রাজনৈতিক ‘গুটির চাল’ হিরো আলম

বিদেশিদের বিধিবহির্ভূত বিবৃতির সঠিক জবাব দিল মন্ত্রণালয়

প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  আরিফুল ইসলাম

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনীতির মাঠে হিরো আলমকে ‘গুটির চাল’ হিসেবে ব্যবহার করছে একটি রাজনৈতিক মহল। আর তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছেন বিদেশি রাষ্ট্রদূতরা। তবে তাদের এ অবস্থানের সঠিক জবাব দিয়েছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এমনটা মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।

সূত্র জানায়, ঢাকা ১৭ আসনের উপনির্বাচনের পর আক্রান্ত প্রার্থী হিরো আলমের ব্যাপারে কথা বলেছেন বিদেশিরা। অথচ এ প্রার্থীর যোগ্যতা এবং অবস্থান সব ক্ষেত্রে প্রশ্নবিদ্ধ। তবু তার ওপর হামলা হলে কথা তারা বলতেই পারেন। এমন সব স্পর্শকাতর বিষয়ে কথা বলা মানে তো দেশের আইন, শাসন ও বিচার নিয়ে কথা বলা। অবশ্য হিরো আলমকে নিয়ে বিবৃতিদাতা ১৩ জন রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে সরকার তাদের এই কাজে কূটনৈতিক শিষ্টাচার লঙ্ঘনের কথা জানিয়ে দিয়েছে। ২৬ জুলাই দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ১২ দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের ডেকে সরকারের অসন্তোষের কথা জানানো হয়। ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়ে এই রাষ্ট্রদূতরা বিবৃতি দিয়েছিলেন। জানা যায়, যেসব দূতাবাস হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল, তাদের আচরণকে কূটনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত উল্লেখ করে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিবৃতি দেওয়া দেশগুলো হলো : কানাডা, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, নেদারল্যান্ডস, নরওয়ে, স্পেন, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এরইমধ্যে ইতালি ছাড়া অন্য দেশগুলোর রাষ্ট্রদূত বা প্রতিনিধিরা ওইদিন উপস্থিত ছিলেন।

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম জানান, ওই রাষ্ট্রদূতদের সরকারকেও আমাদের অসন্তুষ্টির কথা জানানো হবে। তিনি জানান, এই বিবৃতির অনেক ভুল আছে এবং ভিয়েনা কনভেনশনের সঙ্গে এটি সাংঘর্ষিক।

তিনি বলেন, আমাদের অসন্তুষ্টি জানিয়ে দেওয়া হবে এবং ভবিষ্যতে তাদের দূতাবাসের কেউই যেন এ ধরনের কার্যকলাপে লিপ্ত না হয়, সে আহ্বান থাকবে। আমরা আশা করি, আমাদের এই প্রক্রিয়ার পরে রাষ্ট্রগুলো এই ধরনের কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকবে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী বলেছে এ সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমরা বলেছি যে এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা, যা দিয়ে সারা দিনের শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনকে মূল্যায়ন করা ঠিক হবে না। শুধু একটি কেন্দ্রের শেষ মুহূর্তের একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনাটিকে গুটিকয়েক কূটনীতিক যেভাবে উপস্থাপন করেছেন তা কখনোই সারা দিনের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনকে প্রতিফলিত করে না। দ্রুত একটি প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে তারা তাদের মূল্যায়নটির বস্তুনিষ্ঠতার প্রতি যথাযথ গুরুত্ব দেননি। ঘটনা সম্পর্কে জানার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশন এবং সরকার ত্বরিত ও আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছে। ১৯ জুলাই তারিখে কূটনীতিকদের বিবৃতি দেওয়ার অনেক আগেই কিন্তু দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ১৮ জুলাই তারিখে আপনারাও তা মিডিয়াতে প্রকাশ করেছিলেন। অথচ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার পরেও এই কূটনীতিকরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন, যা অযাচিত ও অপ্রয়োজনীয় বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, ওনাদের যৌথ বিবৃতিটি যে ঘটনাপ্রবাহের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণভাবে, যথাসময়ের অনেক আগেই তড়িঘড়ি করে অপরিণতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, আশা করি আমাদের আলোচনার পর তারা সেটি নিশ্চয়ই উপলব্ধি করবেন এবং ভবিষ্যতে এমন অকূটনৈতিক আচরণ থেকে বিরত থাকবেন। রাজনৈতিক টানাপড়েন হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, না মোটেই নয়। আপনারা জানেন যে, এখানে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন আছে, যুক্তরাজ্য আছে, ইউরোপের বেশ কিছু দেশ আছে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন কোয়ার্টার থেকে, বিভিন্ন জায়গা থেকে, বিভিন্ন ধরনের চেষ্টা বা অপচেষ্টা থাকে। তার ফলশ্রুতিতে এ রকম ঘটে থাকতে পারে, কারও অতি উৎসাহী ভাব থেকে এটি হতে পারে। জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধির ক্ষেত্রে যেটি হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি।

ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের ওপর হামলার ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলে মনে করছেন ক্ষমতাসীন ১৪ দলের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হওয়ার প্রাক্কালে বিকালে কারা, কোনো ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্যে হামলা করেছে তা খতিয়ে দেখা হবে। হিরো আলমকে ইস্যু করে একটা মহল ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এখানে আওয়ামী লীগেরও কেউ যদি যুক্ত থাকে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।