ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

মার্কিন পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে

এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে ইসি

* তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধান এলাউ করে না : বিদেশি পর্যবেক্ষক * ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে জাতীয় নির্বাচন : সিইসি
এ সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে ইসি

বর্তমান পরিস্থিতিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি অসাংবিধানিক ও বেআইনি। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশের সংবিধান এলাউ করে না। আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক দলের সদস্য হিসেবে আমি মনে করি, এই সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। গতকাল আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এ কথা বলেন যুক্তরাষ্ট্রের টেনেট ফাইন্যান্স ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা টেরি এল ইসলে। তিনি বলেন, আপনাদের সংবিধান তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলাউ করে না। এটি করতে হলে সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে। যদিও এটি ভালো আইডিয়া হয়ে থাকে, যদি তারা (ইসি) এটা করতেও চায়, তারা এটা করতে পারবে না। কারণ এটি করার কোন আইনি কাঠামো নেই। এই মুহূর্তে এটা করা সম্ভব নয়। আমি আমেরিকা সরকারের প্রতিনিধিত্ব করি না উল্লেখ করে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের দলের সদস্য হিসেবে আমরা মনে করি, এই সরকারের অধীনে কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারবে। আয়ারল্যান্ডের সিনিয়র সাংবাদিক নিক পউল বলেন, আমরা আশা করছি সংবিধান অনুযায়ী তারা (ইসি) অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে। ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের চেয়ারম্যান আবেদ আলী বলেন, আগামী নির্বাচনের প্রস্ততি ও সাম্প্রতিক সময়ের নির্বাচন সম্পর্কে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা জানতে চেয়েছে। আগামী নির্বাচনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা আসতে চাইছেন। এ বিষয়ে ইসির বিধি মালা জানতে চেয়েছেন। ইসি আশ্বস্ত করেছে পর্যবেক্ষকরা ভোটের আগে ও পরেও আসতে পারবে। কমিশন থেকে কোন বাধা নেই।

তিনি বলেন, প্রতিনিধিরা ঢাকা-১৭ আসনে হিরো আলমের উপরে হামলায় ইসি কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছেন। কমিশন এই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। যারা হামলা করেছে তাদের গ্রেপ্তার ও পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে কমিশন জানিয়েছে। তিনি আরো বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু অসাংবিধানিক, সেই বিষয়ে (প্রতিনিধি) উনাদের কোনো আগ্রহ নেই। উনারা বলেছেন, সংবিধানে যেটা আছে সেটার আলোকেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে। উনারা বলছেন, কমিশনের যেই আইন আছে, সেটার যেনো সঠিক প্রয়োগ হয়। রাজনৈতিক দলগুলো ও সরকার যেনো ইসিকে সাপোর্ট দেয় এই বিষয়গুলো নিশ্চিত করলে, এই কমিশনের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। এটা উনারা আশা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচন কমিশন সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, এটি একটি সৌজন্য সাক্ষাৎ। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদেশি পর্যবেক্ষকরা আসবেন কি না, আসতে হলে তাদের কি করণীয়, এই বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। মূলত আলোচনা হয়েছে যে, বর্তমান নির্বাচন কমিশন কীভাবে সুষ্ঠু, অবাধ নির্বাচন আয়োজন করবে, কীভাবে কাজ করবে, অতি সম্প্রতি একটি

সিটি করপোরেশন ও একটি সংসদের উপনির্বাচনে ছোটোখাটো যে সমস্যা দেখা দিয়েছিল, বিশেষ করে প্রার্থীদের আক্রমণ করা হয়েছিল, সে বিষয়ে সরকার এবং নির্বাচন কমিশন কী ব্যবস্থা নিয়েছে, এই বিষয়গুলো তারা জানতে চেয়েছিলেন। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে যদি আসতে চায় তাহলে স্বাগত জানানো হবে। তবে অবশ্যই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসতে হবে।

ডিসেম্বরের শেষে জাতীয় নির্বাচন : এদিকে ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ভোটের প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিুল আউয়াল। তিনি বলেন, ভোট ডিসেম্বরের লাস্ট উইকের আগে সম্ভব না। এটা তো আমাদের প্ল্যানে (রোডম্যাপে) বলে দেওয়া আছে।

ডিসেম্বরের লাস্ট উইক ভোট করা হতে পারে। কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, তফসিলের সঙ্গে ভোটের সম্পর্ক নেই। তফসিল আমি তিন মাস আগেও দিতে পারি, চার মাস আগেও দিতে পারি। নির্বাচনের দিন, নির্বাচনের দিন (ইম্পোর্টেন্ট)। তফসিলের এমন কোনো আইন নেই। নির্বাচনের ব্যাপারে আইন আছে কখন নির্বাচন হতে হয়, ৯০ দিনের মধ্যে। তফসিল কবে দিতে হয় এ ব্যাপারে কোনো কিছু বলা নেই। সিইসি জানান, তফসিল কবে হতে পারে সেটা কমিশন সভা করে সিদ্ধান্ত হবে। সেটা নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেও হতে পারে। সাধারণত ৫০ দিন, ৬০ দিন আগে তফসিল হয়। সাংবাবিধানিকভাবে ২০২৪ সালের ২৯ জানুয়ারির আগের ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে সাংবিধানিক সংস্থাটিকে। সেক্ষেত্রে ১ নভেম্বর শুরু হতে পারে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, প্রথা অনুযায়ী, ভোটের তারিখের ৪০ থেকে ৪৫ দিন সময় রেখে তফসিল ঘোষণা করে থাকে নির্বাচন কমিশন।

এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র জমা, বাছাই, প্রত্যাহারের সময় ও প্রতীক বরাদ্দের পর প্রচারণা মিলিয়ে এ সময় রাখা হয়। প্রচারণার জন্য সর্বোচ্চ তিন সপ্তাহ, মনোনয়নপত্র জমায় ১০ থেকে ১৫ দিন বাছাই চার দিন, প্রত্যাহারের সময় সাত দিন সময়ও দেওয়া হয়ে থাকে। নির্বাচন কমিশন বৈঠক করে সার্বিক বিষয় পযালোচনার পর তফসিল চূড়ান্ত করেন। অবশ্য, ১১টি সংসদ তফসিল ঘোষণার পর মনোনয়ন জমা থেকে ভোটের তারিখ পর্যন্ত সর্বনিম্ন ৪২ দিন এবং সর্বোচ্চ ৭৮ দিন রেখে তফসিলের নজরি রয়েছে।

বৈঠকে রাজি নয় বিএনপি, ইএমএফের বিদেশি পর্যবেক্ষকরা হতাশ : দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ইলেকশন মনিটরিং ফোরামের (ইএমএফ) আমন্ত্রণে বাংলাদেশ সফররত বিদেশি পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হয়নি বিএনপি। এ নিয়ে প্রতিনিধিদলটি হতাশা ব্যক্ত করেছে। গতকাল দুপুরে ইএমএফের আমন্ত্রণে পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদলটি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠক করতে যান। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি বৈঠকে বসতে রাজি না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। প্রতিনিধিদলের সদস্য যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসা পর্যবেক্ষক টেরি এল ইসলে বলেন, আমরা নির্বাচন পূর্বপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে এসেছি।

বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আমরা বৈঠক করছি। বিএনপির সঙ্গেও আমরা বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। নির্বাচন নিয়ে তাদের উদ্বেগ শুনতে চেয়েছিলাম। তবে তারা আমাদের সঙ্গে বসতে রাজি হয়নি। এ কারণে আমরা হতাশ। আমরা সরকার ও বিরোধীদল উভয়পক্ষেও সঙ্গেই বৈঠকে বসতে চেয়েছিলাম। এতে নির্বাচনকেন্দ্রিক বিষয়গুলো আরো পরিষ্কার হতো’- বলেন এ বিদেশি পর্যবেক্ষক।

এসময় আয়ারল্যান্ডের সিনিয়র সাংবাদিক নিক পউল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নির্বাচন কমিশন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছি। নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতি নেই। তাই সংবিধানের কাঠামোর মধ্যেই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন। ইএমএফের আমন্ত্রণে ছয় সদস্যের একটি বিদেশি নির্বাচন পর্যবেক্ষক প্রতিনিধিদল নির্বাচন পূর্বপরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত শুক্রবার (২৮ জুলাই) থেকে ঢাকা সফর শুরু করে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত