ঢাকা ছাড়ল ইইউ প্রতিনিধি দল

পর্যবেক্ষণের বিষয়ে আশ্বস্ত হলো ইসি

ধোঁয়াশায় থেকে গেল বিএনপি

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রাক-নির্বাচনি অনুসন্ধানী দল ঢাকা ছাড়ছে আজ। আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এ প্রতিনিধি দলের ঢাাকা সফর বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে অনেকখানি গুরুত্ব পেয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সফরকালে ই.ইউর সঙ্গে আলাপ করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণে প্রতিনিধিদল আসার ব্যাপারে আশ্বস্থ হয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে এ ক্ষেত্রে দেশের রাজপথের বিরোধী দল বিএনপি ধোঁয়াশার মধ্যে রয়ে গেছে।

সূত্র জানায়, বিএনপি মনে করেছিল বিদেশি প্রতিনিধিরা এসে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারকে চাপ দেবে। ফলে সরকারের পতন ঘটাতে তাদের আন্দোলন-সংগ্রাম অনেকটা সহজ হবে। অথচ হয়েছে তার উল্টো। বিদেশি প্রতিনিধিরা চায় বাংলাদেশে সংবিধান অনুয়ায়ী সুষ্ঠু ভোট। যেটা আওয়ামী লীগেরও চাওয়া। ফলে অনেকটা হাতাশ হয়েছে বিএনপি। ইইউ প্রতিনিধি দল জাতীয় নির্বাচনের দুই মাস আগে পর্যবেক্ষক পাঠানোর ইঙ্গিত দিয়েছে। জানা যায়, সফরে পাঁচটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেছে ইইউ’র প্রাক-নির্বাচনি অনুসন্ধানী দল। তাদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি, জামায়াত ও এবি পার্টির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বাংলাদেশে গত দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইইউ কোনো পর্যবেক্ষক পাঠায়নি, এবার পাঠাবে কি না, তা নিয়ে তারা রাজনৈতিক দলগুলোর পরামর্শ চেয়েছে। বিএনপি জানিয়ে দিয়েছে, তারা শেখ হাসিনার সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে না। তবে আওয়ামী লীগ বলে দিয়েছে সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। আওয়ামী লীগের এই অবস্থানে অনেকটা সায় আছে ইইউ প্রতিনিধি দলের।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে, তাদের চাওয়াটা হলো, বাংলাদেশে তারা একটা অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চায়। আমরাও বলেছি, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সম্ভব।

কাদের বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান, সার্বভৌমত্ব, আইনি ব্যবস্থার ওপর ভিত্তি করে তারা একটি নির্বাচন দেখতে চায়। তারা নির্বাচন ব্যবস্থার সংস্কারে আশ্বস্ত হয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি বিদেশি বন্ধুদের কাছে মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে যে পক্ষপাতমূলক সমর্থন চেয়েছিল, সেটা ব্যর্থ হয়েছে।

তিনি বলেন, বিদেশি বন্ধুরা আসার আগে বিএনপি তাদের অপপ্রচারের মাধ্যমে এমন ধারণা বা আশঙ্কা তৈরির চেষ্টা করেছিল যে, এবার বুঝি সরকারের রেহাই নেই, নিষেধাজ্ঞা আসছে। আমেরিকা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ভিসানীতি সরকারকে বিপদে ফেলবে। সরকারকে হয়তো ফাইনালি বলে দেবে এভাবে ইলেকশন (নির্বাচন) করতে হবে, তত্ত্বাবধায়ক সরকার হয়েই যাবে, প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হবে, এ রকম চেয়েছিল বিএনপি। শেষ পর্যন্ত কী হলো?

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, ‘আমরা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন চাই। শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার। সেই শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আমরা রক্ষা করব। কারো কোনো ধরনের উসকানিতে, খারাপ ব্যবহারে সেই পরিবেশ ক্ষুণ্ণ হয়েছে, এ দুর্নামটা নিতে চাই না।

ইইউ প্রতিনিধি দল সাংবাদিকদের জানিয়েছে, ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হলে জাতীয় নির্বাচনের দুই মাস আগে ইইউ পর্যবেক্ষক দল বাংলাদেশে আসবেন। তারা দুই মাস নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন। তারা চায় বাংলাদেশে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন।

এদিকে সরকার পতনের এক দফায় এসে বিএনপি দেশব্যাপী দুই দিনের যে পদযাত্রা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিল তাতে হতাশ দলটির তৃণমূল নেতাকর্মীরা। তারা বলেছেন, চূড়ান্ত পর্যায়ের সরকার পতনের আন্দোলনে কঠোর কর্মসূচি প্রত্যাশা ছিল। প্রত্যাশিত কর্মসূচি দল ঘোষণা করতে পারেনি।

দলীয় সূত্র মতে, অনেকটা তড়িঘড়ি করে পশ্চিমা কূটনীতিকদের নির্দলীয় সরকারের দাবির পক্ষে জোরালো জনসমর্থন দেখাতে এ সমাবেশের আয়োজন করে বিএনপি। যে কারণে সরকার পতন আন্দোলনের সিরিজ কর্মসূচি চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি। এজন্য প্রাথমিকভাবে পদযাত্রা কর্মসূচি দেওয়া হয়। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম ঘোষিত কর্মসূচিকে প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে উল্লেখ করে বলেছেন, মাত্র দুই দিনের নোটিশে আমরা এ সমাবেশ করেছি। সামনে নেতাকর্মীদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আনম সাইফুল ইসলাম বলেন, যদি মাঠের চিত্র অনুযায়ী বলি, তাহলে বলব-নেতাকর্মীরা এখন কঠোর কঠিন কর্মসূচি খুঁজছে। আগে কর্মীদের মোবাইল ফোনে কল করে পাওয়া যেত না এখন কর্মীরা নেতাদের খোঁজে কর্মসূচির জন্য।

ইসি সূত্র জানায়, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে ইসির কাছ থেকে নির্বাচন প্রক্রিয়ার সব বিষয় জানতে ইসিতে দুইবার গিয়েছিল ইইউ প্রতিনিধিদল।

ইসির যুগ্ম সচিব (আইন) মো. মাহবুবার রহমান সরকার বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না; আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি কী; কী অবস্থায় আছে সেই বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। আরপিও, সাংবাদিক নীতিমালা, সংবিধান, নির্বাচন প্রক্রিয়া, পর্যবেক্ষক পাঠানোর প্রক্রিয়া, পর্যবেক্ষকদের কোনো ইকুইপমেন্ট দরকার হলে সেটা আনার প্রক্রিয়া, এসব ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশন কতটুকু এবং কীভাবে সহযোগিতা করতে পারবে এসব বিষয়ে কথা হয়েছে।

আপনাদের জবাবে ওনারা সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে মাহবুবার রহমান বলেন, সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির কোনো বিষয় আসে নাই। আমাদের বিদ্যমান আইন-কানুন ও নির্বাচন প্রক্রিয়াগুলো কীভাবে হয় সেগুলো জানতে চেয়েছে। তবে তারা আমাদের কথা শুনে ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ড. এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বড় দুটি দল সংবিধানকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় যাওয়ার প্রতিযোগিতা করছে। কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। আওয়ামী লীগ বলছে, সংবিধানের বাইরে যাবে না। বিএনপির কেউ কেউ বলছেন, সংবিধানের মধ্যে থেকেই সরকারের পদত্যাগে নির্বাচন সম্ভব। এ পরিস্থিতিতে আলোচনার টেবিলে বসে সংকট সমাধানের প্রয়োজন রয়েছে। না হয় রাজনৈতিক পরিস্থিতি সংঘাতের দিকে চলে যাবে।