চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে বাড়ছে শিশু মৃত্যু

স্কুলে ছুটি দাবি উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  সাইফুদ্দিন তুহিন, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে চরম ডেঙ্গু আতঙ্কে শিশুদের অভিভাবকরা। কারণ আক্রান্তদের একটি বড় অংশই শিশু। মৃত্যুর হারের দিক দিয়েও এগিয়ে আছে শিশুরা। চিকিৎসকরাও বলছেন, চরম ঝুঁকিতে রয়েছে শিশুরা। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন দুই ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু হয়। এর মধ্যে এক শিশুর বয়স মাত্র ১০ মাস। রাজশ্রী ধর নামে ওই শিশু চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়। অভিভাবকদের অনেকে স্কুল ছুটির দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসও দিয়েছেন। অনেকে সরাসরি স্কুলে গিয়ে শিক্ষকদের কাছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ছুটি ঘোষণার দাবিও জানিয়েছেন। তবে ডেঙ্গুজনিত জরুরি পরিস্থিতি ঘোষিত না হওয়ায় এখনো প্রাইমারি কিংবা কিন্ডারগার্টেন পর্যায়ে ছুটি দেয়া হচ্ছে না। শিক্ষকরা বলছেন, ডেঙ্গুজনিত ছুটি ঘোষণা দেয়া হলে সরকারের নির্দেশনা লাগবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আক্রান্তের সংখ্যায় বয়স্করা বেশি। কিন্তু পরিসংখ্যানে এগিয়ে শিশুরা। এরইমধ্যে চট্টগ্রামে ৩৫৪ জন শিশু আক্রান্ত হয়েছে। আর ডেঙ্গুতে মারা গেছে নয় শিশু। ১১ বছরের নিচে শিশুরা বেশি মৃত্যুর ঝুঁকিতে। এজন্য শিশুদের অভিভাবকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা। গেল ৪ জুলাই নগরীর জিইসি মোড় এলাকার চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শ্রাবন্তী সরকার (১১) নামে এক শিশু। শ্রাবন্তী নগরীর সদরঘাট থানার বিটু সরকারের মেয়ে এবং নগরীর পাথরঘাটা এলাকার স্বনামধন্য সেন্ট স্কলাস্টিকা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল। শ্রাবন্তির মৃত্যুর খবর ফেইসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। তার মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ট্যাটাসের ঝড় ওঠে। এরপর শিশুদের ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়া এবং এই ক্ষেত্রে মানসম্মত চিকিৎসার বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচনা হতে থাকে। শ্রাবন্তীর বাবা বিটু সরকার সাংবাদিকদের বলেছেন, হঠাৎ করেই যেন দুর্ঘটনা হয়ে গেল। গেল ২৯ জুন জ্বরে আক্রান্ত হয় শ্রাবন্তী। মনে করেছিলাম স্বাভাবিক জ্বর। ৩ জুলাই পরীক্ষায় ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। ৪ জুলাই শ্রাবন্তীর দাঁতের মাড়ি থেকে রক্ত ঝরেছিল। পেট ফুলে গিয়েছিল। ওই দিনই নগরীর জিইসি মোড়ের মেডিকেল সেন্টার হাসপাতালে নিয়ে গেলে শ্রাবন্তী মারা যায়। মেয়েটি চিকিৎসার সময়ও দিল না। চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায় চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শ্রাবন্তী সরকারসহ মোট ২১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। এরমধ্যে অন্তত ১২ জনই শিশু। মারা যাওয়া শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগই ১১ বছরের মধ্যে। গেল ফেব্রুয়ারি থেকেই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর রেকর্ড করা হচ্ছে। প্রতি মাসেই ডেঙ্গুু আক্রান্তের রেকর্ড হচ্ছে। আর জুন-জুলাই মাসে এসে আক্রান্তর সাথে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে।

চট্টগ্রামে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতাল সূত্র জানায়, বর্ষা মৌসুম শুরুর কিছু আগে থেকেই চট্টগ্রামে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। জুলাই মাসে ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রামে এখন অনেকটা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা। ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার বৃদ্ধি নিয়ে এক চিকিৎসক জানান, ডেঙ্গু আক্রান্তদের দেরি না করে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে আসা উচিত। যাতে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করা যায়। কিন্তু আক্রান্ত হওয়ার পরও দেরিতে হাসপাতাল কিংবা চিকিৎসকের কাছে নেওয়া হচ্ছে। এ কারণে মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি স্বাভাবিক জ্বর মনে করে খাওয়ানো হচ্ছে এন্টিবায়োটিকসহ নানা ওষুধ। এ কারণেও মৃত্যু ঝুঁকি বাড়ছে। দ্রুত যথাযথ চিকিৎসা হলে মৃত্যুর হার কমানো যায়।

এদিকে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার বেড়ে যাওয়া এবং শিশুরা বেশি আক্রান্ত হওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন অভিভাবকরা। তারা চান এখনই স্কুল বন্ধ করে দেয়া হোক। বিশেষ করে প্রাইমারি স্কুল বন্ধ করা জরুরি বলেও মনে করেন অভিভাবকরা। নগরীর বাকলিয়া এলাকার বাসিন্দা মোশাররফ হোসেন বলেন, আমার দুটি সন্তান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে। বাকলিয়া এলাকার আশপাশে অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল গ্রীষ্মের বন্ধ ঘোষণা করেছে। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা আছে। আমি চাই ডেঙ্গুর ভয়াবহ এই সময়ে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করা হোক।