রোহিঙ্গা ক্যাম্পজুড়ে ‘আরসা’ আতঙ্ক

সামরিক কমান্ডারসহ ছয়জন গ্রেপ্তার

প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  এএইচ সেলিম উল্লাহ, কক্সবাজার ও সাঈদ মুহাম্মদ আনোয়ার, উখিয়া

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে বাধা, ক্যাম্পে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, স্বর্ণ চোরাচালান, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারে গোলাগুলিসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে চালিয়ে যাচ্ছে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’। অপরাধ সংগঠিত করে পাশর্^বর্তী দেশ মিয়ানমার, কক্সবাজারের গহীন পার্বত্য এলাকা ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করতো তারা। ‘আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প এলাকার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদকে (২৮) ছয় সহযোগী ও অস্ত্র ও গোলাবারুদসহ টেকনাফ বাহারছড়ার শামলাপুর এলাকা থেকে গ্রেপ্তারের পর গতকাল সকাল সাড়ে ১১টার দিকে র‌্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার মঈন। হাফেজ নুর মোহাম্মদ ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- ধলা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন জোহার (৩০), ওবায়দুর রহমানের ছেলে মো. ফারুক প্রকাশ হারেস (২৩), জমলুকের ছেলে মনির আহাম্মদ (৩৬), অলি আহাম্মদের ছেলে নূর ইসলাম (২৯), হোসনের ছেলে মো. ইয়াছিন (২১)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ৭.৬৫ এমএম পিস্তল, একটি বিদেশি রিভলবার, একটি শর্টগান, চারটি দেশীয় এলজি, তিনটি দেশীয় রামদা ও গোলাবারুদসহ নগদ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

র‌্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও আশপাশের এলাকায় ‘আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা)’ সহ বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের ফলে সাধারণ রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মাঝে ভীতি ও আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় ক্যাম্পে শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতে গোয়েন্দা তৎপরতা শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত শুক্রবার রাতে টেকনাফ বাহারছড়া শামলাপুর পাহাড়ি এলাকায় অভিযান চালিয়ে সন্ত্রাসী সংগঠন ‘আরসা’র সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে ছয় সহযোগিসহ আটক করে। আটক হাফেজ নুর মোহাম্মদ ছয়জন নিহত হওয়ার ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে ছিলেন। তার বিরুদ্ধে উখিয়া, নাইক্ষ্যংছড়িসহ বিভিন্ন থানায় হত্যা, অপহরণ, অস্ত্রসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৫ এর অধিক মামলা রয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃতরা ‘খুন ও অপহরণের সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে বলেও জানিয়েছেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা। তিনি আরো বলেন, আরসা’র সামরিক শাখার প্রধান ওস্তাদ খালেদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ ও আরসা’র মূল সংগঠক আরিফ উদ্দিন প্রকাশ হাসেম প্রকাশ কুইল্লা এর কাছ থেকে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়ে সে আরসা’র অন্যান্য সদস্যদের কুংফু ও বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ দিতো মার্শাল আর্ট (কংফু) প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হাফেজ নুর মোহাম্মদ। তার নেতৃতে ৩০ থেকে ৩৫ জন আরসা সদস্য কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকা বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাত। তার নেতৃত্বে হেড মাঝি শফি উল্লাহ, সালাম, সলিম, মালেক, হাবুইয়া, ইমান, আবুল মুনসুর, সালেহকে খুন করা হয়। এছাড়া মাস্টার সলিম ও তার নির্দেশে হেডমাঝি আবু তালেব, সাবমাঝি সৈয়দ হোছেন ও শফিকুর রহমানকে গুলি করে হত্যা করে গ্রুপের সদস্যরা। র‌্যাবের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ঘুমধুম সীমান্তে র‌্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার মাদকবিরোধী যৌথ অভিযানের সময় সন্ত্রাসীদের হামলায় গোয়েন্দা সংস্থার একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নিহত হন। এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ছিল হাফেজ নুর মোহাম্মদ এবং নিহত কর্মকর্তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন তিনি। স্থানীয় অপরাধীদের সহযোগিতায় অপহরণের ঘটনা ঘটিয়ে মুক্তিপণ আদায় করত তারা। তাদের চাহিদা মুক্তিপণ না পেলে অপহৃতদের খুন করে লাশ গুম করত তারা এবং টাকার বিনিময়ে সীমান্ত থেকে মাদক পরিবহণ করত তারা। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে অস্ত্র চোরাচালান করত এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অস্ত্রসহ ছবি প্রচার করে সাধারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার করতো বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের এ কর্মকর্তা। উল্লেখ্য, গত ৭ জুলাই কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলোর ঘটনায় পাঁচজন নিহত হন। এদিন ভোর সোয়া ৬টার দিকে উখিয়ার আট ডব্লিউ ক্যাম্পে ওই গোলাগুলির ঘটনা ঘটে।