শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের

বিএনপির ‘একদফা’ স্বপ্ন নয়াপল্টনের কাদা-পানিতে আটকে গেছে

প্রকাশ : ১৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে দেশের রাজনীতি। রাজধানীতে শক্তির মহড়া দিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে শান্তি সমাবেশ করছে ক্ষমতাসীনরা। আর নয়াপল্টনে সমাবেশ করে সরকার পতনের একদফা ঘোষণা দেয় বিএনপি। শান্তি সমাবেশ থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের নেতারা।

শান্তি সমাবেশে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির সরকার পতনে এক দফার স্বপ্ন নয়াপল্টনের কাদা-পানিতে আটকে গেছে। বিএনপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল, আজকেও কাঁথা-বালিশ নিয়ে অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছিল। আগেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল, ওই স্বপ্ন গরুর হাটে মরে গেছে।

গতকাল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ পাশের ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত শান্তি সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর জানেন? তাদের একদফা জানেন? বিএনপির একদফা হলো শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর আমাদের একদফা শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। নির্বাচন শেখ হাসিনার আমলেই হবে, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশ জনগণ শেখ হাসিনাকে ভালোবাসেন। তার নেতৃত্ব, সততা, উন্নয়ন ও পরিশ্রমকে পছন্দ করেন। বিএনপি জানে নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে, শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তায় ভেসে যাবে। তারা শেখ হাসিনাকে হিংসা করে। শেখ হাসিনার অপরাধ উন্নয়ন করেছে। শেখ হাসিনার অপরাধ ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বে।

তিনি বলেন, আমাদের এক দফা সংবিধান সম্মত নির্বাচন। এই লক্ষ্যকে সামনে রেখে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। কোনো বাধা দেবেন না, আমরা কাউকে আক্রমণ করতে যাব না। যারা বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, আপনারা চান ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। কিন্তু এই ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।

যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। তাদের সঙ্গে আমরা আপস করতে পারি না। আমরা ’৭১-এর চেতনার ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধীদের সঙ্গে আপস করতে পারি না। বঙ্গবন্ধুর রক্তের সঙ্গে বেইমানি করতে পারি না। গণতন্ত্রের শত্রুদের সঙ্গে আপস করতে পারি না।

দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ করে সেতুমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ খেলতে নামলে কোনো অপশক্তি সামনে দাঁড়াতে পারবে না। আপনারা প্রস্তুত হয়ে যান, একটানা কর্মসূচি চলবে। শোকের মাসে, শোকের কর্মসূচি পাশাপাশি জনসংযোগও চলবে। শোকের ভাব গম্ভীর্য যাতে নষ্ট না হয়, সেদিকেও নেতাকর্মীদের খেয়াল রাখতে বলেন তিনি। শিক্ষার্থীদের নিয়ে ছাত্র-সমাবেশ নারীদের নিয়ে মহিলা সমাবেশ করারও নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। সমাবেশে অন্যান্য বক্তারা বলেন, বিএনপি দেশের মধ্যে অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে সৃষ্টি করতে চায়। বিএনপি দেশের কোনো আইন কানুন মানে না। তারা অবৈধভাবে ক্ষমতায় যেতে চায়। বিএনপি হলো খুনি জিয়াউর রহমানের দল। জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সঙ্গে জড়িত। সেই দল আবারও ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। এদের বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। বিএনপির কোনো ষড়যন্ত্র সফল হবে না। দেশের মানুষ বিএনপিকে প্রত্যাখ্যান করেছে। যতদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে বাংলাদেশ থাকবে ততদিন দেশে মানুষ ভালো থাকবে। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। বিএনপির গণতান্ত্র হচ্ছে কারফিউ তন্ত্র।

বিএনপির একদফা দাবি ভুয়া মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলেন, তাদের একদফা দাবি অতীতের মতো ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। একদফার নামে ক্ষমতা যাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্রের পথ খুঁজছে বিএনপি। বিএনপি বিদেশিদের কাছে গিয়ে মিথ্যাচার করে দেশকে ছোট করছে।

বিএনপির ক্ষমতায় থাকাকালীন বাংলাদেশকে পরপর পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছিল। আমরা বিদেশিদের কাছে নয়, দেশের মানুষের কাছে যাব। বিএনপি ২০০১ সালে থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ২৬ হাজার নেতাকর্মী হত্যা করেছিল। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গ্রেনেড হামলা করেছিল। ষড়যন্ত্রের পথ পরিহার করে বিএনপিকে নির্বাচনে আসারও আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের নেতারা। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ, মাহবুব-উল-আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী, ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেন।