এসএসসি গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯

এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমছে

* মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন * বেশি ফেল ঢাকায়, সর্বোচ্চ পাস বরিশালে * পূর্ণ নম্বরের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে: শিক্ষামন্ত্রী

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  ফারুক আলম

সারা দেশে মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমান ফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে পরীক্ষার গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশ। এরমধ্যে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর মাদ্রাসা বোর্ডে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। গতকাল শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন। তবে এর আগে সকাল ৯টায় গণভবনে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি ১১টি শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হাতে পরীক্ষার ফলের অনুলিপি হস্তান্তর করা হয়।

পরীক্ষার ফলের তথ্য বলছে, এবার পরীক্ষায় মোট ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ছাত্রী ছিল ১০ লাখ ৩১ হাজার ৬৪৭ জন এবং ছাত্র ছিল ১০ লাখ ৯ হাজার ৮০৩ জন। মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ এবং ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন। অর্থাৎ, ৪৮ হাজার ৩৩২ জন ছাত্রী বেশি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে ফল প্রকাশ করা হয়। অনেক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা মোবাইলে এসএমএস দিয়ে ফল খুঁজে পান। কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়ে উল্লাস করে শিক্ষার্থীরা। ভালো ফল পেয়ে কেউ কেউ কান্নায় ভেঙে পড়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়েও আনন্দ-উল্লাস করে অনেক শিক্ষার্থীরা।

ফলাফলের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গতবারের চেয়ে এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। গতবার পাসের হার ছিল ৮৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ এবং মোট জিপিএ-৫ পেয়েছিল ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬০২ জন। সেখানে এবার মোট পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশে নেমে এসেছে। এছাড়াও মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন।

পাসের হার কম হওয়ার বিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বরের ওপর করা প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা হওয়ায় এবারের এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় পাসের হার ও জিপিএ-৫ কমেছে। গত বছর পূর্ণ নম্বরের ওপর পরীক্ষা হয়নি। অল্প কয়েকটি বিষয়ের ওপর পরীক্ষা হয়েছিল।

পরীক্ষার গড় পাসের হার ৮০ দশমিক ৩৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে- ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮ দশমিক ২৯ শতাংশ, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৯০ দশমিক ১৮ শতাংশ, ময়মনসিংহে ৮৫ দশমিক ৪৯ শতাংশ, রাজশাহীতে ৮৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ, যশোর বোর্ডে ৮৬ দশমিক ১৭ শতাংশ, কুমিল্লা বোর্ডে ৭৮ দশমিক ৪২ শতাংশ, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ, সিলেট বোর্ডে ৭৬ দশমিক ০৬ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে। রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলনে ফলের বিস্তারিত তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী।

সব ক্ষেত্রেই এগিয়ে মেয়েরা: এবার মোট ২০ লাখ ৪১ হাজার ৪৫০ জন পরীক্ষার্থীদের মধ্যে মোট পাস করেছে ১৬ লাখ ৪১ হাজার ১৪০ জন। এর মধ্যে ছাত্রী ৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৩৬ এবং ছাত্র ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৪০৪ জন। অর্থাৎ ছাত্রের তুলনায় ৪৮ হাজার ৩৩২ জন ছাত্রী বেশি পাস করেছে। আবার পাসের হার এবং ফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার দিকেও ছাত্রদের পেছনে ফেলেছে ছাত্রীরা। মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৭৮ জন। এর মধ্যে ছাত্রীর সংখ্যা ৯৮ হাজার ৬১৪, আর জিপিএ-৫ পাওয়া ছাত্রের সংখ্যা ৮৪ হাজার ৯৬৪। ছাত্রদের চেয়ে ১৩ হাজার ৬৫০ জন ছাত্রী জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে।

ঢাকা বোর্ডে ফেলের হার বেশি: ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ৪ লাখ ১৬ হাজার ৪২৬ জন। এরমধ্যে ফেল করেছে ৯৩ হাজার ৪৯৪ শিক্ষার্থী। রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ২ লাখ ৩ হাজার ৬২৫ জন। এরমধ্যে ফেল করেছে ২৪ হাজার ৬৬৭ জন, কুমিল্ল শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৮২ হাজার ৬২৫ জন। এরমধ্যে ফেল করেছে ৩৯ হাজার ৪১৯ জন শিক্ষার্থী। যশোর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৫৫ হাজার ৭৫৯, ফেল করেছে ২১ হাজার ৫৪৬ জন। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থী ছিল ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৮৩। এরমধ্যে ফেল করেছে ৩৩ হাজার ২৯৭ জন। ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ৮৭২ জন। এরমধ্যে ফেল করেছে ১৭ হাজার ৮২৫ জন। এছাড়া দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯৯ হাজার ৪৯১ ফেল করেছে ৪৬ হাজার ১৪২ জন। সিলেট শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৯ হাজার ৫৩২। ফেল করেছে ২৬ হাজার ২২৬ জন এবং বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে ৯০ হাজার ১৯৬ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ফেল করেছে ৮ হাজার ৮৫৭ জন।

সারা দেশে ৪৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাসের সংখ্যা শূন্য: এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডসহ ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ২৯ হাজার ৭৯৮ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীর ৩ হাজার ৮১০টি কেন্দ্রে পরীক্ষা নেওয়া হয়। মোট ২ হাজার ৩৫৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সব শিক্ষার্থী পাস করলেও ৪৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষার্থী পাস করতে পারেনি।

কারিগরি বোর্ডে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫: চলতি বছরে এসএসসি (ভোকেশনাল) পরীক্ষায় বাংলাদেশ কারিগরি বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল ১ লাখ ১৯ হাজার ৫৯৫ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১ লাখ ৫ হজার ৭৩০ জন। সে হিসাবে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। আর জিপিএ-৫ পেয়েছে মোট ১৮ হাজার ১৪৫ জন।

বিদেশের আটটি কেন্দ্রের এসএসসি ফল: প্রত্যেক বছরের মতো এবারো বিদেশের আটটি কেন্দ্রে ৩৭৫ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। এরমধ্যে ৩২০ শিক্ষার্থী পাস করেছে।