সরকারের উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে থাকা গণপূর্ত অধিদপ্তর। সরকারি আবাসন, অফিস-আদালত এবং বহুতল হাসপাতাল ভবন নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে সংস্থাটি। ফলে করোনা মহামারি ও বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও গণপূর্তের উন্নয়ন ব্যয় মেটাতে গত অর্থবছরের চেয়ে এবার ৮২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বেশি বাজেট ধরা হয়েছে।
জানা গেছে, গণপূর্ত অধিদপ্তর কেন্দ্র করে প্রত্যেক বছরের মতো এবারো উন্নয়ন ব্যয় ২২শ’ ৮২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বাজেট পাস করা হয়েছে। যা গত বছর উন্নয়ন ব্যয় ছিল ২২শ’ কোটি টাকার কাছাকাছি। চলমান উন্নয়ন ব্যয়ের অর্থ এরইমধ্যে কাজে লাগানো শুরু হয়েছে। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সেবাপ্রদান প্রক্রিয়া সহজীকরণ করা হয়েছে। উন্নয়নমূলক কাজের পরিকল্পনা এবং সুবিধাবঞ্চিতদের সমস্যা নিরসনে আবাসনের ব্যবস্থা করেছে গণপূর্ত। এখানে মানসম্মত নগর অবকাঠামোসহ চাহিদা অনুযায়ী উন্নত মানের নাগরিকসেবা প্রদান করছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী গণপূর্তে নির্মিত বহুতল ভবনের সামনে পর্যাপ্ত ফাঁকা জায়গা রাখা হয়েছে এবং হচ্ছে। এখানে বহুতল ভবন নির্মাণের বিষয়টি উন্নয়নের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকলেও সবুজ উদ্যান উন্নয়নও করছে। যা মানুষের আবাসন সংকট নিরসন ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা পরস্পর অবিচ্ছেদ্য।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টরা জানান, অবকাঠামোর কাজ অব্যাহত রাখতে ১৫টি প্রকল্প সামনে রেখে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গণপূর্ত অধিদপ্তরের উন্নয়ন ব্যয় ২২শ’ ৮২ কোটি ৭২ লাখ ধরা হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে- ভৌত অবকাঠামো, আবাসন, সরকারি অফিস ভবন, মসজিদ আধুনিকায়ন এবং জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ব্যবস্থা উন্নয়নে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
গণপূর্ত অধিদপ্তরের কয়েকজন প্রকৌশলী জানান, বৈশ্বিক মহামারি ও ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পগুলো। কারণ আন্তর্জাতিক বাজারের কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে দেশীয় রড ও সিমেন্ট শিল্প। এসব পণ্যের দাম দ্বিগুণ হওয়ায় অনেক ঠিকাদার ভবন নির্মাণ করতে এসে লোকসানের মুখে পড়েছেন। তাই এবার এসব পরিস্থিতি সফলভাবে মোকাবিলা করে চলমান উন্নয়ন বজায় রাখা ও উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য সামনে রেখে এগিয়ে যাচ্ছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তবে উন্নয়ন কাজে বরাদ্দ বাড়লেও প্রকল্পের সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সুবিধা বাড়ছে: গণপূর্তের উন্নয়ন ব্যয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। এতে নারায়গণগঞ্জ আলীগঞ্জে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য ৮টি ১৫ তলা ভবনের ৬৭২টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬৫ কোটি টাকা। এছাড়া গুলশান, ধানমন্ডি ও মোহাম্মদপুরে ২০টি পরিত্যক্ত বাড়িতে ৩৯৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৮ কোটি, চট্টগ্রাম শহরে পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি আবাসিক ফ্ল্যাট ও ডরমিটরি ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ৫৮ কোটি, চট্টগ্রামের ৩৬টি পরিত্যক্ত বাড়িতে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের জন্য আবসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ১৫০ কোটি, আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবিসক ফ্ল্যাট নির্মাণে ৭৫০ কোটি, মিরপুর পাইকপাড়ায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ৪৫৬ কোটি ৪৩ লাখ টাকা উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। সরকারি কর্মচারীদের জন্য বিদ্যমান আবাসন সুবিধা ৮ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য অর্জনে এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল অফিস ভবনের সুবিধা বাড়ছে: সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসন ছাড়াও সরকারি অফিস নির্মাণেও নজর দিয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সেজন্য নগরাঞ্চলে ভবন সুরক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নে ৭৭ কোটি ৫২ লাখ, গোপালগঞ্জে বহুতলবিশিষ্ট সমন্বিত সরকারি অফিস ভবন নির্মাণে ২৬ কোটি ১৫ লাখ এবং বাংলাদেশ সচিবালয়ে ২০ তলাবিশিষ্ট নতুন অফিস ভবন নির্মাণে ২০০ কোটি টাকা উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে। আবাসিক ভবন ও সরকারি অফিস ভবন নির্মাণের পাশাপাশি ঢাকাস্থ সোবাহানবাগ মসজিদের আধুনিকায়ন এবং ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণে ২৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া ও বিভিন্ন হলের অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন ও পরিবর্ধনে ১৪ কোটি ৬৭ লাখ, অফিসার্স ক্লাবের ক্যাম্পাসে বহুতল ভব নির্মাণে ১০০ কোটি টাকা, স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ফায়ারিং রেঞ্জের আধুনিকায়নে ৩৫ কোটি টাকা এবং জাতীয় সংসদ ভবন এলাকার বৈদ্যুতিক-যান্ত্রিক ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজে ৬৫ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
বাদ যায়নি সবুজ উদ্যান উন্নয়নের বিষয়টি: চট্টগ্রাম জেলার পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন ব্যয় ধরা হয়েছে ৭ কোটি টাকা। এতে সবুজের রক্ষায় নজর কাড়াবে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই উত্তরাধিকারী আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিন-রাত নিরলস পরিশ্রম করে চলেছেন। ২০৪১ সালের মধ্যে একটি সুখী-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান। কোভিড-উত্তর পরিস্থিতিতে প্রয়োজনীয় পুনরুদ্ধার কার্যক্রম অব্যাহত রাখা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দিলেও অবকাঠামো উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। চলতি অর্থবছরে এই অধিদপ্তরের জন্য ২২শ’ ৮২ কোটি ৭২ লাখ টাকা বাজেট ধরা হয়েছে। ১৫টি প্রকল্পে জন্য এই অর্থ ব্যয় করা হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনের পাশাপাশি সরকার কর্তৃক গৃহহীনদের জন্যও আবাসনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
সচিব বলেন, ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নে সবার জন্য সাধ্যানুযায়ী নিরাপদ ও পর্যাপ্ত আবাসনের সংস্থান করা হচ্ছে। স্মার্ট ও পরিকল্পিত নগরায়নের স্বার্থে সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, রাজধানী ঢাকার জমি যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে এবং হচ্ছে।’
কাজী ওয়াছি উদ্দিন আরো বলেন, ‘জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষ এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ ঢাকা এবং এর আশপাশে স্বল্প আয়ের লোকদের জন্য সাশ্রয়ী মূল্যে টেকসই গৃহ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করছে। এসবই করা হচ্ছে জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা মোতাবেক।’
বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পের ব্যাপারে গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শামীম আখতার আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বহুতল ভবন নির্মাণ করে গণপূর্ত অধিদপ্তর উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রেখেছে। প্রায় দুইশ বছর ধরে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে চলছে। কারণ মানসম্মত অবকাঠামো নির্মাণ করা যে কোনো দেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই প্রত্যেক বছরের মতো এবারও চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বাজেট ধরা হয়েছে। অধিদপ্তরের অধীনে থাকা বড় ২১টি প্রকল্পের মধ্যে ৭টি প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিছু দিনের মধ্যে আরো ৭টি প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। সর্বশেষ থাকা ৭টি প্রকল্প ২০২৩-২৪ অর্থবছরে পুরো দমে চলবে।
তিনি আরো বলেন, গণপূর্তের উন্নয়ন ব্যয়ে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে যে বাজেট ধরা হয়েছে, সেই অর্থ যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। প্রকল্পের অর্থ নয়ছয় করার কোনো সুযোগ নেই। আজিমপুর সরকারি কলোনির অভ্যন্তরে সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য বহুতল আবিসক ফ্ল্যাট নির্মাণ এবং মিরপুর পাইকপাড়ায়সহ বেশি কিছু এলাকায় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হচ্ছে। কয়েক ধাপে যাচাই-বাছাই করে প্রকল্পগুলো নেয়া হয়েছে। আশা করছি, বহুতল ভবন নির্মাণ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট কিছুটা নিরসন হবে।