ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

ঢাকায় মুখোমুখি আওয়ামী লীগ-বিএনপি : একদিন পেছাল সমাবেশ

রাজপথ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বিএনপির

সরকারের মেয়াদ প্রায় শেষের দিকে। আর মাত্র কয়েক মাস পরই দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। আসন্ন এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এখন রাজনীতির মাঠ অনেকটা উত্তপ্ত। নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে দেশের বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কোনো ছাড় দিতে রাজি নয়। তাদের অনড় অবস্থানে রাজনীতি এখন রাজপথে গড়াচ্ছে। মাঠ নিজেদের দখলে রাখতে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি পালন করে আসছে তারা। দুই দলেরই টার্গেট ঢাকাকে তাদের নিয়ন্ত্রণে রাখা। সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে- এমন সিদ্ধান্ত থেকে একচুলও নড়বে না ক্ষমতাসীনরা। অন্যদিকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার অথবা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে মাঠের বিরোধী দল বিএনপি। এদিকে বিএনপির আন্দোলন মোকাবিলা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়ে মাঠে সক্রিয় ক্ষমতাসীনরা। রাজপথ দখলে রাখতে কয়েক মাস ধরেই এই দুই দল ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছে। শুরুতে শান্তিপূর্ণ থাকলেও দিন দিন তা সহিংসতায় রূপ নিচ্ছে।
রাজপথ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা বিএনপির

দীর্ঘ ১৭ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে নানা কর্মসূচি পালন করে আসছে। এরই মধ্যে ঢাকাসহ সারাদেশে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে দলটি। গত ১২ জুলাই একদফা আন্দোলনের ঘোষণা দিয়ে জোরেশোরে মাঠে নেমেছে বিএনপি। এরই মধ্যে একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা করেছে দলটি। আন্দোলন ঢাকামুখী করতে তৃণমূল থেকে ঢাকা অভিমুখী কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ বৃহস্পতিবারের পরিবর্তে আগামীকাল শুক্রবার রাজধানীতে মহাসমাবেশ করবে দলটি। মহাসমাবেশে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। ঢাকা বিভাগের সব জেলার নেতাকর্মীদের রাজধানীর সমাবেশে যোগ দিতে কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় টানা কয়েক দিন ঢাকায় অবস্থান করতে হতে পারে বলেও তাদের জানানো হচ্ছে। এবার যেকোনো উপায়ে ঢাকার রাজপথ নিয়ন্ত্রণে রাখতে চায় দলটির নেতাকর্মীরা। সমাবেশ কিংবা মহাসমাবেশের পাশাপাশি একদফা দাবি আদায়ে সরকারকে আলটিমেটাম দেয়াসহ লাগাতার কর্মসূচির ঘোষণা দিতে পারে দলটি। ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনের অংশ হিসেবে হরতাল, অবরোধ, অবস্থান কর্মসূচি কিংবা ঘেরাওয়ের ডাকও আসতে পারে। এছাড়া আন্দোলন সফল করতে ঢাকাকে সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়ারও পরিকল্পনা আছে দলটির। আগস্ট মাস থেকে লাগাতার কর্মসূচিতে থাকবে দলটি। যদিও এখনি কঠোর আন্দোলনে না গিয়ে ধীরে ধীরে কঠোর আন্দোলনে যাবে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায়ে গণঅভ্যুত্থানের পরিকল্পনা দলটির। বিএনপির একাধিক সূত্র থেকে এমন তথ্য জানা গেছে।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, বিগত আন্দোলনে রাজধানী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। তাই চূড়ান্ত সফলতা পাওয়া যায়নি। তাই এবার ঢাকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখার পরিকল্পনা নিয়ে কর্মসূচি চূড়ান্ত করা হচ্ছে। সারা দেশে কর্মসূচি না দিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের রাজধানীমুখী করার চেষ্টা চলছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থেকে ঢাকার আন্দোলন সফল করার আহ্বান জানিয়েছেন।

মহাসমাবেশের বিষয়ে ঢাকা বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ বলেছেন, ঢাকা বিভাগের সব জেলাসহ সারা দেশের নেতাকর্মী, সমর্থক এবং সাধারণ মানুষ মহাসমাবেশে অংশ নেবেন। এজন্য যেসব প্রস্তুতি নেয়ার তা নেয়া হয়েছে। আশা করি, পুলিশ নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দেবে না। কারণ, আমরা ন্যায়সংগত অধিকারের পক্ষে রাস্তায় নেমেছি। ন্যায়সংগত অধিকারের পক্ষে পুলিশসহ সব প্রশাসন থাকবে বলে আমাদের বিশ্বাস।

বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা জানান, ‘চলো চলো, ঢাকা চলো’ স্লোগান তুলে বিএনপির ৮২ সাংগঠনিক জেলার নেতাকর্মীরা ঢাকার মহাসমাবেশে যোগ দেবেন। এরই মধ্যে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি চেয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যদিও নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি ডিএমপি। অনুমতি না পেলেও ওই দুই জায়গার যেকোনো এক জায়গায় সমাবেশ করার পরিকল্পনা আছে দলটির।

বিএনপি নেতারা জানান, ডিসেম্বরে ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশের স্থান নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছিল। সে সময় ৫ শতাধিক নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারের পর কয়েক ঘণ্টা আগে গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশের অনুমতি পেয়েছিল বিএনপি। এবার যাতে সে ধরনের পরিস্থিতিতে না পড়তে হয়, সেজন্যই নয়াপল্টনের পাশাপাশি বিকল্প জায়গা চাওয়া হয়েছে। তারা আরো জানান, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর রাজধানীতে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের পর থেকে ধারাবাহিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। দীর্ঘ সাত মাস আন্দোলনের পর এখন একদফা দাবিতে মহাসমাবেশের ডাক দেওয়া হয়েছে। আন্দোলনের গতি চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াই এই কর্মসূচির লক্ষ্য।

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই মহাসমাবেশ হঠাৎ করে আসেনি। ১৪ থেকে ১৫ বছর ধরে দেশের সব রাজনৈতিক দল ও সংগঠন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য আন্দোলন করছে। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সংসদ ও সরকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে এবং জনগণের মুক্তির লক্ষ্যে যুগপৎ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপিসহ ৩৬টি রাজনৈতিক দল ঢাকায় মহাসমাবেশ আহ্বান করেছে। এটি এখন দেশের জনগণের সমাবেশ। এখান থেকে আমরা বার্তা দিতে চাই যে, অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ এবং নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে বিএনপির ডাকা ২৮ জুলাই মহাসমাবেশের দিন রাজধানীতে যুবলীগের সমাবেশের মাধ্যমে সরকার সংঘাত সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে। কোনো ধরনের সংঘাত হলে এর দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, দলের নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিয়ে কয়েকদিন বড় কর্মসূচি করতে পারলে ক্ষমতাসীন দল ও প্রশাসনে আন্দোলন নিয়ে ভীতির সঞ্চার হতে পারে। পক্ষান্তরে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিএনপির আন্দোলন নিয়ে আস্থা ও জনপ্রিয়তা বাড়বে। জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাস্তায় নেমে আসবে। এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সরকারের সামাল দেওয়া কঠিন হবে এবং চাপে পড়বে।

কোনো কোনো নেতার মতে, বিএনপির আন্দোলন নিয়ে বিদেশি প্রভাবশালী কিছু রাষ্ট্রেরও আগ্রহ আছে। সেই লক্ষ্যেই ঢাকার মহাসমাবেশের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলনের শক্তি দেখাতে চাইছে দলটি। রাজধানীতে শক্তি দেখাতে পারলে বিএনপি বিদেশিদের সমর্থন পেতে পারে। মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর আন্দোলন দমনে কঠোর পদক্ষেপ নিলে আন্তর্জাতিকভাবে সরকার কঠিন চাপে পড়বে। আর বাধা না দিলে আন্দোলন গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেবে।

বিএনপির হাইকমান্ড বলেছে, আমরা সরকারকে অনেক সময় দিয়েছি, আর নয়। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে সরকারকে বাধ্য করা হবে। এজন্য দলের নেতাকর্মীরা প্রস্তুত। তফসিল ঘোষণার আগেই এই সরকারের পতন নিশ্চিত করা হবে। সেই টার্গেটেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। তারা বলেন, সরকারের পাতানো খেলায় পা না দেয়াই এখন আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। গণঅভ্যুত্থান কিংবা সরকারের পতন কখনো সময় নির্ধারণ করে হয় না। তাই সর্বাত্মক প্রস্তুতি থাকলে পতন আন্দোলন বেশি সময় লাগবে না।

সূত্র মতে, আগামীকাল শুক্রবার একই দিন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংঘাতের আশঙ্কা করছেন কেউ কেউ। দল দুটির দায়িত্বশীল নেতারা এমন আশঙ্কা করায় আরো ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত