শান্তি-উন্নয়ন সমাবেশে ওবায়দুল কাদের

পদযাত্রার মধ্য দিয়ে বিএনপির পতনযাত্রা

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপির পদযাত্রার কঠোর সমালোচনা করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির পদযাত্রা পরাজয়ের যাত্রা, এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে তাদের পতনযাত্রা শুরু হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশনের সামনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত ‘শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রা’র পূর্বে তিনি এসব কথা বলেন।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের সফরে বিএনপির অর্জন কতটুকু তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বিএনপিকে কি দিয়ে গেছে? তত্ত্বাবধায়ক দিয়ে গেছে? শেখ হাসিনার পদত্যাগ দিয়ে গেছে? তাদের কাছে দাবি করেছেন, কি দিয়ে গেছে? কি পেয়েছেন? হাঁসের ডিম আর ঘোড়ার ডিম পেয়েছেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন, যতই লাফালাফি করেন কোনো লাভ হবে না। আমরা আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নকে বলেছি, আমরা নির্বাচনের আগে ও পরে শান্তি চাই। তত্ত্বাবধায়ক আমরা চাই না, চায় বিএনপি। সংসদ বিলুপ্ত হবে না, শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রশ্নই ওঠে না। অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের মতো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে।

তিনি বলেন, বিএনপি মনে করছে ২০০১ আর ২০০৬ সালের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকার তাদের ক্ষমতায় দিয়ে যাবে। তাদের আশা গুড়ে বালি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা বিলুপ্ত করিনি, উচ্চ আদালত বাতিল করেছে। তারা আদালত মানে না, তারা আইন মানে না। নিজেদের মতো হলে সব মানে। বিএনপির তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমরা মানি না। আমাদের কথা একটাই, বাংলাদেশের সংবিধানে যা লেখা আছে, আমরা সেটাই করব। নির্বাচন কমিশন সংবিধান অনুসরণ করবে, বাস্তবায়ন করবে। এর বাইরে যত কিছুই করুক, এক চুলও নড়ব না।

বিএনপি সব শয়তানের দলের আসল ঠিকানা মন্তব্য করে ওবায়দুল কাদের বলেন, যতই মারামারির চেষ্টা করেন কোনো লাভ হবে না। এই দেশে আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে। আমরা কারো কাছে মাথানত করব না। বিএনপিকে বিশ্বাস করবেন না। তাদের কথার কোনো ঠিক নেই, একবার বলে এক দফা আবার বলে ৩২ দফা। মেরামত আপনাদের করতে হবে না। বিদ্যুতের নামে খাম্বা দিয়েছেন, মেরামত করেছেন খাম্বা। আপনাদের দেখানোর মতো কি আছে? দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে, আমি আপনাদের কথা দিচ্ছি, প্রধানমন্ত্রী চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর উপর ভরসা রাখুন দ্রব্যমূল্য কমে যাবে। বিএনপির উপর ভরসা করলে লাভ হবে না। বিএনপি ঘোড়ার ডিম ছাড়া কিছুই দিতে পারবে না। বিএনপি কি দিবে? একদিনে শত সেতু শেখ হাসিনা উদ্বোধন করেছেন। বিএনপির আছে কিছু দেখাবার? ফখরুল কি দেখিয়ে ভোট করবেন? সামনের কয়েক মাস উদ্বোধন আর উদ্বোধন। বিএনপি বুঝে গেছে আগামী নির্বাচনে তাদের জেতার সম্ভাবনা নেই। গতবারের মতো এবারো হারবে। ওদের সব দল-জোট, আন্দোলন ভুয়া। এই ভুয়া আন্দোলনের পরাজয় অনিবার্য। তাদের পদযাত্রা বিফলে যাবে। সরকারের মেয়াদে অবকাঠামো উন্নয়নের বিভিন্ন উদাহরণ তুলে ধরেন ওবায়দুল কাদের। এ সময় তিনি পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল, একদিনে একশ’টি সেতু ও সড়ক-মহাসড়ক উদ্বোধন করাসহ প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আগামী মাসে আরো একশ’ সেতু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন। সামনের কয় মাস উদ্বোধন আর উদ্বোধন। ওই যে গাজীপুরের রাস্তা ওই রাস্তাও এর মধ্যে উদ্বোধন হয়ে যাবে। যেখানে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট। তারপরও তেজগাঁও রেলস্টেশন থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের উদ্বোধন। অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফিজিক্যালি গিয়ে বঙ্গবন্ধু টানেল উদ্বোধন করবেন।

শান্তি ও উন্নয়ন শোভাযাত্রার হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতির প্রসঙ্গ তুলে ধরেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, হাজার হাজার জনতার সঙ্গে, বিশেষ করে বুড়াদের সঙ্গে আমাদের তরুণরা যেভাবে মিছিলে নামছে, বিএনপির কোনো উপায় নেই। এই তরুণরা প্রথমবার তারা ভোটার হয়েছে। তারা শেখ হাসিনার স্মার্ট বাংলাদেশের পক্ষে এবারে ভোট দেবে।

ওবায়দুল কাদের বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বিএনপি নাকি ডিজিটাল করবে। বিএনপির সেই ৩০ সালের স্বপ্ন ডিপ ফ্রিজে আবদ্ধ হয়ে আছে। এখন আর বলে না। জানে যে করতে পারবে না। তাদের ২০৩০ সালের স্বপ্ন ভুয়া। এই দলের সব স্বপ্ন ভুয়া। হাতি ঘোড়া গেল তল ভেড়া বলে কত জল, বিএনপির অবস্থা হয়েছে তাই।

এ সময় দলীয় নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে কাদের বলেন, আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমরা বিজয়ী হবো, পরিবেশ শান্তিতে রাখতে হবে। প্রোগ্রাম করবেন, আশপাশ দিয়ে কে গেল দেখার দরকার নেই, তারা গায়ে পড়ে ঝগড়া করবে, সতর্ক থাকতে হবে। কাউকে কিছু বলবেন না। কেউ কিছু করলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখবে। আমাদের উপর আক্রমণ করলে পরিস্থিতি বলে দেবে কি করব। নিজেরা কোনো সিদ্ধান্ত নিবেন না। দেশের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে, এই অনুরোধ করছি।

শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মোফাজ্জল হোসেন চোধুরী মায়া, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ডাক্তার মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আফম বাহাউদ্দীন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া, ত্রাণ ও দুর্যোগ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, বন ও পরিবেশ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির।

গতকাল বিকাল ৩টা থেকে শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও দুপুর ২টার পর থেকেই ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন থানা ও ওয়ার্ড থেকে মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে জড়ো হতে থাকেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে। ফেস্টুন-ব্যানারে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে, পদ্মা সেতু, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, মেট্রোরেল বঙ্গবন্ধু টানেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, রূপপুর পরমাণু প্রকল্পের মতো মেগা উন্নয়নের চিত্র। শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ শেষে শোভাযাত্রা করে আওয়ামী লীগ। শোভাযাত্রাটি শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, মিরপুর রোড হয়ে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরের সামনে গিয়ে শেষ হয়। শোভাযাত্রা সফল করতে নেতাকর্মীরা বাদ্যবাজনা ও ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে জড়ো হন রমনা এলাকায়।

বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের’ প্রতিবাদে ঢাকাসহ রাজশাহী, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের সব জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগ ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ কর্মসূচি পালন করেছে দলটি। এতে অংশ নিয়েছে আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা।