ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় আওয়ামী লীগ-বিএনপি সমাবেশ

চরম ভোগান্তি মানুষের

রাজধানীর প্রবেশদ্বারে তল্লাশি : পরিবহন সংকট
চরম ভোগান্তি মানুষের

ব্যস্ততম নগরী ঢাকাকেন্দ্রিক বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্লাপাল্লি সভা-সমাবেশের আয়োজনের ঘটনা নতুন নয়। গতকালও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমাবেশ করেছে। তবে এসব সমাবেশকে কেন্দ্র করে ঢাকার বাসিন্দা, সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবী, খেটে খাওয়া ও অসুস্থ মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। জনগণের জন্য রাজনীতি হলেও দিনে দিনে জনভোগান্তিতে পরিণত হচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তারা বলছেন, গতকাল বুধবার সরকারি অফিস ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এরপরও প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল দেশের জনগণের ভোগান্তির কথা চিন্তা না করে, নিজেদের শক্তি-সামর্থ্যরে জানান দিতে বিদেশি কূটনৈতিকদের কাছে এক ধরনের মহড়া দেখানো হয়েছে। এই মহড়ায় রাজনৈতিক দলগুলো বিভিন্নভাবে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে পারলেও জনগণের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিয়েছে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর পান্থপথ, মিরপুর রোডের কলাবাগান এলাকা, মহাখালী, মিরপুর-১, গাবতলী, উত্তরা, বাড্ডা, বনানী ও মহাখালী এলাকায় গণপরিবহন সংকট ছিল। এসব সড়কে বাসের জন্য যাত্রীদের অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। জরুরি প্রয়োজনে যারা ঘরের বাইরে বের হয়েছেন তারা বাস-সিএনজি না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়েন।

কাজিপাড়া বাসস্ট্যান্ডে ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকা সালেহা বেগম জানান, অসুস্থ স্বামীকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল যাবেন। তবে বাসের জন্য অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে বলে ভাবছেন ফিরে যাবেন। তিনি বলেন, ‘আজ শুনেছি কীসের সমাবেশ তাই বাস নেই। সিএনজি কইরা যামু, টাকা নেই অতো...।’ ফার্মগেট মোড়ে অন্য দিনের তুলনায় গতকাল যানবাহন চলাচল কম। সিলেট, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও খুলনা অঞ্চলের দূরপাল্লার বাস ঢাকার প্রবেশদ্বার হানিফ ফ্লাইওভারে সাধারণ যাত্রী ঘণ্টার পর ঘণ্টা দুর্ভোগে পড়েন। কেউ কেউ ছোট ছোট যানে পথ ভেঙে ভেঙে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছেছেন। অনেকে হেঁঁটে গন্তব্যে পৌঁছেন। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বাড়তি ভাড়া গুনতে হয়েছে।

গত মঙ্গলবার থেকে গতকাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি সমাবেশকে ঘিরে ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে যাত্রীবাহী বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে তল্লাশি চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সদস্যরা। যাত্রীবাহী পরিবহনগুলোকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে না দেওয়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ। তবে পুলিশ বলছে, নিরাপত্তার স্বার্থেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়।

রাজধানীর রায়েরবাগ থেকে শেফালি বেগম তিন বছরের সন্তান নিয়ে শিশু হাসপাতালে যাবেন। বাসের অপক্ষায় বাচ্চা কোলে নিয়ে প্রায় দেড় ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি বলেন, বাস ঢাকায় ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না। দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করেও বাস না পেয়ে অবশেষে রায়েরবাগ থেকে হেঁটে রওনা হয়েছি। শিশু হাসপাতালে যাচ্ছি ডাক্তার দেখাতে।

দিনাজপুর থেকে সিরাজুল ইসলাম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাজধানীর কলাবাগানে যাচ্ছিলেন। আমিনবাজার চেকপোস্ট থেকেই হাঁটতে শুরু করেন তিনি। বললেন, এমনিতে তীব্র রোদ, তার ওপর এটা বাড়তি ভোগান্তি। পুলিশ অহেতুক তল্লাশির নামে বাসগুলোকে ঢাকায় ঢুকতে দিচ্ছে না। এটা যে কারণেই করা হোক সাধারণ মানুষকে হয়রানি ছাড়া কিছুই না।

বেসরকারি চাকরিজীবী সজল মিয়া যাবেন কারওয়ানবাজার। তিনি বলেন, আমাদের অফিসের গাড়ি বন্ধ করে দিয়েছে বলিয়াপুরে। পরে স্টিকার লাগিয়ে শহরে ঢুকেছি। অফিসে কখন পৌঁছাতে পারবেন তাও জানানে না সজল মিয়া।

মিরপুর বাংলা কলেজের শিক্ষার্থী শরিফুল আহম্মেদ বলেন, আমি কলেজে যাব বলে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি গাড়ি বন্ধ। তাই হেঁটে যাচ্ছি। মিরপুরের এক নম্বর ফুটওভার ব্রিজ পার হয়ে রিকশা নিয়ে কলেজে যান।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে গতকাল বিকালে শান্তি সমাবেশ করে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। অন্যদিকে সকাল থেকে পল্টন, কাকরাইল, নয়াপল্টন, ফকিরাপুল, মতিঝিল ও গুলিস্তান সমাবেশ করে বিএনপি। বিএনপির নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনের সড়ক বন্ধ থাকায় অনেককে ভোগান্তিতেও পড়তে হয়েছে। প্রেসক্লাবেও একই অবস্থা ছিল।

পল্টন মোড়ে দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশের সদস্য শামিম আহমেদ বলেন, যেসব বাস চলাচল করেছে, সেগুলো যেন ঠিকমতো চলাচল করতে পারে তা দেখাশোনা করছি। পল্টনের দিকে কোনো সড়ক বন্ধ ছিল না। কমবশি যা গাড়ি চলেছে, সেগুলো যাতায়াত করতে পেরেছে।

ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দুষ্কৃতকারী ও সুযোগসন্ধানীদের বিশৃঙ্খলা-নাশকতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি রোধে গোয়েন্দা নজরদারি এবং নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলমান রাখা হয়েছে। যে কোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স টিম, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রাখা হয়।

ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এনায়েত উল্লাহ বলেন, বাস পুরোপুরি বন্ধ না, চলেছে। তবে বিএনপির লোকজন অনেক সময় বাসে আগুন দেয়, যার কারণে বাস মালিকরা ভয়ে বাস একটু কম ছেড়েছে। বাস চলছে। কোনো সমস্যা হবে না যাত্রীদের। সকাল থেকে সব রুটে স্বাভাবিকভাবে বাস চলাচল করছে, কোনো বাধা পায়নি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত