ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

আজ পাবলিক সার্ভিস দিবস

আজ পাবলিক সার্ভিস দিবস

আজ পাবলিক সার্ভিস দিবস। দিবসটি উপলক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করা সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। প্রজাতন্ত্রের সব কর্মচারীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, রাষ্ট্রের সার্বিক কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের ক্ষেত্রে সরকারের নীতি-কৌশল প্রণয়ন এবং তা বাস্তায়নে দক্ষ, গতিশীল ও জবাবদিহিতামূলক জনপ্রাসনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করা সরকারি কর্মচারীদের সাংবিধানিক দায়িত্ব। এর পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিক সেবা সহজ, সুলভ, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতামূলক করতে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীদের আরো বেশি জনবান্ধব ও আন্তরিক হতে হবে। রাষ্ট্রপতি বলেন, জনপ্রশাসনের সব কর্মবিভাগে নিযুক্ত কর্মচারীদের সৃজনশীলতা, উদ্ভাবনী প্রয়াস, সেবা সহজীকরণ ও গঠনমূলক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে ও সরকারের উন্নয়ন-অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক’ প্রদান একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ। তিনি উদ্ভাবনী কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর জনপ্রশাসন পদকপ্রাপ্ত সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান। রাষ্ট্র্রপতি বলেন, ‘রূপকল্প-২০২১’ এর সফল বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এরইমধ্যে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের চূড়ান্ত ধাপে পৌঁছেছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর ন্যায় মেগা প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়িত হয়েছে। সর্বোপরি সরকারের সময়োপযোগী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্তের কারণে করোনা অতিমারির সময়েও বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল। ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ দৃশ্যমান। তিনি বলেন, অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজির লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ বিনির্মাণ এবং ২১০০ সালের মধ্যে বদ্বীপ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ পরিপ্রেক্ষিতে জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের সততা, দক্ষতা, নিষ্ঠা ও সেবা প্রদানের মানসিকতার ওপর এসব পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়ন বহুলাংশে নির্ভরশীল। রাষ্ট্রপতি বলেন, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে এর সম্ভাবনাগুলো জনগণের কল্যাণে কাজে লাগাতে জনপ্রশাসনের কর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নে গুরুত্ব দিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য সরকারি কর্মচারীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। দিবসটি উপলক্ষ্যে এক বাণীতে এ আহ্বান জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারো সরকারি কর্মচারীদের সৃজনশীল ও প্রশংসনীয় কাজের জন্য ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস-২০২৩’ উদযাপন এবং ‘বঙ্গবন্ধু জনপ্রশাসন পদক-২০২৩’ প্রদান করা হচ্ছে জেনে আমি আনন্দিত। এ দিবস উপলক্ষ্যে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আমি আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই এবং পদকপ্রাপ্ত সব সরকারি কর্মচারীকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন। তিনি বলেন, সরকারি কর্মচারীরা সাধারণত কর্তৃপক্ষের নির্দেশে দায়িত্ব পালন করে থাকেন। কিন্তু এর মধ্যে কোনো কোনো কর্মচারী প্রচলিত ধ্যান-ধারণার বাইরে গিয়ে নতুন নতুন পদ্ধতি, প্রযুক্তি ও পন্থা ব্যবহার করে চলমান কাজ ও সেবা প্রদান প্রক্রিয়ায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সক্ষম হন। এরূপ উদ্ভাবন-মানসিকতা সম্পন্ন ও উদ্যোগী কর্মচারীদের জন্যই এ পদকের আয়োজন। বিভিন্ন সরকারি দপ্তরের অধিকসংখ্যক কর্মচারীকে পদকের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সম্প্রতি জনপ্রশাসন পদকের ক্ষেত্র ও কলেবর সম্প্রসারণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতা অর্জনের পর, মাত্র নয় মাসেই একটি সংবিধান প্রণয়ন করেছিলেন। সংবিধানের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে ২১(২) অনুচ্ছেদে উল্লেখ করেছেন- ‘সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য।’ তিনি (বঙ্গবন্ধু) সব সময় সরকারি কর্মচারীদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এজন্য তিনি সরকারি কর্মচারীদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন এবং তাদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কল্যাণ নিশ্চিত করার বিষয়ে আন্তরিক ছিলেন। তিনি চাইতেন, প্রতিটি সরকারি কর্মচারী দক্ষ ও সৎ হবেন এবং দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে সঠিক পথে পরিচালিত হবেন। জনপ্রশাসন পদকের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নাম সংযুক্ত করায় প্রধানমন্ত্রী জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘আমার প্রত্যাশা- এর মাধ্যমে জাতির পিতার আদর্শ, দেশপ্রেম, মানবিকতা ও দায়িত্বশীলতা সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে সঞ্চারিত হবে।’ তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার অন্যান্য জনগোষ্ঠীর পাশাপাশি সরকারি কর্মচারীদের কল্যাণের বিষয়েও আন্তরিকভাবে কাজ করে চলেছে। সরকারি কর্মচারীদের দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণ, সুবিধা বৃদ্ধি করা হয়েছে, তাদের জন্য উচ্চশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হয়েছে। গণকর্মচারীদের দক্ষতা উন্নয়নের জন্য একাধিক প্রকল্প চলমান আছে। মাঠপর্যায়ে কর্মরত উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কর্মকর্তা এখন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ পাচ্ছেন। কর্মচারীদের বিভিন্ন প্রকার অনুদান ও কল্যাণ ভাতার পরিমাণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। আমাদের সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর, সরকারি কর্মচারীদের নববর্ষের ভাতা প্রদানসহ বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘গত সাড়ে ১৪ বছরে আমরা দেশের প্রতিটি সেক্টরে কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি অর্জন করেছি। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হয়েছে। এই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছে। আমাদের মাথাপিছু আয় ২০০৫ সালের ৫৪৩ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২ হাজার ৮২৪ মার্কিন ডলার হয়েছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ৪১ দমমিক ৫ শতাংশ হতে কমিয়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে এবং অতি দারিদ্রের হার ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। দেশের শতভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছে। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি। ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং বঙ্গোপসাগরের বিশাল জলরাশিতে আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করেছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সকল ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে আমাদের নিজেদের অর্থে বহুল আকাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু নির্মাণ করেছি’। ঢাকাবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল চালু করা হয়েছে। কর্ণফুলির তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল, পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা-ভাংগা রেল সার্ভিস শিগগিরই চালু করা হবে। তিনি বলেন, ‘আমরা যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আধুনিক ও উন্নত করেছি। আমরা দেশের সকল ভূমিহীন-গৃহহীনকে বাড়ি নির্মাণ করে দিচ্ছি। আমরা জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদক নির্মূলে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে কাজ করে যাচ্ছি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট’ অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমরা নিরলস কাজ করে যাচ্ছি।’ শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সরকার সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করে শাক্তিশালী, কার্যকর ও গতিশীল জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, আগামী দিনের জনপ্রশাসন উদ্ভাবন-মনস্ক, মানবিক এবং নাগরিকবান্ধব হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত