দফার রাজনীতির আবর্তে বিএনপি

প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগে বাধ্য করতে এবং নিরপেক্ষ সরকারের দাবিতে একের পর এক দফা দিচ্ছে বিএনপি। দফার রাজনৈতিক আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি। দলটির দফাভিত্তিক আন্দোলন করার মতো সাংগঠনিক দক্ষতা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে সংশয় দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বিএনপির বর্তমান সাংগঠনিক দক্ষতা দিয়ে সরকার পতনের স্বপ্ন বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। বিভিন্ন সভা-সমাবেশে বিএনপির নেতারা যেভাবে আওয়ামী লীগ সরকারবিরোধী বক্তব্য দেন, রাজপথে তার কোনো বহিঃপ্রকাশ ঘটে না। তাদের এক দফা কর্মসূচি নিয়েও নানা প্রশ্ন রয়েছে। কত দিনের মধ্যে এই এক দফার প্রতিফলন রাজপথের এই দলটি ঘটাবে তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রেেয়ছে। আওয়ামী লীগের মতো একটি দলের বিরুদ্ধে একদফার বাস্তবায়ন করা কঠিন বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, বিএনপির সংগঠনিক দক্ষতা কম থাকায় তারা বিদেশিদের ওপর নির্ভর করছে। দলটির ভাবনা বিদেশিরাই তাদের ক্ষমতার সিঁড়িতে তুলে দেবে। তবে সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরকালে তাদের সঙ্গে বিএনপি কোনো প্রকার যোগাযোগ করতে পারেনি। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অগ্রবর্তীদলের সঙ্গে বিএনপির বৈঠক হলেও তারা সংলাপের মতো কোনো গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেনি। বরাবরের মতো সুষ্ঠু নির্বাচনের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে। বিএনপির উদ্দেশ্য হাসিল করতে সহায়ক হয় এমন কোনো প্রতিশ্রুতি তারা দেয়নি। তারা এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানতেও চায়নি। এক দফার আন্দোলনের সূত্র ধরে এই সরকারের পতন ঘটাতে দুই-চারদিন পদযাত্রা কিংবা সমাবেশ করে বিএনপির উদ্দেশ্য হাসিল করার মতো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট দেশে এখনো তৈরি হয়নি। কেননা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ‘বিএনপির নৈরাজ্যে’র প্রতিবাদে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। সে কারণে রাজপথের আন্দোলনে আওয়ামী লীগকে ধরাশায়ী করে সরকারের পতনের পথে এগিয়ে যাওয়ার মতো রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির নেই। নেতাকর্মী এবং লন্ডনে থাকা দলীয় হাই কমান্ডকে সন্তুষ্ট করতে বিএনপি এক এক সময় দফাভিত্তিক কর্মসূচি দিচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে দলটির মধ্যে তেমন ঐক্যে নেই, তৃণমূলে জনপ্রিয়তা থাকলেও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিষ্ক্রীয়তায় বিএনপি রাজনৈতিকভাবে শক্ত অবস্থানে নেই। বিএনপির এক সময়ের মিত্র নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধন হারানো দল জামায়াতের সঙ্গেও তাদের দূরত্ব বেড়েছে। আন্দোলনের পাশাপাশি বিএনপি শেষ পর্যন্ত বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এদিকে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি জানিয়েছেন, আগামী ১৮ ও ১৯ জুলাই বিএনপির পদযাত্রা নিয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) খুব একটি আপত্তি নেই।

তিনি বলেন, আমরা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করেছি। বিশেষ করে গত ১২ জুলাই আমরা যে এক দফা দাবি জানিয়েছি, সেই দাবি আদায়ের পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে আমাদের মধ্যে আলোচনা হয়েছে। আমরা আগামী ১৮ এবং ১৯ জুলাই দুটি কর্মসূচি ঘোষণা করেছি। এর মধ্যে একটি হলো গাবতলী থেকে শুরু করে বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা। আরেকটি হলো উত্তরা আবদুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত। এ পদযাত্রা নিয়ে ডিএমপির খুব একটি আপত্তি নেই। আমরা ওনাদের সহযোগিতা কামনা করেছি, আশা করি তারা আমাদের সহযোগিতা করবেন। পদযাত্রার রুট নিয়ে ডিএমপির কিছু পরামর্শ আছে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা আমাদের দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে এটাকে সমন্বয় করে নেব। খুব একটি সমস্যা হবে না। ওনারা ওই দিনের পদযাত্রার রুটটি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সামনে থেকে মোড় নিয়ে অন্যদিকে নিতে বলেছেন। এটি আমরা আমাদের দলের নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। আগামী ২২ জুলাই বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ রয়েছে। সেটি আমাদের দলীয় কার্যালয় নয়াপল্টনের সামনে অনুষ্ঠিত হবে। আমরা এই ব্যাপারেও ডিএমপি সহযোগিতা কামনা করেছি। এ্যানি বলেন, আমরা আন্দোলনে মাঠে রয়েছি। এই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের যে দাবি, একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা যে নামেই হোক না কেন, সেই নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। আমরা দেশে একটি শান্তিপূর্ণ অংশগ্রহণমূলক নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সেজন্য আমরা এক দফা ঘোষণা করেছি। আমরা আশা করব এই সরকার, পদত্যাগ করবে সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, একটি দায়িত্বশীল রাজনৈতিক দল হিসেবে যেসব দল আমাদের সঙ্গে আন্দোলন করছে তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এই রূপরেখা প্রণয়ন করেছি। মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা শুধুমাত্র নির্বাচন ও শাসন পরিবর্তনের জন্য নয় বরং রাষ্ট্র ব্যবস্থায় সামগ্রিক গুণগত পরিবর্তন এবং দেশকে সত্যিকার অর্থে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য ৩১-দফা রূপরেখা ঘোষণা করছি। এই রূপরেখা জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

বিএনপির দফাগুলো জনগণের কল্যাণে নয়, উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ঐতিহ্যগতভাবে তাদের দুর্নীতি, লুটপাটতন্ত্র এবং সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদানের স্বৈরতান্ত্রিক অপরাজনীতি ফিরিয়ে আনার কূটকৌশল। তাদের এসব দফা ও রূপরেখায় জনকল্যাণের সুনির্দিষ্ট কোনো কর্মপন্থা নেই। জনগণকে বিভ্রান্ত করতে তারা মরিয়া হয়ে অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

তিনি বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় এসব নীতির বিরুদ্ধে সব ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালিয়ে ছিল। আজ তারা দুর্নীতির শ্বেতপত্র প্রকাশের কথা বলছে। অথচ বিএনপির শাসনামলে টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের কলঙ্কের কথা জনগণ ভুলে যায়নি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, মুখে গণতন্ত্রের কথা বললেও আসলে গণতন্ত্রের মোড়কে বিএনপি তাদের সেই হিংস্র রাজনীতির পুনরাবৃত্তি ঘটাতে চায়। গণতান্ত্রিক পন্থায় অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নত-সমৃদ্ধ শান্তিপূর্ণ ও কল্যাণকর বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার প্রধানতম অন্তরায় বিএনপি এবং তার দোসররা।

ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির তথাকথিত রূপরেখা ও আন্দোলনের হুমকি বাংলাদেশের চলমান উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। বাংলাদেশের জনগণ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধভাবে এই অপশক্তির ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।