ঢাকায় মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি : একদিন পেছাল সমাবেশ

বিএনপিকে একা খেলতে দেবে না আওয়ামী লীগ

সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র কয়েক মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন রাজনীতির মাঠ অনেকটা উত্তপ্ত। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের অনড় অবস্থানে রাজনীতি এখন রাজপথে গড়াচ্ছে। মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। দুই দলেরই টার্গেট ঢাকাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে- এমন সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বে না ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এদিকে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা। রাজপথ দখলে রাখতে কয়েক মাস ধরেই এই দুই দল ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও দিন দিন তা সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।

প্রকাশ : ২৭ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  রাহাত হুসাইন

নির্বাচন সামনে রেখে সরকার পতনের একদফা কর্মসূচি পালন করছে বিএনপি। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল শুক্রবার রাজধানী ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। বিএনপির মহাসমাবেশের দিন পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকবে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। রাজধানীর ঢাকায় ‘শান্তি ও উন্নয়ন’ শিরোনামে সমাবেশ করবে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ এবং ছাত্রলীগ। সহযোগী সংগঠনের এই আয়োজনে যোগ দেবেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। নির্বাচনের কয়েক ৫ মাস আগে রাজপথে বিএনপিকে একা খেলতে দেবে না ক্ষমতাসীনরা। বিএনপির কর্মসূচির দিন পাল্টা কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকছে আওয়ামী লীগ। ‘শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ’ বড় ধরনের শোডাউনের প্রস্তুতি নিয়েছে আওয়ামী লীগের তিন সহযোগী সংগঠন। বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সম্ভাব্য সন্ত্রাস-নৈরাজ্য ঠেকাতে সতর্ক অবস্থানে থাকবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী। ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে পাহারা বসাবে আওয়ামী লীগ। শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীর বাহিরেও ঢাকার বাসিন্দাদের সম্পৃক্ত করতে চায় ক্ষমতাসীনরা। এজন্য টানা কয়েক দিন লিফলেট বিতরণ ও মাইকিং করেছে আওয়ামী যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। মাইকিংকালে ২০১৪ সালে বিএনপি-জামাতের জ্বালাওপোড়ায় কর্মসূচির বিষয়টি তুলে ধরেন। পাশাপাশি বিএনপি-জামায়াতকে বর্জন করে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে আওয়ামী লীগে পাশে থাকারও আহ্বান জানান। ঢাকাবাসীর উদ্দেশে বলা হয়- গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হবে, নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে বিএনপি-জামায়াত দেশবিরোধী চক্র আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। অগ্নিহত্যার ড্রেস রিহার্সেল হিসেবে তারা ঢাকা শহরের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাংলা কলেজে সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। লাইব্রেরি ভাঙচুরসহ ছাত্রীদের ওপর হামলা ও শ্লীলতাহানি করে, বগুড়ায় ইয়াকুবিয়া বালিকা বিদ্যালয়ে হামলা করে শতাধিক ছাত্রীকে আহত করে। খাগড়াছড়ি ও লক্ষ্মীপুরে আওয়ামী লীগের শাস্তি সমাবেশে হামলা করে শতাধিক মানুষকে আহত করেছে। আসুন, জনগণ ও দেশের স্বার্থে ঢাকা বিভাগীয় শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশ সফল করি। রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার ডিজিটাল বাংলাদেশকে স্মার্ট বাংলাদেশে রূপান্তরিত করি। এই সমাবেশ হয়ে উঠুক সকল প্রগতিশীল মানুষের মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের নিবেদিত দেশপ্রেমিক জনগণের নিপাত যাক বিএনপি-জামায়াতসহ দেশবিরোধী সকল অপশক্তি।

বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সরব থাকার বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোর প্রতিটি ইউনিট, ওয়ার্ড, থানা, জেলা এবং স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে নেতাকর্মীদের সতর্ক অবস্থানে থাকবে। দলের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, শান্তিপূর্ণ সমাবেশের কথা বলে বিএনপি নেতাকর্মীরা যাতে দেশে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে, সেজন্য অতীতের মতোই আমাদের নেতাকর্মীরা মাঠে সতর্ক অবস্থানে থাকবে। বিএনপি দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে, তাদের সড়যন্ত্র আমরা রাজনৈতিভাবে মোকাবিলা করব।

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। বলেন, যারা উন্নয়ন ও অগ্রগতির পথে বাধা হবে, তাদেরই প্রতিরোধ করা হবে। আন্দোলনের নামে রাজনীতির মাঠ অরাজকতা করার সুযোগ কাউকে দেয়া হবে না।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাঈনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় এই বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন হবে। নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয় জেনে দেশবিরোধী চক্র, প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী আবারও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা শান্তি চাই, কেউ এই শান্তি ভঙ্গ করতে এলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

স্থান ও তারিখ পরিবর্তন : কাঙ্ক্ষিত স্থানে পুলিশের অনুমতি না পেয়ে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলো নিজ নিজ সমাবেশের দিন পিছিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষে যুবলীগ জানিয়েছে, তারাও আগামীকাল শুক্রবার সমাবেশ করবে শেরেবাংলা নগরে মেলা মাঠে। আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া বলেন, আগারগাঁওয়ের বাণিজ্য মেলা মাঠটি সমাবেশের জন্য উপযোগী নয়। মাঠটিকে ব্যবহার উপযোগী করার জন্য একদিন সময় প্রয়োজন। এজন্য আমাদের শান্তি সমাবেশ একদিন পিছিয়ে ২৮ জুলাই শুক্রবার করা হয়েছে। এর আগে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি আজ সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছিল। তবে কার্যদিবসে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ তাদের অনুমতি দেয়নি।