ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল

৯৮ ভাগ কাজ শেষ : বাড়তি টোল আদায় নিয়ে শঙ্কা

৯৮ ভাগ কাজ শেষ : বাড়তি টোল আদায় নিয়ে শঙ্কা

কর্ণফুলী টানেল নামে পরিচিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের কাজ একেবারে শেষের পথে। ৯৮ ভাগের বেশি কাজ শেষ হওয়ার পর এখন চলছে পূর্ত কাজ। যেখানে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম স্থাপনসহ নানা ধরনের কাজ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার নির্ধারণ করা হয়েছে টোল হার। তবে এই টোল হার নিয়ে যানবাহন মালিকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকের মতে টোল হার যথেষ্ট। এতে যানবাহন পারাপার করতে বহন করতে হবে বাড়তি ব্যয়। সে ক্ষেত্রে টানেল এড়িয়ে শাহ আমানত সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল হতে পারে। এতে টানেল থেকে রাজস্ব আয়ও বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। তবে টানেলে টোল হার নির্ধারণ কাজে যুক্ত এক কর্মকর্তা জানান, শাহ আমানত সেতুর চেয়ে অন্তত ১০ গুণ বেশি টোল হার টানেলে। তবে শাহ আমানত সেতুর চেয়ে টানেল দিয়ে যানবাহনগুলো অনেক দ্রুত দক্ষিণ চট্টগ্রামে পৌঁছতে পারবে। তাই যানবাহনগুলো টানেল এড়িয়ে শাহ আমানত সেতু দিয়ে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গেল বছর প্রস্তাবিত টোল হারই চূড়ান্তভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। টানেল যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার দিন থেকে এই টোল হার কার্যকর হবে। এখনো টানেল উদ্বোধনের দিনক্ষণ ঠিক হয়নি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী আভাস দিয়েছেন নির্বাচনের আগে চালু হবে দেশের প্রথম টানেল। সে ক্ষেত্রে চলতি বছরের শেষ দিকে টানেল খুলে দেয়া হবে তা অনেকটা নিশ্চিত। ১৩ জুলাই যানবাহনের শ্রেণি অনুযায়ী টোল হার চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে সেতু বিভাগ। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারাকে যুক্ত করতে কর্ণফুলী নদীর নীচ দিয়ে নির্মিত এই টানেলে মোটরসাইকেল বা দুই চাকার কোনো যান চলাচল করতে পারবে না। এতে বলা হয়েছে, তিন দশমিক ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু টানেলে সর্বনিম্ন টোল ২০০ টাকা। প্রাইভেটকার পারাপারে এই টোল দিতে হবে। প্রতিবার পিকআপ পারাপারে টোল লাগবে ২০০ টাকা। মাইক্রোবাসের টোল ২৫০ টাকা। ৩১ আসনের কম বাসের টোল ৩০০ টাকা। ৩২ আসনের বেশি বাসের টোল ৪০০ টাকা। তিন এক্সেল বিশিষ্ট বড় বাসের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০০ টাকা। পাঁচ টন পর্যন্ত পণ্য বহনে সক্ষম ট্রাকের টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৪০০ টাকা। আট টনের ট্রাক পারাপারে ৫০০ টাকা এবং ১১ টনের ট্রাকে ৬০০ টাকা টোল দিতে হবে। তিন এক্সেলের ট্রেইলারে টোল লাগবে ৮০০ টাকা। চার এক্সেলের ট্রেইলারে দিতে হবে এক হাজার টাকা। পরবর্তী সময়ে প্রতি এক্সেলের জন্য বাড়তি ২০০ টাকা দিতে হবে।

এদিকে কর্ণফুলী আমানত শাহ সেতুর তুলনায় যানবাহনের শ্রেণি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু টানেলে আড়াই থেকে ছয় গুণ টোল দিতে হবে। আমানত শাহ সেতুতে প্রাইভেট কারের টোল ৭৫ টাকা। সেতুতে ৩১ আসনের কম বাসের টোল ৫০ টাকা। টানেলে তা ৩০০ টাকা। ফলে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই টানেলকে প্রযোগিতায় পড়তে হবে সেতুর সঙ্গে। যদিও সেতুর তুলনায় টানেলে কম সময়ে যানবাহন পারাপার হতে পারবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সম্ভাব্যতা সমীক্ষার তথ্য অনুযায়ী, টানেল চালু হওয়ার পর ২০২৫ সালে গড়ে প্রতিদিন ২৮ হাজার ৩০৫টি যানবাহন চলাচল করবে। এ ছাড়া ২০৩০ সালে যানবাহন চলাচলের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৭ হাজার ৯৪৬টি এবং ২০৬৭ সালে যানবাহনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে প্রতিদিন গড়ে ১ লাখ ৬২ হাজার।

চট্টগ্রাম নগরী থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামে নিয়মিত মাইক্রোবাস নিয়ে চলাচল করেন গিয়াস উদ্দিন। তিনি বলেন, শাহ আমানত সেতু দিয়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা টোল দিয়ে পার হতে পারি। সেখানে টানেল দিয়ে পার হতে টোল দিতে হবে প্রায় ৩০০ টাকা। বাড়তি টোল এড়াতে শাহ আমানত সেতু দিয়েই চলাচল করতে হবে। আমা করছি টানেল চালুর আগেই চালকদের দাবির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

টানেলে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ না থাকা নিয়ে বাইকাররা হতাশা প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, প্রযুক্তি বা যুগের কল্যাণে মোটরসাইকেল এখন গুরুত্বপূর্ণ সঙ্গী। টানেলে মোটলসাইকল চলাচলের সুযোগ দেয়া খুবই জরুরি। আশা করছি পদ্মা সেতুর মতো টানেলে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ বিলম্বে হলেও দেয়া হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত