ঢাকা ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৮ আশ্বিন ১৪৩১ | বেটা ভার্সন

শোকাবহ আগস্ট

কৈশোরেই গড়ে উঠেছিল নেতৃত্বের গুণাবলি

কৈশোরেই গড়ে উঠেছিল নেতৃত্বের গুণাবলি

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মা সাহারা খাতুনের এক ব্যতিক্রমধর্মী সন্তান ছিলেন তিনি। চার বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধু ছিলেন তৃতীয়। অন্য ভাইবোন থেকে তার মধ্যে ছিল একটি ভিন্ন চারিত্রিক গুণাবলি। বাবা-মায়ের দেয়া নাম খোকা সন্তানটি শৈশব-কৈশর পেরিয়ে যৌবনে এসে মানুষের কল্যাণ সাধনের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। ছাত্রজীবনেই তার মধ্যে গড়ে উঠে নেতৃত্বের গুণাবলি। স্কুল, পাড়ায় বন্ধু ও খেলার মাঠে তিনি ছিলেন দলনেতা। চোখের সমস্যার কারণে ছোটবেলায় তার শিক্ষাজীবন বাধাগ্রস্ত হয়। শারীরিকভাবে দুর্বল থাকলেও দৃঢ় মানসিক শক্তি নিয়েই তিনি এগিয়ে যেতে থাকেন রাজনৈতিক অঙ্গনের দিকে। অত্যন্ত ডানপিঠে হওয়ার কারণে মারামারির ঘটনায় তাকে কৈশর বয়সে জেলে যেতে হয়েছিল। সেই কারাবরণই পরবর্তী সময়ে তার জীবনের সঙ্গী হয়ে ওঠে। কনিষ্ঠপুত্র শেখ রাসেলের কাছে কারাগার ছিল বঙ্গবন্ধুর বাড়ি। শিশু রাসেল ছোটবেলায় বুঝতে পারত না শেখ মুজিব তার পিতা। সে কারণেই হয়তো বলত হাসু আপা (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) ‘আমি তোমার বাবাকে বাবা বলে ডাকি।’ সংসারের অভিভাবক হয়েও বঙ্গবন্ধু সেই দায়িত্বটা পুরোপুরি পালন করতে পারেননি। তার স্থলে বটবৃক্ষের মতো ছায়া হয়ে দাঁড়ান বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। কেবল সংসারই নয়, নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে বঙ্গমাতা তাদের পাশে দাঁড়াতেন। অভাব-অনটন না থাকলেও বঙ্গবন্ধুর পরিবারে তেমন একটা সচ্ছলতা ছিল না। অতি সাধারণ খাবার খাইয়ে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন মহীয়ষী নারী বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। কারাগারই ছিল বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের ঠিকানা। অবশ্য এ নিয়ে বঙ্গমাতার কোনো আপসোস ছিল না। নিয়মিত কারাগারে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে যেতেন। নিজের হাতের রান্না করা খাবার খাইয়ে আসতেন। একজন নারীর এ ধরনের ত্যাগ আজ আমাদের সমাজে বিরল। তাই শেখ মুজিবের বঙ্গবন্ধু ও দেশের রাষ্ট্রপতি হওয়ার পেছনে যে মানুষটির অবদান ছিল সবচেয়ে বেশি, তিনিই আমাদের বঙ্গমাতা। বঙ্গমাতার কারণেই বঙ্গবন্ধু রাজনীতি করার ও দেশের নেতৃত্ব দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। টুঙ্গিপাড়ার খোকা কালপরিক্রমায় হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু ও জাতির পিতা। এটি সম্ভব হয়েছে তার ধারাবাহিক নেতৃত্বের কারণে। কালের পরিক্রমায় শেখ মুজিব বিশ্ব মানচিত্রে বাংলা ভূখণ্ডের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন, পরিণত হন এক মহান চিত্রকর। তবে একদিনেই তিনি বিশ্ব রাজনীতির আদর্শিক নেতা হয়ে ওঠেননি। চূড়ান্ত পর্যায়ে আসতে তাকে যথেষ্ট সময় দিতে হয়েছে। দিতে হয়েছে মেধার পরিচয়। ছোটবেলা থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলি, সাংগঠনিক দক্ষতা, দৃঢ় মনোভাব, ভীষণ ডানপিটে, সেসঙ্গে স্বদেশপ্রেমের প্রতিফলন ঘটেছিল তার মধ্যে। তার জীবনের সব গল্পের খণ্ড খণ্ড চিত্র ফুটে উঠেছে তার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ কিংবা ‘কারাগারের রোজনামচা’ গ্রন্থে। খুব ছোট থেকেই বাবা শেখ লুৎফর রহমানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর সম্পর্ক ছিল। অত্যন্ত মধুর। ভীষণ ভালোবাসতেন বাবাকে। পরিবারে অত্যন্ত আদুরে সন্তান ছিলেন তিনি। শিক্ষাজীবনের হাতেখড়ি বাবার কাছ থেকেই। তার কাছেই তিনি ঘুমাতেন। শৈশবে দুরন্তপনা ও দুষ্ট প্রকৃতির সঙ্গে খেলাধুলা ও গানের প্রতি তার অনুরাগ ছিল। সাংগঠনিক চেতনাকে ছড়িয়ে দিতে তিনি বিভিন্ন অঙ্গনে নেতৃত্ব দিতেন। দলের ছেলেদের কেউ কিছু বললে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। সেই মনোভাব থেকে বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি হয়ে উঠেন আপসহীন। স্বদেশি আন্দোলনের যুগে ফুফাতো ভাইয়ের মাদারীপুরের বাড়িতে থাকার সময় প্রতিদিন বিকালের জনসভায় যাওয়া একটা নিয়মিত অভ্যাসে পরিণত হয় বঙ্গবন্ধুর। তার মধ্যে গড়ে উঠে ইংরেজবিরোধী মনোভাব। স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনার প্রত্যয়ে তিনি রীতিমতো ভারতীয় জাতীয়তাবাদী নেতা সুভাষ বসুর অনুরক্ত হয়ে যান। মানুষের বিপদে পাশে দাঁড়ানো, সমাজের উন্নয়ন কিংবা সাংগঠনিক কাজে সবার আগে ছুটে যেতেন বঙ্গবন্ধু। বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা ও শ্রমমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর গোপালগঞ্জে আগমন উপলক্ষ্যে আয়োজিত জনসভা সফল করতে সবাইকে নিয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী গঠন করার দায়িত্ব পড়ে তার ওপর। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক চর্চা শুরু হয় মূলত কিশোর বয়সেই। সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বঙ্গবন্ধুর প্রথম জীবনের রাজনৈতিক শিক্ষক। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে সংবর্ধনা শেষে সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুর নাম ও ঠিকানা লিখে নেন। এরপর থেকেই তাদের মধ্যে নিয়মিত চিঠি, সাক্ষাৎ এবং ধীরে ধীরে তা গুরুশিষ্যের সম্পর্কে পরিণত হয়। বঙ্গবন্ধুর বাবাকে একজন বলেছিলেন- আপনার ছেলে যা আরম্ভ করেছে, তাতে তার জেল খাটতে হবে। তার জীবনটা নষ্ট হয়ে যাবে, তাকে এখনই বাধা দেন। বঙ্গবন্ধুর বাবা বলেছিলেন- ‘দেশের কাজ করছে, অন্যায় তো করছে না; যদি জেল খাটতে হয়, খাটবে; জেলে থাকলে জেলের ভাত, আর বাইরে থাকলে আমার ভাত খাবে। তাতে আমি দুঃখ পাব না। জীবনটা নষ্ট না-ও তো হতে পারে, আমি ওর কাজে বাধা দেব না।’ রাজনীতির মাঠ পেরিয়ে ছোট্ট মুজিব এভাবেই হয়ে ওঠেন বঙ্গবন্ধু, দেশনায়ক শেখ মুজিবুর রহমান। সর্বোপরি আমাদের জাতির পিতা ও স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি।

শোকের মাসের প্রথম প্রহরে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর অভিমুখে আলোর মিছিল ও মোমবাতি প্রজ্বলন করে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ। গত সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিটে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চু ও সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমানের নেতৃত্বে আলোর মিছিল বের করা হয়।

স্বেচ্ছাসেবক লীগের হাজারো নেতাকর্মী হাতে মোমবাতি নিয়ে জড়ো হন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত বাড়িটির সামনে। সেখানে বঙ্গবন্ধু প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান সংগঠনের নেতারা। পরে মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়।

এ সময় ঢাকা মহনগর দক্ষিণ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি কামরুল হাসান রিপন, সাধারণ সম্পাদক তারিক সাইদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে শোকের মাসের প্রথম প্রহরে সারাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব স্মরণে আলোক প্রজ্বলন করে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপিত সাদ্দাম হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান হলের বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর মোমবাতি প্রজ্বলন করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শীর্ষ নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত