সবার দৃষ্টি আজ ঢাকায়

বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে আ. লীগের সমাবেশ

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে সরকারের পদত্যাগ ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজপথের দল বিএনপি। অন্যদিকে সংবিধান অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে, এমন ঘোষণা দিয়ে শান্তি সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। একদফা আন্দোলনের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার মহাসমাবেশ করার ঘোষণা দেয় বিএনপি। মহাসমাবেশের স্থান হিসেবে নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অথবা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠন বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইটে শান্তি সমাবেশের অনুমতি চায়। পুলিশ কাউকেই ২৭ জুলাই সমাবেশের অনুমতি দেয় না। একদিন পর ২৮ জুলাই শুক্রবার ২৩ শর্তে বিএনপিকে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ও আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনকে বায়তুল মোকাররম দক্ষিণ গেইটে সমাবেশের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি)। এদিকে পাল্টাপাল্টি এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীবাসীর মধ্যে চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। দেশের বড় এই দুই দলের আন্দোলন এখন দেশের আলোচনার শীর্ষে। আজ শুক্রবার বিএনপির মহাসমাবেশ ও আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা দেখতেই সবার দৃষ্টি আজ ঢাকার দিকে।

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন ও আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে মহাসমাবেশ করবে বিএনপি। অন্যদিকে দেশকে অস্থিতিশীল করার প্রতিবাদে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটেই আজ বিকাল ৩টায় শান্তি সমাবেশ করবে আওয়ামী লীগে তিন সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ।

শান্তি সমাবেশে তরুণ-যুবকদের ঢল নামানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে তিন সংগঠনের নেতারা। পাশাপশি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদেরও পাশে চায় তারা। শান্তি সমাবেশ নিয়ে গতকাল বিকালে বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের নেতারা বলেন, বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা গণতন্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে সন্ত্রাসী রাজনীতিকে বৈধতা দিতে চায়। তারা শান্তিতে বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে রক্তপাত, খুন, গুম ধর্ষণ হত্যা। সমাবেশের নামে বিএনপি কোনো অহিংস পরিবেশ সৃষ্টি করলে যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ, সর্বোপরি জনগণ তাদেরকে দাঁতভাঙা জবাব দেবে।

সংবাদ সম্মেলনে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আলহাজ মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার হাত ধরে দেশ এগিয়ে চলছে। দেশের উপরে কেউ আঘাত করলে তাদের প্রতিহত করতে আমরা সর্বদা মাঠে থাকব। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে ঘিরে দেশের তরুণ সমাজ তাদের ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন। দেশের মানুষের সেই ভবিষ্যৎ নষ্ট করতে বিএনপি-জামায়াত চক্রান্ত-ষড়যন্ত্র করছে। তাদের সেই চক্রান্ত রুখে দেওয়ার জন্যই যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগ শান্তি সমাবেশের আহ্বান করেছে। শান্তি সমাবেশ শুধু যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মী আসবে এমন নয়- সারাদেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামবে।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিএনপিকে অনুসরণ করছি না, তাদের পাল্টা জবাব দেওয়ার জন্য মাঠে থাকছি না। আমরা মাঠে থাকছি বিএনপির সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে। পৃথিবীর সব দেশেই রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড সহাবস্থানে হয়ে থাকে। এখানে বাধা কোথায়? বিএনপি একটি দেশ ধ্বংসকারী, ষড়যন্ত্রকারী দল। বিএনপির দেখাদেখি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দল কর্মসূচি দেবে এটা আমরা বিশ্বাস করি না, দেশবাসীও বিশ্বাস করে না। তাদের অন্যায়, অত্যাচার, জুলুম থেকে জনগণকে রক্ষার জন্য আমাদের এই কর্মসূচি। তরুণ সমাজকে ধ্বংস করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তার ছেলে তারেক রহমান তরুণ-ছাত্র সমাজকে ধ্বংস করেছেন। তিনি আবার লন্ডনে বসে যুবসমাজকে ধ্বংসের চেষ্টা করছেন। তারুণ্যের সমাবেশের নামে তারা যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন জায়গায় হত্যা করছেন।

বাংলার মাটিতে বিএনপি-জামায়াতকে আর স্থান দেওয়া হবে না- উল্লেখ করে মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, দেশের মাটিতে বঙ্গবন্ধুর খনি জিয়ার দলের স্থান দেওয়া যায় না। বাংলার মাটিতে ২১ আগস্টের গ্রেনেট হামলাকারীদের আর স্থান দেওয়া যায় না। দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণে অতীতেও আমরা মাঠে ছিলাম, থাকব। অনুমতি পাওয়ার পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে সমাবেশের প্রস্তুতি শুরু হবে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষদের আজকের সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। দেশব্যাপী ছাত্র-যুব ও জনতার প্রতি আহ্বান জানিয়ে নিখিল বলেন, আসুন বিএনপি-জামায়াতের হত্যা-ষড়যন্ত্র নৈরাজ্যের বিরুদ্ধে সোচ্ছার হই। শান্তি সমাবেশে যোগ দিই।

সংবাদ সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন, যারা গণতন্ত্রের লাইসেন্স দিয়ে সন্ত্রাসী রাজনীতিকে বৈধতা দিতে চায়। রাজনৈতিক সমাবেশের নামে দুর্নীতিবাজদের পুনর্বাসন করতে চায়।

দেশের জনগণের আত্মমর্যাদা, দেশের সার্বভৌমত্ব, জনগণের রায়ের বাইরে, বিদেশিদের রায় পাওয়াকে রাজনীতির উপজীব্য করতে চায়, আজকে তাদের বিরুদ্ধে আমরা সোচ্চার হয়েছি। যারা দেশের শিক্ষাঙ্গনকে আক্রমণের বিষয়বস্তুতে পরিণত করতে চায়। তাদের বিরুদ্ধে, ছাত্রসমাজ তাদের প্রয়োজনেই আমরা তিনটি সংগঠন একত্রিত হয়েছি। সন্ত্রাসীরা যাতে বিনা চ্যালেঞ্জে পার না পায়। যারা হত্যা-ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করছে, তাদের স্থায়ী পরাজয়ের যাতে আমরা নিশ্চিত করতে পারি। যেকোনো মূলে দেশের সাংবিধানিক গণতান্ত্রিক রাজনীতি যাতে আমরা অক্ষুণ্ণ রাখতে পারি। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নেওয়ার লড়াইয়ে বিজয়ী আমরা আজ একত্রিত হয়েছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক একেএম আফজালুর রহমান বাবু।