ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শিগগির শুরু হচ্ছে কালুরঘাট সেতু মেরামত

স্থায়ীভাবে ফেরি সার্ভিস রাখা নিয়ে উৎকণ্ঠা

স্থায়ীভাবে ফেরি সার্ভিস রাখা নিয়ে উৎকণ্ঠা

চট্টগ্রামে কালুরঘাট সেতুতে এক সপ্তাহের মধ্যে শুরু হচ্ছে বড় ধরনের মেরামত কাজ। আর সেই মেরামত কাজকে সামনে রেখে কর্ণফুলী নদীতে চালু হচ্ছে ফেরি সার্ভিস। ২১ জুলাই পরীক্ষামূলকভাবে ফেরি চালু করেছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। আর এই ফেরি সার্ভিস চালুর পর সেতুর দুই পাড়ের লোকজনের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎকণ্ঠা। তারা বলেছেন, আমাদের কাছে বিভিন্নভাবে তথ্য আসছে এই ফেরি সার্ভিস নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। এতে দীর্ঘদিন সরাসরি সেতু দিয়ে যানবাহন পারাপারের সুবিধা থেকে বঞ্চিত থাকবে এলাকার মানুষ। এতে বোয়ালখালী উপজেলার পাশাপাশি পটিয়া উপজেলার একাংশের লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ২১ জুলাই বিকালে পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয় ফেরি সার্ভিস। সওজের চট্টগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মোহাম্মদ জাহেদ হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরীক্ষামূলক সার্ভিস তদারক করেন। তারা জানান, সেতু মেরামত কাজ শুরুর পর পরই ফেরি সার্ভিস চালু করা হবে। এরপর মেরামত শেষ না হওয়া পর্যন্ত ফেরি দিয়ে চলবে সব ধরনের যানবাহন। ইতিমধ্যে যানবাহনের টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল হার সহনীয় পর্যায়ে রাখা হয়েছে।

সওজের কর্মকর্তারা জানান, কর্ণফুলী নদী পারাপারের জন্য তিনটি ফেরির ব্যবস্থা করা রয়েছে। দুটি ফেরি চলাচলের জন্য দুই পাড়ে রয়েছে। আরেকটি অতিরিক্ত হিসাবে স্ট্যান্ডবাই থাকবে। কোনো একটি ফেরি অচল হলে সাথে সাথে অতিরিক্ত ফেরি যানবাহন পারাপার কাজে যুক্ত হবে। অর্থাৎ, সব সময় দুটি ফেরি চালু রাখার জন্য অতিরিক্ত একটি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সেতু মেরামতের কাজ শুরু হলে বর্তমানে সেতু দিয়ে চলাচলরত সব ধরনের যানবাহন ফেরিঘাট হয়ে ফেরি দিয়ে চলাচল করবে। পরীক্ষামূলক ফেরি চলাচলে কোনো ধরনের সমস্যা দেখা দেয়নি। তাই আপাতত কোনো ধরনের ঝামেলা ছাড়াই চলবে ফেরি।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেলপথে আগামী সেপ্টেম্বরে ট্রেন চলাচলের উদ্বোধনের শিডিউল রয়েছে। এজন্য ট্রেন লাইন স্থাপনের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। কিন্তু কক্সবাজার রেলপথে ট্রেন চালুর জন্য প্রধান বাধা হয়ে শতবর্ষী কালুরঘাট সেতু। দুর্বল অবকাঠামোর এই সেতু দিয়ে বড় পরিসরের ইঞ্জিনসহ একসঙ্গে ১৬ থেকে ১৭টি বগির ট্রেন চলাচল অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ। এই সেতু দিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানি করা আধুনিক উচ্চগতির কোচসহ ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিন প্রবেশ করতে পারবে না। জরাজীর্ণ সেতুটি বড় পরিসরের ইঞ্জিনের ভার বহন করার মতো নয়। তাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে। বুয়েটের পরামর্শ অনুযায়ী সেতুটি মেরামতের জন্য গত ১৮ জুন ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেডের চুক্তি স্বাক্ষর হয়। ৪৩ কোটি টাকা ব্যয় হবে মেরামতে। মেরামতকারী ওই প্রতিষ্ঠান দক্ষিণ কোরিয়া থেকে আমদানিকৃত উচ্চগতির কোচসহ ১৫ এক্সেল লোডের ইঞ্জিন নিয়ে ট্রেন চলাচলের উপযোগী করে কালুরঘাট সেতু মেরামত করবে, যাতে ঢাকা থেকে আসা কক্সবাজারগামী ট্রেন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের প্রকৌশলীরা জানান, সেতুর মেরামত কাজ খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে শুরু হবে। কারণ, এখন কক্সবাজার-চট্টগ্রাম ট্রেন সার্ভিস চালু করা জরুরি। তাই কালুরঘাটে ফেরি সার্ভিস চালু হয়েছে। ফেরি দিয়ে যানবাহন চলাচলে নিরাপত্তার কোনো ঘাটতি হবে না। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রেললাইনের প্রায় ৮৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ১০১ কিলোমিটার রেললাইনের মধ্যে এ পর্যন্ত প্রায় ৮৩ কিলোমিটার রেললাইন স্থাপন হয়েছে। সেপ্টেম্বরের শেষের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটে আমরা ট্রেন চালু হতে পারে। প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের কথা রয়েছে। এই লক্ষ্যে কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। সওজ ইতিমধ্যে ফেরি সার্ভিস চালুর সাথে সাথে ফেরি দিয়ে পারাপারে যানবাহনের টোল আদায়ের হারও নির্ধারণ করেছে। সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম সড়ক সার্কেলের প্রকৌশলীরা জানান, ফেরি সার্ভিস টেকসই হবে। পরীক্ষা করে তা দেখা গেছে। সেতু মেরামতের কাজ শুরু হলে সব ধরনের যানবাহন ফেরি দিয়ে চলাচল করবে। ফেরি পারাপারের জন্য মোট তিনটি ফেরির ব্যবস্থা রয়েছে। দুটি ফেরি সবসময় চলাচল করবে এবং একটি স্ট্যান্ডবাই থাকবে। ফেরি পারাপারের টোল আদায়ের হারও নির্ধারণ করা হয়েছে। টোল হার অনুযায়ী ট্রেইলার পারাপারে টোল নেয়া হবে ৫৬৫ টাকা, হেভি ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান ৪৫০ টাকা, ২ এক্সেল বিশিষ্ট মিডিয়াম ট্রাক ২২৫ টাকা, বড় বাস ২০৫ টাকা, মিনি ট্রাক ১৭০ টাকা, পাওয়ার ট্রিলার-ট্র্যাক্টর ১৩৫ টাকা, মিনিবাস (৩০ জনের) ১১৫ টাকা, মাইক্রোবাস, পিকআপ, জিপ ৯০ টাকা, প্রাইভেট কার ৫৫ টাকা, সিএনজি টেক্সি ২৫ টাকা, মোটরসাইকেল ১০ টাকা এবং রিকশার টোল নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ টাকা।

এদিকে ফেরি সার্ভিস নিয়ে কালুরঘাট সেতুর দুই পাড়ের লোকজনের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। তারা বলেছেন, আমরা শুনতে পাচ্ছি ফেরি সার্ভিস স্থায়ীভাবে বহাল রাখা হবে। নতুন সেতু না হওয়া পর্যন্ত কালুরঘাট সেতু আর কখনো ব্যবহার করতে পারবে না দুই পাড়ে চলাচলকারী যানবাহন। সে ক্ষেত্রে ফেরি দিয়ে অন্তত ৭ থেকে ৮ বছর চলাচল করতে হবে। এতে লোকজনের চরম দুর্ভোগ হবে।

কালুরঘাট পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা সংবাদকর্মী লোকমান চৌধুরী বলেন, ফেরি সার্ভিস স্থায়ীভাবেই চালু রাখা হবে বলে আমরা বিভিন্নভাবে জানতে পারছি। কালুরঘাট সেতু মেরামতের পর তা আর ব্যবহার করতে পারবে না বোয়ালখালীর বাসিন্দারা। যদি তাই সত্য হয়, লোকজন চরম দুর্ভোগ পোহাবে। আমরা সরকারি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ করব, মেরামতের পর পরই যেন কালুরঘাট সেতু খুলে দেয়া হয়। অন্যথায় লোকজন সীমাহীন ভোগান্তি পোহাবে। ফেরি দিয়ে বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচল কখনো নিরবচ্ছিন্ন রাখা যাবে না।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত