ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, কাম্য অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন

পাঁচ সিটিতে বিএনপির ৩৬ বিজয়ী প্রার্থী
তত্ত্বাবধায়ক সরকার নয়, কাম্য অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান, জাপান, জার্মানি- সবারই আগ্রহের কেন্দ্রে যেন বাংলাদেশ। সবার চাওয়া আগামী জাতীয় নির্বাচন যেন অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হয়। এই চাওয়ার সাথে বাংলাদেশের জনগণের আকাঙ্ক্ষাও সমান্তরাল। এমনকি সরকারও বলছে, তারাও অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়, চায় সব দল তাতে অংশগ্রহণ করুক। সবার চাওয়া অভিন্ন, এখন কাজ হলো সেই চাওয়ার বাস্তবায়ন।

রাজনৈতিক দলগুলোর নিস্পৃহতার সুযোগে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে বাইরের দেশগুলোর আগ্রহ বেশি মনে হচ্ছে। ভূ-রাজনৈতিক কারণে এমনিতেই বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। গত একদশকের অর্থনৈতিক সাফল্যও বাংলাদেশের প্রতি অনেকের আগ্রহ বাড়িয়েছে। ফলে বাংলাদেশ ঘিরে এখন আন্তর্জাতিক শক্তিগুলোর নানা মেরুকরণ চলছে।

সমস্যা হলো, বিএনপি মনে করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের সবার মুখে নিরপেক্ষ নির্বাচন থাকলেও, কারো মুখেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। কারণ, তত্ত্বাবধায়ক সরকার তো বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশে নেই। বাংলাদেশের মতো অন্য কোনো দেশে রাজনীতিবিদদের মধ্যে এত অবিশ্বাস, সন্দেহ নেই।

আরো একটি নির্বাচন বর্জন বা বয়কট বা প্রতিহত করার সামর্থ্য বিএনপির আছে কি না, সেই প্রশ্নটি এখন সবার মনে। বিএনপি নামকাওয়াস্তে আন্দোলন করলেও এই আন্দোলনে যে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে দাবি আদায় করা যাবে না, সেটা তারা ভালো করেই জানে। বিএনপি যেন অপেক্ষা করছে, কোনো অদৃশ্য শক্তি তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে।

গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত যেমন নির্বাচন, তেমনি নির্বাচনকে ফলপ্রসূ করে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। একটি দেশের সকল রাজনৈতিক দল যখন নির্দিষ্ট এজেন্ডা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাপূর্ণ আবহে নির্বাচনে অংশ নেয়, তখনই তা সফল নির্বাচন বলে গণ্য হয়।

সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করছে এদেশের নির্বাচন নিয়ে। তবে পাঁচ সিটি নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ও ফলাফল বর্তমান সরকারের সাফল্য হিসেবেই দেখা দিয়েছে।

সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে যে শঙ্কা জাতীয় মনে হানা দিচ্ছিল, তা কেটে গেছে অনেককটাই। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ছাড়াও জাপা, ইসলামী আন্দোলন ও জাকের পার্টির স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ নির্বাচন প্রশ্নাতীতভাবে গ্রহণযোগ্য করেছে। এমনকি বরিশালে বিএনপির ছায়া প্রার্থী হিসেবে ছিলেন বরিশালের প্রয়াত বিএনপিদলীয় মেয়র আহসান হাবিব কামালের ছেলে কামরুল আহসান ওরফে রূপণ।

মার্কিন উপসহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আফরিন আখতার গত শনিবার রাজধানীতে বাসসের কূটনৈতিক প্রতিবেদক তানজিম আনোয়ারকে বলেন, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে কি না, সে বিষয়ে আমরা কোনো মন্তব্য করছি না। আমরা (বাংলাদেশে) নির্বাচনের পরিবেশের ওপরই গুরুত্ব দিচ্ছি।

তিনি বলেন, নির্বাচনে তারা অংশ নেবে কি নেবে না রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে এবং নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হতে হবে কি না আমরা এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করছি না।

বহির্বিশ্বের বার্তা অনেকটাই স্পষ্ট এখানে। বাইরের শক্তি শুধু পর্যবেক্ষণ করবে অংশগ্রহণমূলক, অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হচ্ছে কি না। কোনো দল অংশগ্রহণ করল, না করল এই বিষয়ে তাদের মনোযোগ অনেকটাই শিথিল।

সামনে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন, তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি বেশ পুরোনো, জনগণের সাপোর্টও আছে কিছু। যদিও দলটির ভেতরে ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে যে অন্তঃকোন্দলের কথা প্রায় সবারই জানা। এমন অবস্থায়, আবারো নির্বাচন বর্জন করলে পরবর্তী সময়ে নিজেদের অস্তিত্ব সংকটে পড়ার বিষয়টি এখনই ভাবতে হবে বিএনপিকে।

জানা যায়, সর্বশেষ পাঁচ সিটিতে বিএনপির দুইজন মেয়র প্রার্থী অংশ নিয়ে পরাজিত হন। কিন্তু কাউন্সিলর পদে ১১৯ জন অংশ নিয়ে ৩৬ জন কাউন্সিলর বিজয়ী হন।

গাজীপুর সিটি ভোটে স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন পেয়েছেন ২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৩৪ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থী আজমত উল্লাহ খান পেয়েছিলেন ২ লাখ ২২ হাজার ৭৩৬ ভোট। গাজীপুরে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ২৯ অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী হন ১৩ জন, পরাজিত ১৬ জন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ২৯ জন প্রার্থী।

বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ পেয়েছেন ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন সৈয়দ ফয়জুল করিম পেয়েছেন ৩৪ হাজার ৩৪৫ ভোট। এ সিটিতে মোট ভোটার উপস্থিতি ৫১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী ছিল ১ জন। কাউন্সিলর পদে ১৮ জন অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী হন ৯ জন, পরাজিত ৯ জন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ১৮ জন প্রার্থী।

খুলনা সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেক পেয়েছেন ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮২৫ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মো. আ. আউয়াল রহমান পেয়েছেন ৬০ হাজার ৬৪ ভোট। খুলনা সিটিতে মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে আটজন অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী কেউ হননি। পরাজিত আটজন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন আট প্রার্থী।

সিলেট সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোহাম্মদ আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী পেয়েছেন ১ লাখ ১৯ হাজার ৯৯১ ভোট। প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী জাতীয় পার্টির প্রার্থী মো. নজরুল ইসলাম পেয়েছেন ৫০ হাজার ৮৬২ ভোট। মেয়র পদে বিএনপি একজন প্রার্থী ছিলেন। কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন অংশগ্রহণ করে। বিজয়ী হন আটজন, পরাজিত হন ৩০ জন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ৩৮ প্রার্থী।

রাজশাহী সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খাইরুজ্জামান লিটন পেয়েছেন ১ লাখ ৬০ হাজার ২৯০ ভোট। মুরশিদ আলম ১৩ হাজার ৪৮৩ ভোট ও লতিফ আনোয়ার ১১ হাজার ৭১৩ ভোট। জাতীয় পার্টির সাইফুল ইসলাম ১০ হাজার ২৭২ ভোট। এই সিটি নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন মোট ভোটারের শতকরা ৫৬.২০ ভাগ। মেয়র পদে বিএনপি প্রার্থী না থাকলেও কাউন্সিলর পদে ২৬ জন অংশগ্রহণ করেন। বিজয়ী হন ছয়জন, পরাজিত ২০ জন। বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন ১৬ জন প্রার্থী।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত