিক্যাল কারেকশন হচ্ছে জাস্ট সংশোধন। পানি বানান করতে গিয়ে উ-কার দিয়ে ফেলেছিলাম, কেউ সেটা ই-কার দিয়ে করতে পারে, যেটা কারেকশন। এটাকে নিয়ে অপব্যাখ্যা করাটা দুঃখজনক বলে মনে করি।

সাবেক এই বিচারক বলেন, আমরা প্রত্যাশা করব যারা বিজ্ঞজন আছেন, আমরা পুরো জাতি প্রত্যাশা করছি একটা সুন্দর নির্বাচন হোক। নির্বাচন নিয়ে অহেতুক বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করে নির্বাচন কমিশনকে হেয় করা বা খাটো করা যেমন বাঞ্ছনীয় নয়, যেমন নির্বাচন কমিশনকে তারা যদি গঠনমূলক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেন, আমরা উপকৃত হবো। আমরা যে কোনো গঠনমূলক সাজেশন বিবেচনায় নিতে সদা প্রস্তুত। আগামী নির্বাচনটাকে সুন্দর করার জন্য আমরা প্রত্যাশা করি যে কোনো আইন বা বিধি-বিধানে ভালো কোনো সংশোধন সম্ভব হয় আমরা হয়তো আগামীতেও করব।

শুধুমাত্র ৯১-এ নয়, বেশ কয়েকটি ধারা সংশোধন করে নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতাকে সংহত করেছি। যেমন ৮৪-এ তে দেখবেন বেশ কিছু কর্মকে আমরা অপরাধের আওতায় এনেছি। যেমন গণমাধ্যম কর্মী তাদের ইক্যুয়েপমেন্টকে যদি কেউ ক্ষতিগ্রস্ত করে, পর্যবেক্ষকদের দেহ এবং তাদের কোনো ইক্যুয়েপমেন্ট যদি ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়, জড়িতদের বিরুদ্ধে শাস্তির বিধান এনেছি।

কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়ার অভিযোগ আসে। এই ধররে ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য আমরা বাধাদানকারীকে শাস্তির আওতায় এনেছি। এছাড়া মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে কাউকে চাপ প্রয়োগ করলেও সেটা অপরাধ হবে। তবে এগুলো কমে আসবে। কেননা, অনলাইনে মনোনয়নপত্র দাখিলের ব্যবস্থা করছি। এরইমধ্যে কিছু মনোনয়নপত্র অনলাইনে রিসিভ করতে পেরেছি। এতে শো-ডাউন এবং অর্থব্যয় কমে যাবে। চট্টগ্রাম-১০ ও ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনেও আমরা অনলাইনে মনোনয়নপত্র গ্রহণ করতে পেরেছি। ভোটারকে ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দিলে সেটা দণ্ডনীয় অপরাধ হবে, এটাও আরপিওতে একটা ইম্প্রুভমেন্ট।

আরেকটি বিষয় কেউ এটা নিয়ে প্রশংসাও করেননি, সমালোচনা বা আলোচনাও করেননি। প্রিজাইডিং কর্মকর্তার ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এতে তিনি যদি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা না পান তবে ভোট বন্ধ করে সব কাগজপাতি ফেলে বেরিয়ে আসবেন। এটার উদ্দেশ্য হচ্ছে প্রিজাইডিং কর্মকর্তা দায়িত্ব স্পষ্ট করা। এতে তিনি দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলে সেটা ক্রিমিনাল অফেন্স হিসেবে আখ্যা দিয়ে তাকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। ৩১(২)-তে আগে শুধু ছিল থাকবে ব্যালট পেপারে। এখন সেখানে স্বাক্ষরের বিধানও এনেছি। ভোট গণনার সময় ব্যালটে স্বাক্ষর না পেলে সেটা বাতিল করা হবে। আরেকটা বিষয় হলো আবেদনের ভিত্তিতে এজেন্টদের রেজাল্ট দেবেন। কিন্তু এখন বলা হয়েছে আবেদনের ভিত্তিতে নয়, প্রিজাইডিং কর্মকর্তা এমনিতে সেটা দেবেন। কারো প্রার্থিতা আমরা বাতিল করতে পারি। কিন্তু সে আবারো নমিনেশন জমা দিতে পারবে। এক্ষেত্রে আমরা বিধান এনেছি কারো যদি অপকর্মের কারণে প্রার্থিতা বাতিল হয়ে যায়, তাহলে সে পরবর্তীতে নতুন নমিনেশন দাখিল করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে এটা একটা অগ্রগতি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত