ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আ. লীগ বিএনপি জাপা ও জামায়াতের সঙ্গে ইইউ’র বৈঠক

নিজস্ব অবস্থানে অনড় রাজনৈতিক দলগুলো

নিজস্ব অবস্থানে অনড় রাজনৈতিক দলগুলো

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে দেশে বিদেশি কূটনৈতিকদের তৎপরতা বেড়েছে। এরই ধারাহিকতায় গতকাল শনিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) তথ্যানুসন্ধানী প্রতিনিধি দল ক্ষমতাসীন দল আওয়া লীগ ও সংসদের বাহিরের রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির (জাপা) শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। এছাড়া নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেও গতকাল বৈঠক করেছে ইইউ। তবে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রশ্নে তাদের আগের অবস্থানে অনড় রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দলগুলো তাদের অবস্থানে অনড় থকলেও ইইউ তথ্যানুসন্ধানী প্রতিনিধি দল জানিয়েছে, তারা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায়। ইইউ মিশনের প্রতিনিধিরা মনে করেন, দলগুলো সমঝোতার মনোভাব নিয়ে নিজেদের মধ্যে অলোচনা করে একটা নির্বাচনবান্ধব পরিবেশ তৈরি করলে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সহজতর হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে এসেছে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সঙ্গে তারা কথা বলেছে। এখানে মূলত আমাদের অঙ্গীকার এবং তাদের চাওয়া হচ্ছে বাংলাদেশে একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। তিনি বলেন, আমরাও বলেছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনা ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে করা সম্ভব।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্বাচন দেখতে চায়। তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে আশ্বস্ত হয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের সঙ্গে কী কথা হয়েছে, আমরা তা বললাম। বিএনপির সঙ্গে কী কথা হয়েছে, তা নিয়ে আমরা কেন বিতর্ক করতে যাব? সেটা তাদের ব্যাপার।

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তারা আগামী নির্বাচন দেখতে চায়।

সংলাপ নিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সংলাপ নিয়ে প্রতিনিধি দল কোনো কথা বলেনি। এমনকি তত্ত্বাবধায়ক সরকার কিংবা সংসদ বিলুপ্তির বিষয় নিয়েও প্রতিনিধি দল কিছু যানতে চাননি।

তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন হবে। এখানে পার্লামেন্ট বিলুপ্তির প্রশ্নই ওঠে না। সরকারের পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। তত্ত্বাবধাক সরকারের প্রশ্নই ওঠে না।

এদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। বৈঠক শেষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ইইউ’র প্রাক-নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধি দল বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি না জানতে চেয়েছে। আমারা আমাদের বক্তব্য তাদের জানিয়েছি।

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে দেশে ও সারা বিশ্বের আগ্রহ কেন? কেন ইইউ’কে এখানে এসে বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে মতামত দিতে হচ্ছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য কোনো দেশে তো তাদের যেতে হচ্ছে না।

স্বাভাবিকভাবে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন যে প্রশ্নবিদ্ধ, গ্রহণযোগ্য না, আর এটার ওপর ভিত্তি করে সারা বিশ্ব আজ বাংলাদেশের ওপর নজর দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, এজন্য তারা বাংলাদেশে এসেছেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের নির্বাচন এত বেশি প্রশ্নবিদ্ধ যে- তারা জানতে চাচ্ছেন, আগামীতে নির্বাচন জনগণের ভোটের মাধ্যমে সম্ভব হবে কি হবে না। আমাদের পক্ষ হতে সবসময় বলে আসছি, শুধু আমরা না, বাংলাদেশের জনগণ যেটা বলছে, সারা বিশ্ববিবেক বলছে, এই সরকার ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের অধীনে নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না, সম্ভবও নয়।

এই সরকার এখন থেকেই ভোট চুরি শুরু করেছে, তা ইইউকে অবগত করেছেন জানিয়ে বিএনপির এই নেতা বলেন, ডিসিদের পোস্টিং হচ্ছে, পুলিশের পোস্টিং হচ্ছে, টিএনওদের পোস্টিং হচ্ছে, বিএনপির নেতাদের গ্রেপ্তার চলছে। হাত কেটে ফেলা হচ্ছে। বিএনপির সমাবেশে আসতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এটা তো অব্যাহতভাবে চলছে। তারপর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিচারকে ত্বরান্বিত করে সাজা দিয়ে তারা যেন নির্বাচন করতে না পারে, এসব কাজগুলো এখনই চলছে। অর্থাৎ, ভোট চুরি প্রত্যেক দিন চলছে বাংলাদেশে। শুধু ভোটের দিন নয়, এখন ভোট চুরি চলছে, এবং আগামীতেও নিজেদের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করে তারা জোর করে ক্ষমতায় যাবে, জনগণকে বাইরে রেখে। এই বিষয়গুলো পরিষ্কার। স্বাভাবিকভাবে এ বিষয়গুলো আলোচনায় এসেছে। এগুলো আলোচনা হয়েছে। আমরা বলেছি।

এদিকে প্রতিনিধি দলের সদস্যদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি শীর্ষ নেতাদের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের দলটির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেছেন, আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। দেশের মানুষও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায়। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা অনেক বেশি। রাজনৈতিক সমস্যা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করতে হবে। আলোচনার মূল উদ্যোগ সরকারের পক্ষ থেকেই নিতে হবে।

মো. মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, সংলাপ ছাড়া সমাধান হবে না। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একদফা নিয়ে আছে। বিএনপি সরকারের পদত্যাগ চায়। আর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচন চায়। জাতীয় পার্টির একদফা হলো আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে সরকারকেই সংলাপের উদ্যোগ নিতে হবে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তাদের আরো একটি প্রতিনিধি দল আগামী ২৩ জুলাই বাংলাদেশে আসবে। তারাও বিভিন্ন দলের সঙ্গে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের স্বার্থে আলোচনা করবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দল আগামী নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন। তারা নির্বাচনের বিষয়েই কথা বলেছেন।

অন্যদিকে জামায়াত ইসলামীর প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইইউ প্রতিনিধি দল।

বৈঠকে অংশ নিতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহেরের নেতৃত্বে চার সদস্যের প্রতিনিধি দল গুলশানে ইইউ কার্যালয়ে যান। বৈঠকে জামায়াতের প্রধান এজেন্ডা ছিল দলীয় সরকার নয় নির্বাচনকালীন কেয়ারটেকার সরকারব্যবস্থার যৌক্তিকতা। এছাড়া মামলা, নির্যাতন-নিপীড়ন ও হত্যার কাগুজে তথ্য-প্রমাণ, নিবন্ধন বাতিলের পাঁয়তারাসহ নির্বাচনবিমুখ করতে রাজনৈতিক অধিকার সংকুচিত করার বিষয়টি বৈঠকে তুলে ধরেছে এই দলটি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত