ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল

* বাংলাদেশের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন * প্রতিনিধিদের কাছে দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি রোহিঙ্গাদের
রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দল

কক্সবাজারের উখিয়া টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক পরিস্থিতি ঘুরে দেখেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল। প্রতিনিধি দলটি সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শন ও রোহিঙ্গাদের সঙ্গে আলাপ করে ক্যাম্প ব্যবস্থাপনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এজন্য বাংলাদেশের প্রশংসা করে সরকার ও প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন। গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় কক্সবাজারস্থ শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বৈঠক শেষে এমন তথ্য জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি গতকাল টানা ৯ ঘণ্টা ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন কক্সবাজারে। প্রতিনিধি দলটি গতকাল সকাল ৯টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছেন। এরপর যান উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। যেখানে সকাল ১০টা ৫০ মিনিট থেকে ৩টা পর্যন্ত ছিলেন। ওখান থেকে প্রতিনিধি দলটি আসেন কক্সবাজার শহরে। যেখানে প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার শহরে ফিরে বিকালে কক্সবাজারে কর্মরত আন্তর্জাতিক সংস্থা, শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রতিনিধি দলটি কক্সবাজার থেকে বিমানযোগে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন। এসব পরিদর্শনকালে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি যুক্তরাষ্ট্রের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া। তবে সন্ধ্যায় প্রতিনিধি দলটি শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয় ত্যাগ করার পর কথা বলেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের গুরুত্বপূর্ণ অংশিদার। ২০১৭ সাল থেকে এখানে আন্তর্জাতিক, দেশি-বিদেশি যেসব সংস্থা কাজ করেন তাদের অনেক সংস্থা যুক্তরাষ্ট্রের সরকারের সহায়তা পান। বিশেষ করে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা যে খাদ্য সরবরাহ করে তাতে দেশটির গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা রয়েছে। প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে বৈঠকে এসব বিষয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে। বৈঠকে প্রতিনিধি দলকে বিশ্ব খাদ্য সংস্থা খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ার বিষয়টি অবিহত করেছেন উল্লেখ করে মিজানুর রহমান জানান, এ পর্যন্ত ২ বার রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা কমানো হয়েছে। প্রথমে ১২ ডলার থেকে ১০ ডলার এবং ১ জুন থেকে ৮ ডলার করা হয়েছে। বিষয়টি জানার পর প্রতিনিধি দলটি সাহায্য ঘোষণার আশ্বাস দিয়েছেন।

তিনি জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পে গিয়ে সার্বিক পরিস্থিতি দেখেছেন। প্রতিনিধি দলটি ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার, পুষ্টি কেন্দ্র, খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন। কথা বলেছেন রোহিঙ্গাদের সঙ্গে। এসব দেখে ক্যাম্পের সার্বিক ব্যবস্থাপনার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছেন প্রতিনিধিরা। এজন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের ঊর্ধ্বতন মহলের সঙ্গে আলোচনা করবেন। ওখানে বিস্তারিত আলোচনা করবেন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধি দলটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়া ছাড়াও দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক সহকারী সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু, ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস ও দক্ষিণ এশিয়ায় শরণার্থীবিষয়ক সমন্বয়কারী ম্যাককেঞ্জি রোয়েসহ ১০ সদস্য রয়েছেন।

দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি রোহিঙ্গাদের : কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের কাছে দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের দাবি জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আলাপকালে রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আশ্রিত জীবন অনেকটা বন্দি জীবন। এমন জীবন চাই না, দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই। এজন্য মিয়ানমারকে জোর চাপ প্রয়োগের মাধ্যমে স্বদেশে ফেরাতে যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো ভূমিকা রাখার অনুরোধ জানিয়েছেন রোহিঙ্গারা।

এই সময় প্রতিনিধি দলের সদস্যরা রোহিঙ্গাদের কাছে ক্যাম্পের শিক্ষা ব্যবস্থা, খাদ্য, নিরাপত্তা বিষয়েও আলাপ করেছেন। পরিদর্শনকালে প্রতিনিধি দলের প্রধান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার হাতে রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়েরের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা একটি আবেদনও দেন। সেখানেও প্রত্যাবাসনের দাবি জানানো হয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গতকাল সকাল ৯টায় বিমানযোগে কক্সবাজার পৌঁছেন। যেখান থেকে সড়ক পথে যাত্রা দেন উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের দিকে। গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে প্রতিনিধি দল উখিয়া বালুখালী ৯ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইউএনএইচসিআর- পরিচালিত রোহিঙ্গাদের রেজিস্ট্রেশন সেন্টার পরিদর্শন করেন। ওখান থেকে হেঁটে এরপর একে একে পুষ্টি কেন্দ্র, ডব্লিউএফপি পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রের কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

তারপর ১১ নাম্বার ক্যাম্পের কমিউনিটি সেন্টারে গিয়ে একদল রোহিঙ্গা নারী-পুরুষের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে ১০ জন নারী ও ১০ জন পুরুষ উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক শেষে আলাপকারি ১১ নাম্বার ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মোহাম্মদ ইসমাইল জানান, প্রতিনিধি দলটি ক্যাম্পের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চেয়েছে। তাদের জানানো হয়ে ক্যাম্পে শিক্ষার ব্যবস্থা কম। অল্প লেখা পড়ার সুযোগ থাকলেও উচ্চ শিক্ষার সুযোগ নেই। নিরাপত্তার বিষয়ে জানতে চাইলে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যাপ্ত না বলে জানানো হয়েছে।

মো. ইউসুফ নামের এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধিরা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে রোহিঙ্গাদের মতামত জানতে চেয়েছে। রোহিঙ্গারা ক্যাম্পের আশ্রিত জীবনকে বন্দি জীবন বলে জানিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে মিয়ানমারে ফেরত যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এজন্য যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহল মিয়ানমারের ওপর চাপ প্রয়োগের অনুরোধও জানানো হয়েছে।

মোহাম্মদ ইদ্রিস নামের এক রোহিঙ্গা জানান, প্রতিনিধি দলকে খাদ্য সহায়তা কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছেন। খাদ্য সহায়তা যেন আগের মতো দেয়া হয় এমন দাবিও জানানো হয়।

ছৈয়দ নুর নামের এক রোহিঙ্গা জানান, আলাপকালে রোহিঙ্গারা তাদের নানা দাবি-দাওয়া তুলে ধরেন। এর সামাধানের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রতিনিধিরা। প্রতিনিধি দলটি পরিদর্শনকালে তাদের পিছু নেন রোহিঙ্গাদের সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একদল রোহিঙ্গা। দীর্ঘ সময় পর তারা উজরা জেয়াকে একটি চিঠি হস্তান্তর করেন।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জোবায়ের জানান, প্রতিনিধি দলটির কাছে তারা নিহত মাস্টার মুহিবুল্লাহর সংগঠনের নেতা পরিচয় দেয়ার পর কথা বলেন। এ সময় যে চিঠিটি দেয়া হয়েছে সেখানে রোহিঙ্গাদের নানা দাবি রয়েছে। বিশেষ করে আশ্রয় প্রদানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে দ্রুত সময়ের মধ্যে স্বদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানানো হয়।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত