আজকের পদযাত্রা বিজয় যাত্রা

বললেন মির্জা ফখরুল

প্রকাশ : ১৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বর্তমান সরকারের পদত্যাগসহ নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক দফা দাবি দিয়েছিল বিএনপি। এ দফার প্রথম দিনের পদযাত্রা গতকাল শেষ হয়েছে। এদিন দেশের বিভিন্ন স্থানে পদযাত্রায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

রাজধানীতে পদযাত্রায় অংশ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আজকের পদযাত্রা শুধু পদযাত্রা নয়, এটি বিজয় যাত্রা। এই দেশের মানুষ সরকারকে ক্ষমতায় দেখতে চায় না। তাই এখনই তাদের পদত্যাগ করতে হবে। তিনি বলেন, আবারও পরিষ্কার করে বলছি, শেখ হাসিনা সরকারের অধীনে আর কোনো নির্বাচন নয়।

ফখরুল বলেন, আজ যে আন্দোলন শুরু হয়েছে এ আন্দোলনের মাধ্যমে একদফা দাবি আদায় করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে।

এদিকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেছেন, বর্তমান সরকারের সময় শেষ হয়ে এসেছে। তাই তারা উল্টাপাল্টা আচরণ শুরু করেছে। দলের পদযাত্রা কর্মসূচি প্রসঙ্গে মির্জা আব্বাস বলেন, আজকের এ মিছিল থেকে প্রমাণ হবে বিএনপির নেতাকর্মীরা এ সরকারকে ভয় পায় না। বিএনপি নেতাকর্মীরা কাউকে ভয় পায় না। আজকের পদযাত্রা প্রমাণ করেছে রাজপথ আমাদের দখলে।

তিনি বলেন, বিএনপির মিছিলে বিভিন্ন জায়গায় হামলা চালানো হয়েছে। আবার যদি হামলা হয় তাহলে আমরাও পাল্টা জবাব দেবো। আমরা আর বসে থাকব না। বিএনপির এ নেতা আরো বলেন, বিশ্ববাসী এ সরকারের ওপর অতিষ্ঠ। দেশের জনগণও অতিষ্ঠ। তাই এ সরকার আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। আজকের এ পদযাত্রা থেকে আমরা প্রমাণ করব, বিএনপি এ সরকারকে আর ক্ষমতায় থাকতে দেবে না।

এদিকে রাজধানীতে বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নেওয়া নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ হয়েছে। বেলা ১২টার দিকে মিরপুর বাঙলা কলেজ গেটের কাছে এ ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বিএনপির কিছু কর্মী এসময় একটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেলে আগুন দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, বিএনপির নেতাকর্মীরা পদযাত্রার উদ্দেশ্যে জড়ো হয়েছিলেন। তখন তাদের সঙ্গে মিরপুর বাঙলা কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। একপর্যায়ে দুই পক্ষই সংঘর্ষে জড়ায়। বিএনপির কিছু কর্মী সেখানে একটি মোটরসাইকেল ও একটি বাইসাইকেলে আগুন দেয়।

অন্যদিকে ফেনীতে পদযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশ, বিএনপির নেতাকর্মী ও সাংবাদিকসহ অর্ধশত লোক আহত হয়েছেন। গতকাল বিকালে ফেনী শহরের জিরোপয়েন্ট এলাকায় এ সংঘর্ষ শুরু হয়। জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগের দাবিতে ফেনী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ বাহার ও সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলালের নেতৃত্বে অন্তত ২০ হাজার নেতাকর্মী শহরের ট্রাংক রোড়স্থ দাউদপুর ব্রিজ সংলগ্ন স্থান থেকে পদযাত্রা শুরু করেন।

ইসলামপুর রোড়ে পৌঁছালে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় পুলিশের ওপর বিএনপির নেতাকর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় কয়েকটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ অন্তত ২০-৩০ রাউন্ড গুলি ছোড়ে। খবর পেয়ে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অবস্থান নেওয়া আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বিএনপির নেতাকর্মীদের ধাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। পুলিশ সুপার জাকির হাসানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা রাজনৈতিক পক্ষের নেতাকর্মীদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

বগুড়ায় এক দফা দাবিতে পদযাত্রা ও বিক্ষোভ মিছিলে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ রাবার বুলেট, কাঁদানে গ্যাসের শেল ও শটগানের গুলি ছুড়েছে। পুলিশের গুলি ও হামলায় ২০ থেকে ২৫ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে বিএনপি দাবি করেছে। অন্যদিকে পুলিশের দাবি, বিএনপির হামলায় ছয় থেকে সাত পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুর রশিদ বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ইয়াকুবিয়া মোড় থেকে সাতমাথা অতিক্রম করতে চেয়েছিল। সেখানে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ চলছিল। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ তাদের সাতমাথার দিকে না যেতে বলে। এতে পুলিশের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও হামলা করা হয়। পুলিশ ধৈর্যের সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করেছে। আত্মরক্ষার জন্য পরে কাঁদানে গ্যাসের শেল ও রাবার বুলেট ছুড়েছে।

কিশোরগঞ্জে পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শহরের রথখোলা ঈশা খাঁ সড়কে সংঘর্ষের সময় বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে পাল্টা ইট-পাটকেল ছোড়েন। পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপের পাশাপাশি লাঠিপেটা করে। এতে বিএনপির নেতাকর্মী, পুলিশ, সাংবাদিকসহ শতাধিক আহত হয়েছে। এ সময় দুটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা গেছে, সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে পদযাত্রায় অংশ নিতে গতকাল সকাল থেকে বিএনপি নেতাকর্মীরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে শহরের গুরুদয়াল সরকারি কলেজ মাঠে জড়ো হন। সেখানে জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমসহ কয়েকজন নেতা বক্তব্য দেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ে পুলিশ।