ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী

উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে মহাপরিকল্পনা নেয়ার নির্দেশ

উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে মহাপরিকল্পনা নেয়ার নির্দেশ

দক্ষিণ এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঢাকা ওয়াসার দাশেরকান্দি পয়ঃশোধনাগারের উদ্বোধন ও পাগলা পয়ঃশোধনাগারের পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে পয়ঃশোধনাগার (এসটিপি) উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে ঢাকার চার পাশের নদীগুলো দূষণের হাত থেকে রক্ষা পাবে। একই সঙ্গে সারাদেশে বিভাগীয় শহর, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা নিশ্চিতে মহাপরিকল্পনা তৈরি করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।

বিশ্বব্যাংক এবং এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) সহায়তায় পাগলা স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের পুনর্গঠন ও সম্প্রসারণের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। এটির পয়ঃনিষ্কাশন ক্ষমতা ২০ কোটি মেট্রিক টন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ঢাকা, রাজশাহী ও চট্টগ্রামে বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত স্যুয়ারেজ ব্যবস্থাপনার জন্য উদ্যোগ নিয়েছে। ‘আমার গ্রাম, আমার শহর’ প্রকল্পের অধীনে সরকার বিশুদ্ধ পানি এবং উন্নত স্যুয়ারেজ সুবিধা সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চায়। গ্রামের মানুষ তাদের নাগালের মধ্যে সব শহুরে সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

দেশবাসীকে পানি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, অপ্রয়োজনে পানি এবং বিদ্যুৎ ব্যবহার করবেন না, দয়া করে এগুলো ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন। আপনিও এতে উপকৃত হবেন, কারণ এতে বিলও কম হবে।

দাশেরকান্দি শোধনাগার প্ল্যান্ট, যা খিলগাঁও থানার অন্তর্গত, আফতাবনগর সংলগ্ন এবং গুলশান (একাংশ), বনানী, তেজগাঁও, নিকেতন, মগবাজার, মালিবাগ, আফতাবনগর, বাড্ডা, কলাবাগান, পান্থপথ, ধানমন্ডি (একাংশ) ও হাতিরঝিলসহ রাজধানীর বেশ কয়েকটি এলাকার পয়ঃশোধনের ব্যবস্থা করবে।

রাজধানীর আফতাবনগরে বালু নদীর তীরে প্রায় ৬২ একর জায়গাজুড়ে নির্মিত অত্যাধুনিক এই শোধনাগারটি দেশের পয়ঃশোধন খাতে একটি মাইলফলক প্রকল্প। এটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা।

এ সময় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মুহাম্মদ ইব্রাহিম ও বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এবং ঢাকা পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষের (ওয়াসা) ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান বলেন, এ ধরনের একক পয়ঃশোধনাগার প্ল্যান্ট দক্ষিণ এশিয়ায় বৃহত্তম এবং এটিই সেরা। প্ল্যান্টটি পরিবেশবান্ধব, টেকসই ও জনবান্ধব। এর ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, নর্দমা থেকে আনা পানি প্ল্যান্টের মাধ্যমে পরিশোধিত করে বালু নদীতে পড়ছে, যা নদীর পানির গুণগতমান বাড়াবে। এমনকি এই পানি সুপেয় করে তোলা সম্ভব হবে। আর এখান থেকে পাওয়া ফ্লাই অ্যাশ দিয়ে তৈরি হবে সিমেন্ট। এ জন্য প্রয়োজনীয় ফ্লাই অ্যাশ, পয়ঃশোধনের উপজাত সিমেন্ট কারখানায় বিক্রি করা হবে। সেটি করা হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে।

জানা গেছে, দাশেরকান্দি প্ল্যান্টের দৈনিক ৫০ লাখ টন পয়ঃনিষ্কাশন শোধনের ক্ষমতা রয়েছে, যা রাজধানীর মোট পয়ঃনিষ্কাশনের ২০ থেকে ২৫ শতাংশ। রাজধানীর আশপাশের নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে এ প্ল্যান্ট মুখ্য ভূমিকা পালন করবে। চীনের অর্থায়নে ৩ হাজার ৪৮২ দশমিক ৪২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৬২ দশমিক ২ একর জমিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হয়। ব্যয়ের মধ্যে ১ হাজার ১০৬ দশমিক ৪২ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে, ১০ কোটি টাকা ওয়াসার তহবিল থেকে এবং অবশিষ্ট ২ হাজার ৩৬৬ কোটি টাকা চীনের এক্সপোর্ট-ইমপোর্ট ব্যাংক থেকে প্রকল্প সহায়তা হিসেবে এসেছে। ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকার শতভাগ পয়ঃনিষ্কাশন শোধনের জন্য পাগলা, উত্তরা, রায়েরবাজার এবং মিরপুর এলাকায় আরো চারটি পয়ঃনিষ্কাশন শোধনাগার নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারের একটি মহাপরিকল্পনা রয়েছে। এ বর্জ্যের ৯০ শতাংশ পাইপলাইন কভারেজের মাধ্যমে এবং অবশিষ্ট ১০ শতাংশ বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত