সরকারবিরোধী আন্দোলন

নামেই ৩৬ দল!

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আমিরুল ইসলাম অমর

সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে বিএনপিসহ ৩৬ রাজনৈতিক দল নানা কর্মসূচি পালন করছে। এসব দলের মধ্যে অধিকাংশ বিএনপির সমমনা দল যুক্ত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট ও গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য। এরইমধ্যে এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণার পর বিএনপির পাশাপাশি এসব দল বা জোট বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছে। বিএনপি ছাড়াও এক দফা আন্দোলনে একমত হয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ৬ দল- জেএসডি, নাগরিক ঐক্য, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি, গণসংহতি আন্দোলন, ভাসানী অনুসারী পরিষদ ও রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, এলডিপি, গণফোরাম (একাংশ), পিপলস পার্টি, গণঅধিকার পরিষদ, বাংলাদেশ লেবার পার্টি। ১২ দলীয় জোট ও জাতীয়তাবাদী সমমনা জোটে থাকা- জাতীয় পার্টি (জাফর), বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, বাংলাদেশ এলডিপি, বাংলাদেশ জাতীয় দল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগ, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, ইসলামী ঐক্যজোট (মাওলানা আবদুর রকীব), জাগপা (তাসমিয়া প্রধান), বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি), জাগপা (লুৎফর), ডেমোক্রেটিক লীগ, পিপলস লীগ, বাংলাদেশ ন্যাপ (শাওন), বিকল্প ধারা বাংলাদেশ (নুরুল আমিন বেপারী), সাম্যবাদী দল (নূরুল ইসলাম), গণদল, ন্যাপ ভাসানী (আজহারুল ইসলাম) ও বাংলাদেশ মাইনরিটি পার্টি। গণতান্ত্রিক বাম ঐক্যের সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি, সমাজতান্ত্রিক মজদুর পার্টি, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (মার্কবাদী-লেলিনবাদী) ও প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল। বিএনপি নেতারা জানান, সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে বিএনপিসহ ৩৬টি দল একযোগে আন্দোলন করছে। পরে আরো কয়েকটি দল যুক্ত হতে পারে। যদিও জামায়াত এখন পর্যন্ত বিএনপি ছাড়া অন্য কোনো দল তেমন বড় কোনো কর্মসূচি বা শোডাউন করতে পারেনি। এতে মাঠের আন্দোলনে বিএনপি ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর সক্ষমতা নিয়ে নানা প্রশ্ন রয়েছে। কেউ কেউ বলছেন, বিএনপি-জামায়াত ছাড়া কার্যত রাজপথের আন্দোলনে অন্যান্য দলগুলোর জোরালো ভূমিকা রাখার মতো তেমন সক্ষমতা নেই। বিরোধী মতের পাল্লা ভারি করতেই এদের সঙ্গে রাখা হয়েছে। কয়েকটি দল ছাড়া বাকি দলগুলো শুধু নামেই রয়েছে। মাঠের আন্দোলনে তাদের তেমন সক্ষমতাও দেখা যাচ্ছে না। সরকার পতনের আন্দোলনে সমমনা দলগুলো নিয়ে অনেকটা দ্বিধাগ্রস্ত বিএনপি। এজন্য তারা অন্য কোনো দলের উপর ভরসা না করে নিজেরাই বড় ধরনের কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। চেষ্টা করছে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলার।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, আমরা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে নেমেছি। বিএনপি একটি বড় দল। দলে লাখ লাখ নেতাকর্মী আছে। বিএনপির এক দফা আন্দোলনের সঙ্গে অনেক সমমনা দলও আছে। যদিও রাজপথের আন্দোলনে ভূমিকা রাখতে জামায়াত ছাড়া অন্যান্য দলগুলোর তেমন ক্ষমতা নেই। কাজেই সরকার পতনের আন্দোলন বিএনপিকেই করতে হবে।

জানামতে, সরকারের পদত্যাগ, সংসদ বিলুপ্তি ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচনের এক দফা আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়ে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো গত কয়েক দিন ধরে রাজপথে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরইমধ্যে ঢাকা এবং সারা দেশের মহানগরী ও জেলা পর্যায়ে পদযাত্রা করেছে দলটি। গত ২২ জুলাই রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে বিএনপি। ওই সমাবেশ থেকে মহাসমাবেশের ঘোষণাও দিয়েছে দলটি। ২৭ জুলাই বৃহস্পতিবার নয়াপল্টনে এ মহাসমাবেশ করতে চায় দলের হাইকমান্ড।

এক দফা আন্দোলনে বিএনপি ছাড়া অন্যান্য সমমনা দলগুলোর মাঠের আন্দোলনে কতটা সক্ষমতা আছে বলে জানতে চাইলে বিএনপির সিনিয়র এক নেতা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে আসছি। এখন আমাদের সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চলছে। এই আন্দোলনের সঙ্গে আরো ৩৬টি দল আছে। তারাও এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে যেতে চায় না। তারা আমাদের সঙ্গে তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অনেক ছোট ছোট দলও এই আন্দোলনের সঙ্গে আছে তাদের সক্ষমতা তো আর বড় দলগুলোর মতো হবে না।

লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপির প্রেসিডেন্ট কর্নেল ড. অলি আহমদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সবাই মিলে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, চূড়ান্ত আন্দোলন এক দফারই আন্দোলন। এক দফার কর্মসূচিতে এলডিপিও রাজপথে থাকবে।’ যদিও এখন পর্যন্ত রাজপথের আন্দোলনে এলডিপির তেমন কর্মসূচি চোখে পড়েনি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলডিপির এক নেতা বলেন, বিএনপির আন্দোলনের সঙ্গে একমত থাকলেও পরিস্থিতি বুঝে দল ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বলেন, আমরা বিএনপির এক দফা আন্দোলনের সঙ্গে একমত হয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। এরই অংশ হিসেবে ২৭ তারিখ রাজধানীর বিজয়নগরে মহা বিক্ষোভ সমাবেশ করব। আন্দোলনে ৩৬ দলের ভূমিকা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান বলেন, বিএনপির তারুণ্যের সমাবেশ ছিল তাদের একক প্রোগ্রাম। পদযাত্রা ছিল সবার। আমরা পদযাত্রায় অংশগ্রহণ করেছি। ২৭ জুলাই বিএনপি এককভাবে মহাসমাবেশ করবে। জোটগুলো আলাদা আলাদা প্রোগ্রাম করবে। ওই দিন বাংলাদেশ লেবার পার্টি রাজধানীর বিজয় নগর পানির ট্যাঙ্কির সামনে সমাবেশ করবে। এক প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, বিএনপির সঙ্গে অনেক দল আছে যাদের অধিকাংশকেই আন্দোলন সংগ্রামে দেখা যায় না। অনেক দল আছে যেখানে লোক আছে একজন। আরো কিছু দল বিএনপির সঙ্গে যোগ দিলে, দলের সংখ্যা বাড়বে ঠিকই। আন্দোলনে কোনো ভূমিকা রাখতে পারবে না। আমরা দীর্ঘদিন ধরে রাজপথের আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে আসছি।

গণতন্ত্র মঞ্চের অন্যতম শরিক দল গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার রক্ষায় আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। বিএনপির এক দফা আন্দোলনের সঙ্গে আমরাও আছি। ২৭ জুলাই জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে অথবা পুরানা পল্টনে সমাবেশ করব। আমরা অনুমতির জন্য আবেদন জানিয়েছি। এক দফার আন্দোলনে ৩৬ দলের সক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে তিনি বলেন, যার যতটা সক্ষমতা আছে সে ততটাই করবে। এই আন্দোলন শুধু আমাদের নয়, এটা জনগণের আন্দোলন।