পর্যটন শিল্পে নবদিগন্তের হাতছানি

রেলপথে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার

প্রকাশ : ২৬ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন, কক্সবাজার থেকে ফিরে

দেশের ইতিহাসে প্রথম রেলপথ যোগ হচ্ছে পর্যটন নগরী কক্সবাজারে। হুইসেল বাজিয়ে রেল যাবে সমুদ্রের শহরে। বাস ও বিমানের পর রেলযোগে কক্সবাজার যেতে পারবেন পর্যটকরা। রেলপথ চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার যাতায়াত অধিকতর সহজ হবে। রেলপথে যাতায়াত শুরু হলে কমবে ভোগান্তি, বাঁচবে সময় ও টাকা। বাড়বে পর্যটক সমাগম। পর্যটনশিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকরা রাখবে রেলপথ। এছাড়া সামুদ্রিক পণ্য মাছ, লবণ, কাঁচামালসহ নানা দ্রব্যাদি পরিবহণে খরচ কমবে। গতিশীল হবে দেশের রাজস্ব খাতও।

কক্সবাজার ঘুরে দেখা গেছে, রেলপথকে কেন্দ্র করে কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নের চান্দেরপাড়ায় ২৯ একর জায়গায় নির্মাণ হচ্ছে চোখ ধাঁধানো রেলস্টেশন। সমুদ্র শহরের এতিহ্য ঝিনুক। সেই ঝিনুকের আদলে নির্মাণ হচ্ছে রেলস্টেশন, যার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ছয়তলা স্টেশন ভবনের চারতলা পর্যন্ত মূল কাঠামোর কাজও শেষ হয়েছে। স্টেশন ভবন ছাড়াও আরো ১৭টি স্থাপনা প্রস্তুত হয়েছে। ১ লাখ ৮৭ হাজার বর্গফুট আয়তনের রেলস্টেশনে থাকবে আন্তর্জাতিক মানের সুযোগ-সুবিধা। পর্যটকরা স্টেশনের লকারে লাগেজ রেখে সারাদিন সমুদ্রসৈকতে ঘুরতে পারবেন। ছয়তলা ভবনের নিচ তলায় থাকবে যাত্রীদের টিকিট কাটার ব্যবস্থা। এছাড়া ক্যান্টিন, হোটেল, মার্কেটসহ ৫ হাজার মানুষের ধারণক্ষমতার কনভেনশন সেন্টার থাকবে কক্সবাজার আইকনিক রেলস্টেশনে।

স্থানীয়রা বলেছেন, দেশের ইতিহাসে প্রথম রেলপথের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে কক্সবাজার। ব্রিটিশ শাসন থেকে শুরু করে কোনো সরকারই ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথ করার চিন্তা করেনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তে ঢাকা থেকে কক্সবাজার রেলপথ চালু হতে যাচ্ছে। কাজ প্রায় শেষ। রেলপথ চালু হলে কক্সবাজারে পর্যটকদের আগমন বাড়বে। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক উন্নয়ন হবে। আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে। যোগাযোগব্যবস্থা ও শিক্ষার মানোন্নয়ন হবে।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার এবং রামু থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১০ সালে এই কাজ শুরু হয়, শেষ হওয়ার মেয়াদ রয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। প্রথম পর্যায়ে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০০ দশমিক ৮৩১ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হচ্ছে। এই পথে রেলস্টেশন থাকছে ৯টি। পুরো প্রকল্পের জন্য ১ হাজার ৩৯১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। কক্সবাজার সদরের ঝিলংজায় নির্মিত হচ্ছে আইকনিক রেলস্টেশন। সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক স্থাপন ও স্টেশনের কাজ এরই মধ্যে ৮৬ শতাংশ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে রামু থেকে ঘুমধুম পর্যন্ত ২৮ দশমিক ৭৫২ কিলোমিটার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ ট্র্যাক নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় হচ্ছে ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ টাকা।

জানতে চাইলে দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, এ প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। আশা করছি, সেপ্টেম্বরের ১৫ থেকে ৩০ তারিখের মধ্যে চট্টগ্রাম তথা ঢাকা থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত একটি ট্রায়াল রান করা হবে। বাণিজ্যিকভাবে রেল চালু হতে কয়েক মাস সময় লাগবে। প্রাথমিকভাবে দুই জোড়া রেল চলবে। পরে রেলের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ঢাকা থেকে যেসব রেল চট্টগ্রাম পর্যন্ত আসে, সেসব রেলের শেষ গন্তব্য হবে কক্সবাজার। এছাড়া সম্পূর্ণ নতুন একটি রেল চালু হবে। কুয়েত থেকে নতুন কোচ আনা হয়েছে। তবে এখনো রেলের নাম নির্ধারণ করা হয়নি।

তিনি বলেন, ১৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে শুধু কক্সবাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করতেই ২১৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ প্রকল্পের ৮৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে, সামান্য কিছু কাজ বাকি আছে। রেল চালু হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আসতে সময় লাগবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা লাগবে। এসি সিটের ভাড়া ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত হতে পারে। আর নন-এসি হতে পারে ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা হতে পারে। কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান আলোকিত বাংলাদেশকে বলেন, কক্সবাজার হচ্ছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র বন্দরের অন্যতম একটি। এটি উন্নতমানে পর্যটন নগরী গড়তে কক্সবাজার রেলপথও চালু হতে যাচ্ছে। রেলস্টেশনের অত্যাধুনিক ভবন নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। দেশের একমাত্র আইকনিক স্টেশন হচ্ছে কক্সবাজারে। যাত্রীরা এখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা পাবেন। রেলপথ চালুর পর কক্সবাজারকে নতুন করে চিনবেন পর্যটকরা।