ক্যাম্পগুলোতে বাড়ছে সহিংসতা

সাড়ে ৫ বছরে শীর্ষ নেতাসহ ১৭৩ রোহিঙ্গা নিহত

প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচএম ফারুক/এএইচ সেলিম উল্লাহ

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো দিন দিন বিষফোড়া হয়ে উঠেছে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে (সাবেক আরাকান রাজ্য) নির্মম নির্যাতন ও জ্বালাও-পোড়াওয়ের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশে রেকর্ড সংখ্যক রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ ঘটে। এর পর থেকে কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ ও সহিংসতা দিন দিন বেড়েই চলছে। একে অপরের সঙ্গে তুচ্ছ মনোমালিন্যের মতো ঘটনাকে কেন্দ্র করে হত্যাকাণ্ড ঘটছে। অপহরণ, মাদক ব্যবসা, মানব পাচার, চাঁদাবাজি, ডাকাতি ও ধর্ষণের মতো ঘটনা যেন মামুলি ব্যাপার। গত ৭ জুলাই ভোর ৬টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট, ব্লক-বি-১৭-১৮ সংলগ্ন এলাকায় দুষ্কৃতকারীদের দুইপক্ষের গোলাগুলির ঘটনায় ছয়জনের মৃত্যু হয়। জানা গেছে, ঘটনাস্থলে তিনজন ও পরে হাসপাতালে নেয়ার পথে আরো দুইজন নিহত এবং ক্যাম্প এলাকায় আরো একজনের মরদেহ পাওয়া যায়। এর একদিন আগে বৃহস্পতিবার সকালে উখিয়ার কুতুপালংয়ের পশ্চিম-১ নম্বর ক্যাম্পের এ/৯ ব্লকে এবাদুল্লাহ নামে এক সাব-মাঝিকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।

গত শুক্রবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন- মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী জনগোষ্ঠী যারা রয়েছে, তারাই মাঝেমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় ঢুকছে এবং হত্যার ঘটনা ঘটাচ্ছে। এই বিচ্ছিন্নতাবাদীরা যাতে সীমান্তে অনুপ্রবেশ করতে না পারে, সেজন্য আমরা বর্ডার ফোর্সকে আরো শক্তিশালী করছি।

কক্সবাজার জেলা পুলিশ ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দায়িত্বে নিয়োজিত এপিবিএন এবং সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, গত সাড়ে ৫ বছরে ক্যাম্পে বসবাসকারী রোহিঙ্গা নেতা, স্বেচ্ছাসেবক ও সাধারণ রোহিঙ্গাসহ অন্তত ১৭৩টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে গত জুন মাসে ক্যাম্প থেকে ৫ রোহিঙ্গাকে অপহরণ, এক মাদ্রাসা ছাত্রসহ পাঁচজনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। হাত-পায়ের রগ কেটে একজনকে হত্যা এবং এক কিশোরীকে ধর্ষণ করা হয়। ক্যাম্পের বাসিন্দারা জানান, আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা ও অপহরণ করে মুক্তিপণ না পেয়ে অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা: রোহিঙ্গা নেতৃবৃন্দ ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, উখিয়া-টেকনাফের ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠী দাপিয়ে বেড়ায়। এসব সক্রিয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর অপতৎপরতায় আতঙ্কে দিন কাটে সাধারণ রোহিঙ্গাদের। তবে সশস্ত্র এসব সন্ত্রাসীদের ভয়ে মুখ খোলার সাহস পায় না কেউ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কুতুপালং ক্যাম্পের একজন রোহিঙ্গা বলেন- ক্যাম্পে ১০ থেকে ১২টি সন্ত্রাসী গ্রুপ রয়েছে। তারা দিনরাত বিভিন্ন ছদ্মবেশে ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে ঘুরে বেড়ায়। আর প্রতিপক্ষকে টার্গেট করে হত্যাকাণ্ড চালায়। রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহকে তার সংগঠনের অফিসে ঢুকে ছদ্মবেশে মুখোশধারীরা হত্যা করেছিল। এসব সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর কাছে রোহিঙ্গা সমাজ অসহায়। কখন কাকে মেরে ফেলে তার কোনো হিসাব নেই। তাই আমরা রাত-দিন ভয়ে ভয়ে চলাফেরা করি।

উখিয়া তাজনিমারখোলা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আরেকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন- দুপুরের পর থেকে ক্যাম্পের বিভিন্ন ব্লকে অপরিচিত কিছু মানুষকে ঘোরাঘুরি করতে দেখা যায় সবসময়। ভয়ে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করতে পারি না তারা কেন ঘুরছে। আমাদের ধারণা সেসব লোক অপরাধ চক্রের সদস্য। টেকনাফ শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের হারেছ উল্লাহ বলেন, ‘প্রতিনিয়ত ঘটে যাওয়া অপরাধগুলো চোখে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। প্রতিবাদ করলে পরে কাল হয়।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে কয়েকটি গ্রুপ সক্রিয়। পাশাপাশি ‘আরসা’ পরিচয় দিয়ে আরো কয়েকটি গ্রুপ ক্যাম্পে সক্রিয় আছে। আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ, অপহরণ ও চাঁদাবাজি ঘটনায় এসব গ্রুপের সদস্যরা জড়িত।

ক্যাম্পের একাধিক বাসিন্দা বলেন- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা এখন নিত্যদিনের খবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রোহিঙ্গা নেতা মুহিব্বুল্লাহসহ অনেক নেতা নিহত হয়েছেন এই সংঘাত সংঘর্ষে। এদিকে গত শুক্রবার বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প-৮ ইস্ট, ব্লক-বি-১৭-১৮ সংলগ্ন এলাকায় এ গোলাগুলির ঘটনায় আরসার কমান্ডার নজিবুল্লাহসহ নিহত হয়েছেন ছয়জন।

জানা গেছে, ক্যাম্পে অবস্থান করা ঘুমন্ত আরএসও সদস্যদের মারতে এসে উল্টো আরসার সদস্য নিজেরাই কুপোকাত হয়েছে। এটা গত শুক্রবার ভোর ৬টার দিকে ঘটেছে। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী ছয়জন নিহতের তথ্য নিশ্চত করেন। এরমধ্যে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং হাসপাতালে দুইজন মারা যান। বাকি আরেকজনের মরদেহ মিলেছে পাহাড়ের ঢালুতে। গোলাগুলিতে নিহতরা হলেন- আরসা কমান্ডার ক্যাম্প-১০ এর বাসিন্দা মো. নজিমুল্লাহ, আরসার জিম্মাদার ক্যাম্প-১৩ এর নুরুল আমিন (২৪), আরসার সদস্য ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (২৪) ও মোহাম্মদ হামীম (১৬)। অপরজনের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এছাড়া সন্ধ্যায় ১১ নম্বর ক্যাম্প এলাকার পাহাড়ের ঢালু থেকে সানা উল্লাহ (২৩) নামে একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তিনিও সকালে গোলাগুলিতে আহতদের একজন বলে দাবি রোহিঙ্গাদের।

সূত্র মতে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো নির্যাতন-নিপীড়নের তথ্যানুসন্ধানের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খান নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল ক্যাম্প পরিদর্শন করেন। আইসিসি টিম চলে যাওয়ার একদিন পর এ গোলাগুলির ঘটনাকে ঘিরে অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

গত বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য নির্যাতিতদের ডাকতে গিয়ে মো. এবাদুল্লাহ (২৭) নামের এক রোহিঙ্গা সাব মাঝি (নেতা) ছুরিকাঘাতে নিহত হন। রোহিঙ্গাদের দাবি, অধিকার নিয়ে কাজ করতে গঠিত হয়েছে বেশ কয়েকটি সংগঠন। এর মধ্যে আরএসও মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ফেরার বিষয় ও অধিকার নিয়ে কাজ করে। আর ক্যাম্পে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করছে আরসা। আরসার নিয়ন্ত্রণে থাকা সন্ত্রাসীরা মিয়ানমার সরকারের ইন্ধনে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন ও আন্তর্জাতিক আদালতের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে কাজ করছে। প্রত্যাবাসনের আগ্রহী রোহিঙ্গাদের টার্গেট করে হত্যা ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে তারা।

বৃহস্পতিবার আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি করিম আসাদ আহমাদ খানের ক্যাম্প সফর ও বিচার কার্যক্রমের সাক্ষ্য দিতে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের ভয় দেখাতে এ হামলা বলে ধারণা রোহিঙ্গাদের।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোলাগুলির বিষয়ে ক্যাম্পে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এপিবিএন সদস্য ও রোহিঙ্গাদের কয়েকজন বলেন, শুক্রবার ভোরে আরসার অন্তত ৪০-৫০ জনের একটি সশস্ত্রদল ক্যাম্প-৮ ওয়েস্টে ঘুমন্ত আরএসও সদস্যদের ওপর হামলার উদ্দেশ্যে প্রবেশ করে। কিন্তু আরএসওর সদস্যরা আগে থেকে এ হামলার খবর পেয়ে ভারি অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত হয়। ভোর ৫টার দিকে আরসার সদস্যরা ক্যাম্পে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাদের চারিদিক থেকে ঘিরে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করে আরএসওর সদস্যরা। এতে দুইপক্ষের মধ্যে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী গুলিবিনিময় হয়। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি টের পেয়ে দুইপক্ষই পালিয়ে যায়।

৮-এপিবিএনের সহকারী পুলিশ সুপার (অপারেশন অ্যান্ড মিডিয়া) ফারুক আহমেদ বলেন- নিহতরা সবাই সশস্ত্র গোষ্ঠী আরসার সদস্য বলে জানতে পেরেছি। ভোরে সবাই যখন ঘুমে থাকে ঠিক এ সময় আরসার ৪০-৫০ জনের অস্ত্রধারী একটি দল অতর্কিত হামলার উদ্দেশ্যে ক্যাম্পে প্রবেশ করে। এ সময় আরসাবিরোধী হিসেবে পরিচিত আরএসও তাদের প্রতিরোধ করলে এ গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। শোনা যাচ্ছে ঘুমন্ত আরএসওর সদস্যদের হত্যার জন্য ক্যাম্পে ঢুকেছিল আরসার সদস্যরা।

তিনি আরো বলেন- আরসা সবসময় রোহিঙ্গাদের কাছে প্রত্যাবাসন বিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং তারা মিয়ানমারের সরকারের হয়ে কাজ করে বলে দাবি করা হয়। এ কারণে ধারণা করা হচ্ছে আইসিসির প্রধান কৌঁসুলি ক্যাম্প পরির্দশন ঘিরে রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে এ হামলা।

ফারুক আহমেদ আরো বলেন- কে আরসা, কেআরএসও, সেটি বিষয় নয়। ক্যাম্পে কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চলবে না। যারাই অপরাধে জড়াবে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। হত্যাকারীদের ধরতে অভিযান চলছে। এর আগেও ক্যাম্পে মাদক ও অস্ত্র ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ এবং আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে একইভাবে গোলাগুলিতে অসংখ্য নিহতের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে উখিয়ার ১৮ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ‘দারুল উলুম নাদওয়াতুল ওলামা আল-ইসলামিয়াহ’ মাদ্রাসায় ঘুমন্ত শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর ব্রাশফায়ার করেছিল দুর্বৃত্তরা।

এ সময় তিনজন শিক্ষক ও এক ছাত্রসহ ছয়জন নিহত এবং কমপক্ষে ১২ জন আহত হন। কয়েকজনকে জবাই করে মৃত্যু নিশ্চিত করে হামলাকারীরা। এরপর একসঙ্গে দুজনের বেশি খুনের ঘটনা ঘটেনি।

বাইর থেকে ক্যাম্পে অস্ত্র সরবরাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অপরাধ বাড়ার নেপথ্যে রয়েছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র ক্যাম্পের অভ্যন্তরে নিয়ে যাওয়া। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা যোগসাজশে ক্যাম্পের বাইর থেকে অস্ত্র এনে নিজেদের গোষ্ঠী ভারি করে। ৬ জুলাই দুপুরে উখিয়া রাজাপালং ইউনিয়নের ফলিয়াপাড়া রাস্তার মাথা থেকে ক্যাম্প-৩, ব্লক-এ/১৪ এর দুদু মিয়ার ছেলে ফরিদ আলমকে (১৮) অস্ত্রসহ আটক করে উখিয়া থানা পুলিশ। উখিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী জানান, চট্টগ্রামের কেরানীহাট থেকে অস্ত্র নিয়ে ক্যাম্প-৩ এ দেয়ার জন্য নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে আটক করা হয়।

আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) বলছে, ক্যাম্পগুলোতে অস্ত্রের ব্যবহার, মাদক ব্যবসা, হত্যা ও অপহরণের ঘটনা বাড়লেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। গত বছরের জুন থেকে এ বছরের জুন পর্যন্ত ৩৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র ও শতাধিক গোলাবারুদসহ ১৬৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সময়ে ৪৮ জন খুন হন। বেশিরভাগ ঘটনায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী জড়িত। এসব ঘটনায় ১১৬ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

অপহরণের নেপথ্যে কারা: রোহিঙ্গা ক্যাম্প, টেকনাফের সদর, বাহারছড়া, হোয়াইক্যং, হ্নীলার বিভিন্ন এলাকা থেকে স্থানীয় ও রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ দাবির কৌশলে মেতেছে রোহিঙ্গা অপহরণকারীরা। টেকনাফের আলীখালি রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে গেল ৩ জুন ৫ রোহিঙ্গাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ দাবি করে সন্ত্রাসীরা। পরদিন একজনের হাতের কবজি কেটে বাকিদের জন্য ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। দুই দিন পর ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসে বাকি চার রোহিঙ্গা। এপিবিএনের তথ্য বলছে, এ পর্যন্ত ১৩৬ রোহিঙ্গাকে অপহরণের ঘটনায় ১৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ২৯ জন অপহরণকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এদিকে অন্যান্য ক্যাম্পের নিরাপত্তায় থাকা ১৬ এপিবিএনের অধিনায়ক অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক মো. হাসান বারী নূর বলেন- সন্ত্রাসীরা লোকজন অপহরণ করে পাহাড়ে নিয়ে যায়। অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করতে চায়। সে কারণে পাহাড় ঘেঁষে আমাদের যেসব চেকপোস্ট আছে সেগুলোতে তল্লাশি জোরদার করা হয়েছে। নিয়মিত অভিযানের পাশাপাশি সন্ত্রাসীদের অবস্থান শনাক্ত ও গতিবিধি নজরদারির জন্য ড্রোনও ব্যবহার করা হচ্ছে। অপরাধ দমনে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তৎপর রয়েছে।

১৪ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) অধিনায়ক ও অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক সৈয়দ হারুন অর রশিদ বলেন- বিশেষ করে মাদক ব্যবসা ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলো নানা ধরনের অপরাধে জড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত আছে।

জানা যায়, ৩৩টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নজরদারির জন্য ৮৫ ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করে দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোর চারপাশে নিরাপত্তা বেস্টনি ও টহলের জন্য রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করেছে। একটি ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ করেছে শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় (আরআরআরসি)। এছাড়াও ৩০টি চেকপোস্ট, নিরাপত্তা বেস্টনি, ওয়াকওয়ে বুঝিয়ে দিয়েছে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ।