শান্তি সমাবেশে ওবায়দুল কাদের

বিএনপি রাস্তা বন্ধ করলে তাদের রাস্তাও বন্ধ করে দেওয়া হবে

সমাবেশ থেকে ৫ দফা ঘোষণা

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৩, ০০:০০ | প্রিন্ট সংস্করণ

  নিজস্ব প্রতিবেদক

বিএনপিকে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, অবস্থান কর্মসূচির নামে বিএনপি রাস্তা বন্ধ করলে, তাদের চলার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। বাংলাদেশের মানুষের জানমালের নিরাপত্তায় বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ, শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ অতন্ত্র প্রহরির মতো পাহারা দিবে।

গতকাল শুক্রবার বিকালে বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটে আওয়ামী লীগের তিন সংগঠনের শান্তি সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি।

ওবায়দুল কাদের বলেন, তারেক জিয়া লন্ডন থেকে ফরমায়েশ দিচ্ছে। এখানে ফখরুল-আমির খসরুরা লাফালাফি করছে। তাদের কথায় নাকি জাতিসংঘ নির্বাচন পরিচালনা করবে। যত লাফালাফি-তাফালিং করেন কোনো কাজ হবে না। ক্ষমতার ময়ূর সিংহাসন বহুদূর চলে গেছে। রাজনীতির খেলায় আনন্দলনে আওয়ামী লীগকে কেউ হারাতে পারেনি। আনন্দলনে আওয়ামী লীগ হচ্ছে চ্যাম্পিয়ান। আগুন নিয়ে আসবেন? তাই শপথ নিয়েছি, আগুন নিয়ে আসলে, সেই হাত পুড়িয়ে দিব, ভাঙচুর করতে আসলে হাত ভেঙে দিব। আমরা সঙ্ঘাত চাই না, আমরা শান্তির জন্য এই সমাবেশ করছি। তিনি বলেন, চোখ রাঙাবেন না। দেশি-বিদেশি যারা চোখ রাঙাচ্ছেন তাদের বলে দিতে চাই, আমাদের শিকড় এ দেশের মাটির অনেক গভীরে। কারো চোখ রাঙানির পরোয়া শেখ হাসিনা করে না। চোখ রাঙানির দিন শেষ হয়ে গেছে। চোখ রাঙিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবেন না।

ওবায়দুল কাদের বলেন, নেত্রী বলেছেন, বাবা, মা, ভাই সবাই চলে গেছেন, আমি চলে যাওয়ার আগে এই দেশের মানুষের জন্য বাবার স্বপ্ন পূরণ করে যাব, রক্ত দেব। সবাই প্রস্তুত থাকেন, মাথা গরম করবেন না। নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতা আমির খসরু বলেছে, গণভবন ছেড়ে দিতে হবে। গণভবন তোমার বাবার, জনগণ শেখ হাসিনাকে ভোট দিয়ে গণভবনে বসিয়েছে, জনগণ যত দিন চাইবে তত দিন শেখ হাসিনা গণভবনে থাকবেন। তারেক রহমান লন্ডন থেকে ভিডিও বার্তায় পুলিশকে ধমক দিচ্ছে, প্রসাশনকে ধমক দিচ্ছে, ফখরুলকে বলছে আনন্দলনে টাকার অভাব হবে না। তারেক রহমান এত টাকা পেলো কোথায়, কোটি-কোটি টাকা তারেক রহমান কিছুই করতে পারবেন না।

তিনি বলেন, এক দফা খাদে পড়ে গেছে। এই এক দফা কোনো দিন ক্ষমতার সাদ পূর্ণ করতে পারবে না। তোমার বাবা দম্ভ করে বলেছিল, মানি ইজ নো প্রবলেম। কোথায় গেলো তোমার বাবা। তুমি তো এবারও তাই বলছ। রঙিন চশমার ফাঁক দিয়ে দুনিয়া রঙিন দেখো। ফুলের ভিতরেও বিশধর সাপ থাকে, বাংলাদেশের কোটি কোটি টাকা লুট করে নিয়ে একেক সময় আমেরিকাসহ বিভিন্ন লবিস্ট নিয়োগ করে কংগ্রেসের কিছু লোকজন দিয়ে জাতিসংঘের এমবাসেডরের কাছে চিঠি পাঠায়। জাতিসংঘের আন্ডারে নির্বাচন করতে হবে। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়েছে।

তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরো বলেন, রাজনীতি করবেন না বলে মুচলেতা দিয়ে লন্ডনে পালিয়েছে, সেই তারেক রহমান এখন নেতা। তারেক জিয়া ‘চোর হে’, গালি গালি শোর হায়’। এই তারেককে ধরবে বাংলাদেশের মানুষ। যতই লন্ডনে থেকে আস্ফালন করছে ততই মানুষ থেকে দূরে যাচ্ছে তারেক রহমান। তারা আইন মানে না, এরা সুপ্রিমকোর্ট মানে না। কথায় কথায় তারেক রহমান সুপ্রিমকোর্টকে ধমক দেয়। মানুষ এই তারেক রহমানের বিচার চান, তার সারা জীবনের দন্ড হয়েছে। এত অহঙ্কার দম্ব ভালো না। টাকার দম্ব থাকে না।

তিনি বলেন, কারা কারা ঘন ঘন লন্ডন যান, টাকা তুলে দিচ্ছেন তারেকের হাতে, সেই খবর আমাদের কাছে আছে। নমিনেশনের জন্য টাকা নিয়ে যাচ্ছে, পরে সুবিধা নেয়ার জন্য টাকা দিচ্ছে এই বুঝি ক্ষমতায় এসে যাচ্ছে। যারা আমার মাতৃভূমির টাকা লুট করছে, গণতন্ত্রকে গিলে খাচ্ছে, আমার বঙ্গবন্ধুকে অপমান করছে তাদের হাতে আমার জন্মভূমির ক্ষমতা ছেড়ে দিতে পারি না।

নেতাকর্মীদের উদ্যেশ্যে কাদের বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে এসেছেন, সমাবেশ শেষে শান্তিপূর্ণভাবে চলে যাবেন। সঙ্ঘাত এভয়েট করতে হবে। শান্তি সমাবেশ থেকে ৫ দফা ঘোষণা করেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আফজালুর বাবু। ৫ দফায় রয়েছে, ছাত্র, তরুণ ও যুবসমাজকে সংগঠিত করে আগুন সন্ত্রাস রুখব। অপশক্তিদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাজপথে রুখে দাঁড়াব। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচনের দাবিতে রাজপথে সোচ্চার থাকব। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রা অব্যাহত রাখব। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে সর্বদা সোচ্চার থাকব।

শান্তি সমাবেশ অন্যান্য বক্তারা বলেন, বাংলাদেশে জঙ্গিদের উত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তারেক রহমান। পাকিস্তান রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করার জন্য সে ষড়যন্ত্র করেছিল। বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য সেখানের সন্ত্রাসীদের জন্য ১০ ট্রাক অস্ত্র পাচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছিল। আজ সে বিএনপির নেতৃত্ব দিচ্ছে। যারা স্বাধীনতা অর্জন লুণ্ঠন করতে চায় তাদের বিরুদ্ধে আজ আপনারা এখানে এসেছেন। বিএনপি সন্ত্রাস নৈরাজ্য আর আগুনসন্ত্রাস করে শত শত মানুষ হত্যা করেছিল, তারা আজ মাঠে নেমেছে। তাদের দাবি হলো, শেখ হাসিনার নাকি পদত্যাগ করতে হবে। দেশের ১৭ কোটি মানুষ শেখ হাসিনাকে শাসনভার দিয়েছে। পলাতক তারেকের ইশারায় তারা মামা বাড়ির আবদার নিয়ে এসেছে। নির্বাচন যত সন্নিকটে আসে বিএনপি-জামায়াত নির্বাচন বানচাল করার জন্য গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। তারা গণতান্ত্রিক পন্থা বাদ দিয়ে একটি ভুতুড়ে সরকার কায়েম করতে চায়। বিএনপির নেতারা গণতন্ত্রের কথা বলে কিন্তু তাদের জন্ম হয়েছিল সামরিক ছাউনিতে। জিয়ার পকেট থেকে বিএনপির জন্ম হয়েছিল। বিএনপির নেতা জিয়ার রহমান কারফিউ দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছিল। নেতারা আরও বলেন, আজকের শান্তি সমাবেশ একটা ‘ট্রেইলার’। আগামী দিনে আরো বড় জমায়েত হবে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লুটপাতের যুবরাজ হতে পারে, রাজপথের রাজা নয়। গণতন্ত্রবিরোধী যে অপশক্তি, আগামী দিনে যারা অনির্বাচিত সরকারের সঙ্গে হাত মেলানোর চিন্তা করছেন তাদের সেই ষড়যন্ত্রের কালো হাত আমরা ভেঙে দিব। এ সময় বক্তারা দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে বক্তারা বলেন, সামনেই শোকের আগস্ট মাস। আমাদের মনে রাখতে হবে- আগস্ট এলেই ওই পরাজিত শক্তি, ওই খুনিরা রক্ত পিপাসু হয়ে ওঠে। ওই খুনিদের থেকে সতর্ক থাকতে হবে। সমাবেশে সভাপতিত্ব করছেন আওয়ামী যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ এবং সঞ্চালনায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালি আসিফ ইনানের সঞ্চয়ালনায় শান্তি সমাবেশে আরো বক্তৃতা করেন আওয়ামী লীগের সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, কামরুল ইসলাম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, শাহজাহান খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, আ ফ ম বাহাউদ্দীন নাছিম, ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন প্রমুখ।