এসপিএম ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প

বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসছে আমদানি নির্ভর জ্বালানি তেল খালাসে

প্রকাশ : ২১ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন, মহেশখালী, কক্সবাজার

বাংলাদেশের একমাত্র পাহাড়ি দ্বীপ কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন প্রকল্প। এসপিএম প্রকল্পের মাধ্যমে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে দেশের আমদানি-নির্ভর জ্বালানি তেল খালাসে। জ্বালানি তেল ব্যবস্থাপনা সাশ্রয়ী ও টেকসই করবে সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্পটি। প্রকল্পটি চালু হলে জ্বালানি তেল খালাসের সময় ও খরচ অবিশ্বাস্যরকম কমে আসবে। এতে প্রতি বছর রাষ্ট্রের সাশ্রয়ী হবে ৮০০ কোটি টাকা। আর ১২ দিনের কাজ হবে ৪৮ ঘণ্টায়।

জানা গেছে, বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রড অয়েল এবং ফিনিসড পোডাক্ট মাদার ভেসেল থেকে খালাস করতে ১১-১২ দিন সময় লাগত। সনাতনী পদ্ধতিতে আমদানিনির্ভর জ্বালানি তেল খালাস করতে অতিরিক্ত সময়ের পাশাপাশি রাষ্ট্রের গুনতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা। আমদানি করা জ্বালানি তেল সরাসরি স্বল্প সময়ের মধ্যে খালাস করার জন্য ২০১৫ সালের নভেম্বর মাসে গভীর সমুদ্রে ডাবল পাইপলাইনের সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। এসপিএম মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পাশে বঙ্গোপসাগরে স্থাপন করা হয়। বিদেশ থেকে বড় জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। সেখান থেকে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ডিপো, ইস্টার্ন রিফাইনারির স্টোরেজ ট্যাংক ছাড়াও প্রয়োজনে তেল বিপণন কোম্পানির বিভিন্ন স্টোরেজ ট্যাংকে জমা করে সারাদেশে সাপ্লাই করা হবে। এসপিএম প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে রাজনৈতিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জ্বালানি খালাসে প্রতিবন্ধকতায় আর পড়তে হবে না। এতে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে।

আরো জানা গেছে, এসপিএম বয়াটি মহেশখালী দ্বীপের পশ্চিম পার্শ্বে বঙ্গোপসাগরে স্থাপিত হয়েছে। জাহাজ থেকে তেল সরাসরি পাম্প করা হবে যা এসপিএম হয়ে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মাতারবাড়ি এলটিই (ল্যান্ড র্টামিনাল ইন্ড) পর্যন্ত এবং সেখান থেকে অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে মহেশখালী এলাকায় স্থাপিত স্টোরেজ ট্যাংকে জমা হবে। এসপিএম হতে ৩৬ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল আনলোডিং করা হবে। স্টোরেজ ট্যাংক থেকে পাম্পিংয়ের মাধ্যমে তেল প্রথমে অনশোর ও পরবর্তীতে অফশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে চট্টগ্রামে অবস্থিত গহিরা এলটিই পর্যন্ত এসে পুনরায় অনশোর পাইপলাইনের মাধ্যমে কেইপিজেড’র ভেতর দিয়ে ডাংগারচর পর্যন্ত এসে কর্ণফুলী নদী এইচডিডি’র মাধ্যমে ক্রস করে পদ্মা অয়েল কোম্পানির ভেতর দিয়ে ইআরএলে পাঠানো হবে। ট্যাংক ফার্ম থেকে ১৮ ইঞ্চি ব্যাসের দুটি পৃথক পাইপলাইনের মাধ্যমে ক্রুড অয়েল এবং ডিজেল খালাস করা হবে। সূত্র জানায়, প্রকল্পে এসপিএম নির্মাণের পাশাপাশি মহেশখালীর মাতারবাড়ী উপকূলে ৫০ হাজার টন ধারণক্ষমতার তিনটি ক্রুড অয়েল স্টোরেজ ট্যাঙ্ক, ৩০ হাজার টন ধারণক্ষমতার তিনটি ডিজেল স্টোরেজ ট্যাঙ্ক এবং মহেশখালীতে পাম্প স্টেশন স্থাপন, স্কাডা সিস্টেম স্থাপন ও ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও চীন সরকারের মধ্যে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) অধীনস্থ কোম্পানি ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেড এটি বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের ইপিসি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছেন চায়না পেট্রোলিয়াম পাইপলাইন ইঞ্জিনিয়ার কোম্পানি লিমিটেড। ২০২৩ সালেই প্রকল্পটি চালু হতে যাচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তা মনজেদ আলী শান্ত বলেন, সিঙ্গেল পয়েণ্ট মুরিং এসপিএম উইথ ডাবল পাইপলাইন এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত ক্রড অয়েল এবং ফিনিসড পোডাক্ট আসত। সেটা মাদার ভেসেল থেকে লাইটারিং করে নিতে হয়। একটা মাদার ভেসেল থেকে লাইটারিং করতে ১০ থেকে ১১ দিন লাগে। এজন্য আমাদের অনেক আর্থিক ক্ষতি হতো এবং অনেক সময় লাগত। এই প্রকল্প চালু হলে সেটা আমরা ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যেই চট্টগ্রাম পৌঁছাতে পারব। এখানে আমাদের ছয়টি ট্যাংক রয়েছে। তিনটি ফিনিসড পোডাক্ট আর তিনটি ক্রড অয়েলের জন্য। সুবিধা মতো আমরা ক্রড অয়েলকে পাম্পিং করে চট্টগ্রামের ইস্টার্ন রিফাইনারীতে পাঠাতে পারব। তিনি বলেন, ইতিমধ্যেই আমাদের প্রকল্পের ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। দ্রুত প্রকল্পের কমিশনিং এবং টেস্টিংয়ের কাজে যাবে। কমিশনিং এবং টেস্টিংয়ের কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন হলে প্রধানমন্ত্রী উদ্বোধন করবেন। এই প্রকল্প চালু হলে বছরে সরকারের প্রায় ৮০০ কোটি টাকা সাশ্রয়ী হবে। মোট ১৯১ একর জায়গায় ওপরে এটা নির্মিত হচ্ছে। এই প্রকল্পে অর্থায়ন করছে এক্সিম ব্যাংক অব চায়না ও বাংলাদেশ সরকার। তিনি আরো বলেন, এসপিএম উইথ ডাবল পাইপ লাইনে খুব উন্নতমানের পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে। সমুদ্রে থাকা পাইপ লিকেজ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কোথাও কোনো সমস্যা হলে আমাদের সংকেত পাঠাবে। পুরো প্রকল্পে সর্বাধুনিক পদ্ধতির ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রকল্প পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি গঠন হতে যাচ্ছে। সেই কোম্পানি এটা পরিচালনা করবেন। এই প্রকল্পের দেশের অনেক লোকেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।