ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

পাহাড়ে বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি নির্মাণ

* ৩৫০ স্থাপনা উচ্ছেদ * ২.৮৮ একর খাস জমি উদ্ধার * পাহাড় কাটার ১৫ হটস্পট চিহ্নিত
পাহাড়ে বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি নির্মাণ

চট্টগ্রামের পাহাড়ে বেড়েই চলেছে ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ বসতি নির্মাণের কাজ। এসব ঝুঁকিপূর্ণ অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা ক্রমেই বেড়েই চলেছে। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা, জরিমানা এমনকি কঠোর কোনো পদক্ষেপে এ কর্মকাণ্ড বন্ধ হচ্ছে না। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বহুবার নগরীর বিভিন্ন স্থানে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালিত হলেও কার্যত কোনো সুফল পাচ্ছে না নগরবাসী। স্থাপনা উচ্ছেদের কিছু দিন পর আবারো বসতি নির্মাণের পায়তারা শুরু করে অসাধু মহল। ভূমিদস্যুদের সহায়তায় রাতারাতি পাহাড় কেটে বন উজাড় করে নির্মাণ করা হচ্ছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। এমনি দৃশ্য দেখা গেছে নগরীর আকবরশাহ থানাধীন ফয়’স লেক সংলগ্ন বেলতলীঘোনা এলাকায়। ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায় পাহাড় কেটে ৩৫০টি অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। স্থাপনাগুলো এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে যে কোনো সময় ঘটে যেত পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। এমন আশঙ্কা থেকে এসব অবৈধ উচ্ছেদ করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। গত রোববার সকাল ১০টা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বেলতলীঘোনা এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ২.৮৮ একর সরকারি খাস জমি উদ্ধার করা হয়। অভিযানে পাহাড় কাটার ১৫টি হটস্পট চিহ্নিত করা হয়েছে। পাহাড় রক্ষায় সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত জেলা প্রশাসনের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এ অভিযান পরিচালনা করেন। তারা হলেন- সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম, কাট্টলী সার্কেলের এসিল্যান্ড উমর ফারুক, চান্দগাঁও সার্কেলের এসিল্যান্ড মো. মাসুদ রানা এবং বাকলিয়া সার্কেলের এসিল্যান্ড জামিউল হিকমাহ। জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, ২০১৮, ২০২১, ২০২২, ২০২৩ সালে আকবরশাহ এলাকায় পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঘটেছে। বিভিন্ন এনজিও ও ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমে আকবরশাহ এলাকার পাহাড়গুলোতে ঘরবাড়ি স্থাপনসহ বসবাসের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ ও অবৈধ বস্তিগুলোতে বিভিন্ন দাতা ও দাতব্য সংস্থার কার্যক্রম চলছে। এখানকার ড্রেন, টয়লেট, রাস্তা, এমনকি স্কুলিং কার্যক্রম চলে এদের অর্থায়নে। পাহাড় কর্তনকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা হচ্ছে উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেটরা বলেছেন, পাহাড় রক্ষায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের দায়ের করা মামলার রায় এবং পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৬তম সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামানের নির্দেশে পাহাড়ে এসব অভিযান চালানো হচ্ছে। বায়েজিদ বোস্তামি থানা, আকবরশাহ থানা, খুলশী থানা, সীতাকুণ্ড উপজেলার জঙ্গল সলিমপুর আলীনগর এলাকা এবং অন্যান্য পাহাড়ি এলাকায় আইন ভঙ্গ করে, স্বত্ব ব্যতিরেকে, অযৌক্তিকভাবে পাহাড় কেটে যে সব স্থাপনা, ঘর গড়ে উঠেছে সেগুলো উচ্ছেদ করে নিতে হবে। অন্যথায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে। সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পাহাড় পুনরুদ্ধারে গত রোববার দ্বিতীয় দিনের মতো উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে ৩৫০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এর আগে ৬ জুন বেলতলীঘোনা এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয় এবং ৫০০ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। অবৈধ ও বিধিবহির্ভূতভাবে পরিবেশ আইন লঙ্ঘন করে গড়ে তোলা স্থাপনা উচ্ছেদের প্রথম ধাপে নগরীর সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ি এলাকা আকবরশাহ থানাকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উচ্ছেদ করা সরকারি খাস জমি যাতে পুনরায় দখল না হয়, সেজন্য পিলার ও কাঁটাতারের বেষ্টনী স্থাপনা করা হয়েছে উল্লেখ করে ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, উদ্ধারকৃত পাহাড়ি এলাকার সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার মোতায়েন করা হয়েছে। অভিযান অব্যাহত থাকবে। অভিযানে সিএমপির ৮০ জন সদস্য, আকবরশাহ থানার ওসি ওয়ালি উদ্দিন, পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ হাসান, র‌্যাব-৭-এর দুটি টিম, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের টিম, মাদকদ্রব্য অধিদপ্তরের প্রতিনিধি, পিডিবির টিম, কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের প্রতিনিধি, ওয়াসার প্রতিনিধি এবং ৪০ জন আনসার সদস্য উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত