ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপার

বন্দর নগরীতে বাড়ছে দুর্ঘটনা

প্রকাশ : ১৪ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  তামীম রহমান, চট্টগ্রাম

ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারে চট্টগ্রাম নগরীতে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। এতে প্রচুর হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। দুর্ঘটনার শিকার বেশিরভাগই পথচারী। ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা পারাপারেই তারা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের কোনো ব্যবস্থা নেই। একমাত্র সচেতনতাই পারে এই দুর্ঘটনা এড়াতে। সম্প্রতি এক গবেষণায় চট্টগ্রাম নগরীতে সড়ক দুর্ঘটনার এই চিত্র পাওয়া গেছে। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী তথা পথচারী, মোটরসাইকেলচালক এবং সাইকেল চালক। ২০২১ সালে চসিক এলাকায় ৯৫ জন নিহতের মধ্যে ৮২ শতাংশই ছিলেন পথচারী। আর ১১ শতাংশ মোটরসাইকেল চালক, ২ শতাংশ সাইকেল আরোহী এবং বাকি ৫ শতাংশ যানবাহন ব্যবহারকারী। জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিটের সহযোগী বৈজ্ঞানিক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়ার গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে। গত বুধবার চসিক কনফারেন্স রুমে আয়োজিত রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডির ফলাফলে এ তথ্য জানানো হয়। সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশের (সিআইপিআরবি) সহায়তায় চসিক এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে। গবেষক ডা. শিরিন ওয়াধানিয়া জানান, ২০২১ সালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেমনে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর ক্ষেত্রে ৯৫ শতাংশ দায়ী তিনটি শ্রেণি। যাদেরকে গবেষণায় ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তা ব্যবহারকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এরা হলেন পথচারী, মোটরসাইকেল চালক এবং সাইকেল চালক। গবেষণা মতে ৪০ শতাংশ ক্ষেত্রে যানবাহনগুলো গতিসীমা অতিক্রম করে। আর গতিসীমা অতিক্রম করার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি ৪৮ শতাংশ হারে দেখা যায় বাসের ক্ষেত্রে। মোটরসাইকেল চালকদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ৬৮ শতাংশ এবং আরোহীদের মধ্যে যথাযথ নিয়মে হেলমেট ব্যবহারের হার মাত্র ২০ শতাংশ। যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ১৫ শতাংশ। এছাড়া যাত্রী ও বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহৃত যানবাহন ব্যবহারকারীদের মধ্যে সিটবেল্ট ব্যবহারের প্রবণতা নেই বললেই চলে। ভারী যানবাহনের চালকদের ক্ষেত্রে সিটবেল্ট ব্যবহারের হার মাত্র ৩ শতাংশ। যানবাহনে যাতায়াতকারী শিশুদের মধ্যে কাউকেই চাইল্ড-সিট তথা চাইল্ড রেস্ট্রিয়েন্ট ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটির (বিআইজিআরএস) অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার সিআইপিআরবি’র সঙ্গে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের অংশ হিসেবে চসিক এলাকায় পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে।

২০২২ সালের মে থেকে চসিক আওতাভূক্ত নির্বাচিত এলাকার ইতোমধ্যে ২ রাউন্ড তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে। অনুষ্ঠানে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশের পক্ষে ডা. সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার উদ্দেশ্যগুলো তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যের চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহম্মদ তৌহিদুল ইসলাম বলেন, টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করার অন্যতম শর্ত সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আর সড়ক-সংঘর্ষ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য দুর্ঘটনার সঠিক তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট অংশীজনরা এসব তথ্য-উপাত্ত যথাযথভাবে কাজে লাগিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারবে। সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চসিকের গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা উল্লেখ করেন তিনি। বিআইজিআরএসে অংশগ্রহণের মাধ্যমে চসিক সড়ক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) ফয়সাল মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামের সড়কগুলো নিরাপদ ও সচল রাখতে সচেষ্ট রয়েছে। তবে, ট্রাফিক বিভাগের একার পক্ষে নিরাপদ সড়ক গড়া সম্ভব নয়, পুলিশের পাশাপাশি সকল অংশীজনকে নিয়ে সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিআইপিআরবির রোড সেফটি প্রজেক্টের ম্যানেজার কাজী বুরহান উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চসিকের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মনিরুল হুদারসহ বিআরটিএ, ফায়ার ব্রিগেড, সড়ক ও মহাসড়ক বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, যাত্রী কল্যাণ সমিতির প্রতিনিধি এবং বিআইজিআরএসের অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা।